ধর্ম ডেস্ক
১৮ এপ্রিল ২০২৫, ০৮:৩৬ পিএম
জাকাত ফরজ ইবাদত এবং ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। পবিত্র কোরআনে নামাজের পরই সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে জাকাতকে। মুমিনদের পরিচয় সম্পর্কে বলা হয়েছে- ‘তারা এমন লোক- যাদেরকে আমি পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠা দান করি, তারা নামাজ কায়েম করে, জাকাত প্রদান করে, সৎকাজের আদেশ করে ও মন্দকাজে বাধা প্রদান করে।’ (সুরা হজ: ৪১)
সুস্থমস্তিষ্ক, আজাদ, বালেগ মুসলমান নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলে জাকাত আদায় করা তার ওপর ফরজ হয়ে যায়। (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৫৯ বাদায়েউস সানায়ে: ২/৭৯,৮২)
ফকির, মিসকিন, জাকাতের কাজে নিযুক্ত ব্যক্তি, ঋণগ্রস্ত, মুসাফিরসহ পবিত্র কোরআনের নির্ধারিত ৮টি খাতে জাকাত দিতে হয়। নিসাব পরিমাণ সম্পদ থেকে ৪০ ভাগের ১ ভাগ বা ২.৫ শতাংশ জাকাত দেওয়া জরুরি।
জাকাত দেওয়ার জন্য সংরক্ষিত টাকা চুরি হয়ে গেলে জাকাত আদায় হবে না বা মাফ হয়ে যাবে না। কেননা জাকাত দেওয়ার নিয়তে কোনো বস্তু বা টাকা নিজের কাছে পৃথক করে রাখলে তা নিজের মালিকানাতেই থেকে যায়। তাই কোনো কারণে তা খোয়া গেলে নিজের সম্পদ খোয়া গেছে বলেই ধর্তব্য হবে।
আর জাকাত আদায় হওয়ার জন্য জাকাতের উপযুক্ত ব্যক্তি বা তার প্রতিনিধির হাতে তা পৌঁছে দেওয়া আবশ্যক। এর আগে জাকাত আদায় হয় না। অতএব জাকাতের জন্য রাখা টাকা চুরি হয়ে গেলে আপনাকে এ জাকাত আদায় করতে হবে। (খুলাসাতুল ফতোয়া: ১/২৩৮; আজজিয়াউল মানাবি: ৩/৪৭; আলবাহরুর রায়েক: ২/২১১; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৬৯)
আরও পড়ুন: যেসব সম্পদের জাকাত দেওয়া ফরজ
জাকাত আদায়ের ফজিলত
জাকাত আদায়কারীর জন্য মহাপুরস্কার ঘোষণা করে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘আর যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদেরকে মহাপুরস্কার দিব।’ (সুরা নিসা: ১৬২) অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এ রহমত (পরিপূর্ণভাবে) সেইসব লোকের জন্য লিখব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, জাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)
জাকাত প্রদান ঈমানের পূর্ণতার প্রমাণ। যেমনটি রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমার ইসলামের (ঈমান) পরিপূর্ণতা হলো তুমি তোমার সম্পদের জাকাত দাও।’ (আত-তারগিব ওআত-তারহিব, খণ্ড-১, পৃষ্ঠা-৩০১, হাদিস : ১২)
আরও পড়ুন: কিছু স্বর্ণ কিছু রুপা থাকলে কোন হিসাবে জাকাত দেবেন?
জাকাত না দেওয়ার শাস্তি
কোরআন ও হাদিসে জাকাত আদায় না করার কঠিন শাস্তির কথা এসেছে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘এবং যারা সোনা ও রুপা জমা করে রাখে, তা আল্লাহর পথে খরচ করে না, আপনি তাদের বেদনাদায়ক আজাবের সুসংবাদ দিন। যেদিন জাহান্নামের আগুনে তা উত্তপ্ত করা হবে, অতঃপর তা দিয়ে তাদের কপালে, পার্শ্বদেশে ও পিঠে সেঁক দেওয়া হবে, (বলা হবে) এটা তা-ই যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রাখতে, অতএব তোমরা যা জমা করেছিলে তার স্বাদ উপভোগ করো। ’ (সুরা তাওবা: ৩৪-৩৫)
অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহর অনুগ্রহে প্রদত্ত সম্পদ নিয়ে যারা কৃপণতা করে তারা যেন এটাকে কিছুতেই কল্যাণকর মনে না করে, তারা যা নিয়ে কৃপণতা করে কেয়ামতের দিন তাই তাদের গলায় বেড়ি হবে, আসমান ও জমিনের স্বত্বাধিকার একমাত্র আল্লাহর, তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তা বিশেষভাবে অবহিত।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৮০)
রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ যাকে সম্পদ দিয়েছেন, কিন্তু সে এর জাকাত আদায় করেনি, কেয়ামতের দিন তার সম্পদকে টাক (বিষের তীব্রতার কারণে) মাথাবিশিষ্ট বিষধর সাপের আকৃতি দিয়ে তার গলায় ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। সাপটি তার মুখের দুই পাশ কামড়ে ধরে বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার জমাকৃত সম্পদ।’ অতঃপর রাসুল (স.) ওপরে উল্লিখিত সুরা আলে ইমরানের আয়াতটি পাঠ করেন। (বুখারি: ১৪০৩)