images

ইসলাম

মুমিনের বিপদ-আপদ আল্লাহর ভালোবাসার প্রমাণ!

ধর্ম ডেস্ক

১৭ জুন ২০২২, ১২:১৩ পিএম

মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর অনেক পরীক্ষা নিয়েছেন। কোরআনের কোথাও বলা হয়নি যে, আল্লাহ তাআলা ফেরাউন কিংবা নমরুদের পরীক্ষা নিয়েছেন, বরং তাদেরকে গজবে ধ্বংস করেছেন। আল্লাহ বিপদ-মসিবত দিয়ে তাঁর পছন্দের বান্দাদের পরীক্ষা নিয়ে থাকেন। তাই বহু মুমিনের জীবনে দেখবেন দুঃখ-কষ্ট ও বিপদাপদ লেগেই থাকে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে রাসুল (স.) বলেন, মুমিনের জন্য দুনিয়া কারাগারসদৃশ ও কাফিরের জন্য জান্নাতসদৃশ। (মুসলিম: ২৯৫৬) 

রাসুল (স.) আরও বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা যখন তাঁর কোনো বান্দার মঙ্গল সাধনের ইচ্ছা করেন, তখন দুনিয়ায় তাকে তাড়াতাড়ি বিপদাপদের সম্মুখীন করেন। আর যখন তিনি কোনো বান্দার অকল্যাণের ইচ্ছা করেন, তখন তার গুনাহের শাস্তি প্রদান থেকে বিরত থাকেন। অবশেষে কেয়ামতের দিন তাকে এর পরিপূর্ণ শাস্তি প্রদান করেন। আর আল্লাহ তাআলা যখন কোনো সম্প্রদায়কে ভালোবাসেন, তখন তাদেরকে পরীক্ষায় ফেলেন। যে তাতে সন্তুষ্ট থাকে, তার জন্য (আল্লাহর) সন্তুষ্টি থাকে, আর যে তাতে অসন্তুষ্ট হয়, তার জন্য (আল্লাহর) অসন্তুষ্টি থাকে’। (তিরমিজি: ২৩৯৬; মেশকাত: ১৫৬৫)

আল্লাহর অনুগত ও পছন্দের বান্দারা বিপদ-মসিবতকে কল্যাণকর মনে করেন। কারণ তারা জানেন, এটি অনেক বড় প্রাপ্তি। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি নবী করিম (স.)-এর কাছে ছিলাম, তখন তিনি ভীষণ জ্বরে আক্রান্ত ছিলেন। আমি তার ওপর আমার হাত রাখলে তর গায়ের চাদরের ওপর থেকেই তার শরীরের প্রচণ্ড তাপ অনুভব করলাম। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কত তীব্র জ্বর আপনার। তিনি বলেন, আমাদের (নবী-রাসুলদের) অবস্থা এমনই হয়ে থাকে। আমাদের ওপর দ্বিগুণ বিপদ আসে এবং দ্বিগুণ পুরস্কারও দেওয়া হবে। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! কার ওপর সর্বাধিক কঠিন বিপদ আসে? তিনি বলেন, নবীদের ওপর। আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! তারপর কার ওপর? তিনি বলেন, তারপর নেককার বান্দাদের ওপর। তাদের কেউ এতটা দারিদ্র্যপীড়িত হয় যে, শেষ পর্যন্ত তার কাছে তার পরিধানের কম্বল ছাড়া আর কিছুই থাকে না। তাদের কেউ বিপদে এত শান্ত ও উৎফুল্ল থাকে, যেমন তোমাদের কেউ ধন-সম্পদ প্রাপ্তিতে আনন্দিত হয়ে থাকে। (ইবনে মাজাহ: ৪০২৪)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো ব্যক্তির জন্য বিনাশ্রমে আল্লাহর পক্ষ থেকে মর্যাদার আসন নির্ধারিত হলে আল্লাহ তার শরীর, সম্পদ অথবা সন্তানকে বিপদগ্রস্ত করেন। অতঃপর সে তাতে ধৈর্যধারণ করলে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত উক্ত মর্যাদার স্তরে উপনীত হয়। (আবু দাউদ: ৩০৯০)

আবার, সত্য-মিথ্যাকে স্পষ্ট করার জন্যও আল্লাহ তাআলা বিপদ আপদ দিয়ে থাকেন। কে মুনাফেক, কে অধৈর্য তার প্রমাণ বের হয়ে আসে বিপদ-আপদ থেকে। মুনাফেক ও দুর্বল ঈমানদারেরা অনেক সময় সুখ–স্বাচ্ছন্দের সময় আল্লাহকে মনে রাখে, তাঁর প্রতি অনুগত ও সন্তুষ্ট থাকে। কিন্তু, যখন কোনো বিপদ-আপদ আসে তখন আল্লাহকে ভুলে যায়, কুফুরি করে বা তাঁর প্রতি অসন্তুষ্ট হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ কি মনে করে যে ‘আমরা ঈমান এনেছি- এ কথা বলেই অব্যহতি পেয়ে যাবে, আর তাদেরকে পরীক্ষা করা হবে না? আমি অবশ্যই তাদের পূর্বে যারা ছিল তাদেরকে পরীক্ষা করেছি। আর আল্লাহ অবশ্যই জেনে নেবেন কারা সত্যবাদী আর কারা মিথ্যাবাদী।’ (সুরা আনকাবুত: ২-৩)

এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে বলেন, ‘মানুষের মধ্যে কেউ দ্বিধা-দ্বন্দ্বে জড়িত হয়ে আল্লাহর ইবাদত করে। যদি সে কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তাহলে ইবাদতের উপর কায়েম থাকে। আর যদি কোনো পরীক্ষায় পড়ে, তখন সে পূর্বাবস্থায় (কুফুরিতে) ফিরে যায়। সে ইহকাল ও পরকালে ক্ষতিগ্রস্ত, এটাই সুস্পষ্ট ক্ষতি। (সুরা হজ: ১১)

মানুষকে সতর্ক করার জন্যও তিনি বিপদ-আপদ দেন। যাতে করে বান্দা আল্লাহর দিকে ফিরে আসে এবং পরকালের কঠিন শাস্তি থেকে বাঁচার চেষ্টা করে। অনেক সময় মানুষ আল্লাহর প্রতি ঈমান এনেও ঈমানি দুর্বলতার কারণে বা পার্থিব জীবনের লোভ-লালসার কারণে আল্লাহর অবাধ্য হয়। আল্লাহ তখন বিপদ-আপদ দিয়ে তাকে অসহায় করে দেন, যাতে করে সে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে আর পরকালের কথা স্মরণ করে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমাদেরকে যেসব বিপদাপদ স্পর্শ করে, সেগুলি তোমাদের কৃতকর্মের ফল। তবে অনেক পাপ আল্লাহ ক্ষমা করে থাকেন।’ (সুরা শুরা: ৩০)

গজব নাজিলের আগেও আল্লাহ তাআলা ছোট ছোট আজাব পাঠিয়ে বান্দাকে হুঁশিয়ার করেন। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘গুরু দণ্ডের পূর্বে অবশ্যই আমরা তাদেরকে লঘুদণ্ডের আস্বাদন ভোগ করাব, যাতে তারা ফিরে আসে।’ (সাজদাহ: ২১) 

কিন্তু মুমিনদের বিষয়টি আলাদা। বিপদ-আপদের মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর পছন্দের বান্দার গুনাহ মাফ করে দেন। আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলমান ব্যক্তির ওপর যে সকল বিপদ-আপদ আপতিত হয় এর দ্বারা আল্লাহ তার পাপ মোচন করে দেন। এমনকি যে কাঁটা তার শরীরে বিদ্ধ হয় এর দ্বারাও।’ (সহিহ বুখারি: ৫৪৪ খণ্ড-৭, অধ্যায়-৭০)

তাই বিপদে মুমিনের করণীয় হলো, সবর করা এবং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সুসংবাদ দাও সেসব ধৈর্যশীলদের যারা বিপদ এলে বলে, আমরা তো আল্লাহরই এবং তাঁরই কাছে আমরা ফিরে যাব।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫-১৫৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মুমিন পুরুষ বা নারীর জীবন, সন্তান ও মালের ওপর বিপদাপদ আসতেই থাকে। অবশেষে আল্লাহর সাথে সে সাক্ষাৎ করে এমন অবস্থায় যে, তার (আমলনামায়) কোনো পাপ থাকে না।’ (তিরমিজি: মালেক, মেশকাত: ১৫৬৭)

বিপদে পতিত ব্যক্তির দোয়া
إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، اللَّهُمَّ أْجُرْنِي فِي مُصِيبَتِي، وَأَخْلِفْ لِي خَيْرَاً مِنْهَا ‘ইন্না লিল্লা-হি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজি‘উন। আল্লা-হুম্মা আজুরনী ফী মুসীবাতী ওয়াখলুফ লী খাইরাম মিনহা।’ অর্থ: অর্থ: আমরা তো আল্লাহরই। আর নিশ্চয় আমরা তাঁর দিকেই প্রত্যাবর্তনকারী। হে আল্লাহ! আমাকে আমার বিপদে সওয়াব দিন এবং আমার জন্য তার চেয়েও উত্তম কিছু স্থলাভিষিক্ত করে দিন। (মুসলিম: ২/৬৩২, হাদিস: ৯১৮)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বিপদ-মসিবতে ধৈর্যসহকারে মহান প্রভুর ওপর তাওয়াক্কুল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।