images

ইসলাম

কোরবানির ফজিলত কী

ধর্ম ডেস্ক

০২ মে ২০২৫, ০৮:৪৯ পিএম

কোরবানি ইসলামের অন্যতম শিয়ার বা নিদর্শন। এটি ওয়াজিব বিধান। কোরবানি শব্দটি ‘কুরবুন’ মূলধাতু থেকে নির্গত। অর্থ নৈকট্য লাভ করা, প্রিয় বস্তুকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। শরিয়তের পরিভাষায়, নির্দিষ্ট পশুকে একমাত্র আল্লাহর নৈকট্য ও সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে নির্দিষ্ট সময়ে নির্ধারিত নিয়মে মহান আল্লাহর নামে জবাই করাই হলো কোরবানি।

পবিত্র কোরআনের একাধিক স্থানে কোরবানি প্রসঙ্গ এসেছে। কোরবানি করার সরাসরি নির্দেশ দিয়ে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘সুতরাং আপনার রবের উদ্দেশে নামাজ পড়ুন এবং কোরবানি করুন।’ (সুরা কাউসার: ২) হজরত ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) মদিনায় ১০ বছর অবস্থান করছিলেন, প্রতিবছর তিনি কোরবানি করেছেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩১২৭)

কোরবানি সাধারণ কোনো আমল নয়। এটি মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের বিশেষ আমল; মহান আল্লাহর সর্বাধিক প্রিয় আমল। হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, কোরবানির ঈদের দিন মানুষের সব নেক আমলের মধ্যে সর্বাধিক প্রিয় আমল হলো কোরবানি করা। কেয়ামতের ময়দানে জবেহকৃত জন্তু তার শিং, লোম, খুরসহ এসে হাজির হবে। নিশ্চয়ই কোরবানির রক্ত জমিনে পড়ার আগেই আল্লাহর কাছে তা কবুল হয়ে যায়। অতএব, তোমরা খুশি মনে আনন্দচিত্তে কোরবানি করো। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩১২৬)

আরও পড়ুন: জিলহজের প্রথম দশকের আমল ও ফজিলত

কোরবানির উদ্দেশ্য হতে হবে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন। হজরত ইবরাহিম (আ.) নিজের প্রিয়পুত্রকে কোরবানি করতে উদ্যত হয়েছিলেন শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। ফলস্বরূপ ইবরাহিম (আ.) আল্লাহর পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলেন এবং প্রিয় সন্তানকেও ফেরত পেলেন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা পিতা পুত্র উভয়ে যখন আল্লাহর হুকুমের আনুগত্য করার জন্য নিজেদের সোপর্দ করল, আর ইবরাহিম স্বীয় পুত্রকে জবাই করার জন্য উপুড় করে শোয়ালো, তখন আমি তাকে ডাক দিয়ে বললাম, হে ইবরাহিম! তোমার স্বপ্নকে তুমি বাস্তবে পরিণত করেছ। এটা ছিল এক মহাপরীক্ষা। এই পরীক্ষায় তুমি উত্তীর্ণ হয়েছ। আল্লাহ বলেন ‘আমি তার পুত্রের বদলে একটি মর্যাদাবান দুম্বা জান্নাত থেকে পাঠিয়ে দিলাম।’ (সুরা সাফফাত: ১০৩-১০৭)

আল্লাহর সন্তুষ্টি যাদের কামনা-বাসনা, তাদের জন্য আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। দুনিয়ার সবাই শত্রু হয়ে গেলেও তার ক্ষতি হয় না। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি- ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টি আকাঙ্ক্ষা করে তা মানুষের অসন্তুষ্টির কারণ হলেও, মানুষের দুঃখ-কষ্ট থেকে বাঁচানোর জন্য আল্লাহ তাআলাই তার জন্য যথেষ্ট হয়ে যান।’ (তিরমিজি: ২৪১৪)

কোরবানি করলে গুনাহও মাফ হয়ে যায়। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ফাতিমা (রা.)-কে বলেন, তুমি তোমার কোরবানির জন্তু জবেহর স্থানে উপস্থিত থাকো। কোরবানির পশুর রক্ত মাটিতে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে তোমার অতীতের সব গুনাহ আল্লাহ ক্ষমা করবেন। ফাতিমা (রা.) বলেন, হে আল্লাহর রাসুল! এই গুনাহ ক্ষমা হওয়ার বিষয়টি আমাদের জন্য খাস, নাকি সব মুসলমানের জন্য? নবীজি বললেন, আমাদের ও সব মুসলমানের গুনাহ ক্ষমা করা হবে। (মুস্তাদরাক হাকিম: ৭৬৩৩)

আরও পড়ুন: কোরবানি করবেন? ১০টি জরুরি বিষয় জেনে রাখুন

এছাড়াও কোরবানি জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে কাজ করবে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হাসান (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি খুশি মনে সওয়াবের আশায় কোরবানি করবে, ওই কোরবানির জবেহকৃত পশু কোরবানিদাতার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হবে।’ (আল মুজামুল কাবির: ২৬৭০)

কোরবানি এমন ইবাদত, যার পশমে পশমে নেকি। হজরত জায়েদ ইবনে আরকাম (রা.) বলেন, আমরা রাসুল (স.)-কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসুল! কোরবানি কী? রাসুল (স.) বলেন, এটি তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-এর সুন্নত। অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল! এতে আমাদের জন্য কী প্রতিদান আছে? জবাবে তিনি বলেন, প্রতিটি চুলের বিনিময়ে একটি করে নেকি দেওয়া হবে। অতঃপর সাহাবায়ে কিরাম আরজ করেন, হে আল্লাহর রাসুল! পশমের বিনিময়েও কি এ পরিমাণ সওয়াব আছে? রাসুল (স.) জবাব দিলেন, হ্যাঁ, প্রতিটি পশমের বিনিময়েও একটি করে নেকি দেওয়া হবে। (সুনানে ইবনে মাজাহ: ৩২৪৭)  

সামর্থ্য থাকার পরও কোরবানি না করা মানুষগুলো নবীজির খুবই অপছন্দের। মহানবী (স.) এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে হাদিসে বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও কোরবানি করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের কাছেও না আসে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২/৩২১)