images

ইসলাম

কোরবানি ওয়াজিব হওয়ার শর্তগুলো কী?

ধর্ম ডেস্ক

১৬ জুন ২০২২, ১০:২৪ এএম

কোরবানি ইসলামি শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। সামর্থ্য থাকার পরও যে কোরবানি করে না, হাদিসে তার নিন্দা করা হয়েছে। নবীজি বলেছেন, ‘..সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে’ (মুস্তাদরাকে হাকেম: ৩৫১৯; আত-তারগিব ওয়াত-তারহিব: ২/১৫৫)। কয়েকটি শর্তসাপেক্ষে বান্দার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়। নিচে তা উল্লেখ করা হলো।

শর্তসমূহ

১) মুসলিম হওয়া। ২) প্রাপ্তবয়ষ্ক হওয়া। ৩) সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া। পাগল সম্পদের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে না। ৪) স্বাধীন ব্যক্তি হওয়া। দাসের ওপর কোরবানি আবশ্যক না। ৫) মুকিম হওয়া অর্থাৎ কোনো স্থানে ১৫ দিনের বেশি সময়ের জন্য স্থায়ী হওয়া। মুসাফিরের ওপর কোরবানি আবশ্যক নয়। ৬) জাকাত ফরজ হয় এই পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া।

কোরবানির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ এক বছর অতিক্রম হওয়া শর্ত নয়, বরং ১০ জিলহজ ফজরের পর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত সময়ে নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তাকে কোরবানি দিতে হবে। জিলহজের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ এই তিন দিন কোরবানি করা যায়। তবে সম্ভব হলে ১০ তারিখেই কোরবানি করা উত্তম। 

কোরবানির নেসাব
সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে ৫২ ভরি রুপা অথবা প্রয়োজনের অতিরিক্ত সব সম্পদ মিলে সাড়ে বায়ান্ন ভরি রুপার সমমূল্যের হয়, তখন কোরবানি ওয়াজিব। 

সরাসরি স্বর্ণ বা রুপা থাকা শর্ত নয়, বরং টাকা-পয়সা, সোনা-রূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজন আসে না এমন জমি, প্রয়োজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সকল আসবাবপত্র কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য।

সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ মাসয়ালা
সোনা-রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলোর কোনো একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে, কিন্তু প্রয়োজনের অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায়, তাহলেও তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব।

নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিকের ওপর শুধুমাত্র একটি কোরবানি ওয়াজিব হয়। অনেক সম্পদের মালিক হলেও একটি কোরবানিতেই ওয়াজিব আদায় হবে। অবশ্য একাধিক পশু কোরবানি করলে বেশি সওয়াব পাওয়া যাবে। 

কোরবানি শুধুমাত্র নিজের ওপর ওয়াজিব হয়। তাই সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি দেওয়া পিতার ওপর ওয়াজিব নয়। অবশ্য নাবালিগ বা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক নয় এমন সন্তানের পক্ষ থেকে কোরবানি করলে সওয়াবের অধিকারী হবেন।  

কোনো নারী নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে তার ওপরও কোরবানি ওয়াজিব হবে। একান্নভুক্ত পরিবারের মধ্যে একাধিক ব্যক্তির কাছে নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে তাদের প্রত্যেকের ওপর ভিন্ন ভিন্ন কোরবানি ওয়াজিব। 

যার ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয় এমন দরিদ্র ব্যক্তি কোরবানি করলে তার কোরবানি শুদ্ধ হবে এবং অনেক সওয়াব লাভ করবে। এমন দরিদ্র লোক কোরবানির উদ্দেশ্যে পশু ক্রয় করলে তার ওপর কোরবানি ওয়াজিব হয়ে যায়।  

যে সকল হাজি কোরবানির সময় মক্কা, মিনা ও মুজদালেফা মিলে ১৫ দিন থাকবে তারা মুকিম। নেসাবের মালিক হলে হজের কোরবানি ছাড়াও তাদের ওপর ঈদুল আজহার কোরবানি ওয়াজিব। আর যারা মুসাফির, তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়। 

(তথ্যসূত্র: দুররুল মুখতার, পৃষ্ঠা-২১৯, খণ্ড-৫; আলমুহিতুল বুরহানি, খণ্ড-৮, পৃষ্ঠা-৪৫৫; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া, খন্ড-১৭, পৃষ্ঠা-৪০৫; কিফায়াতুল মুফতি: ৮/১৭৮; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৩; বাদায়েউস সানায়ে ৪/১৯৮, ২৩; ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/২৯৫)