images

ইসলাম

বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক ব্রেকআপ করিয়ে দিলে সওয়াব হবে?

ধর্ম ডেস্ক

১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৯:৪৬ পিএম

ইসলামে নারী-পুরুষের বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক নাজায়েজ। এমনকি জেনা করার উদ্দেশ্য না থাকলেও জায়েজ নেই। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তোমরা জেনা তথা ব্যভিচারের কাছেও যেও না। নিশ্চয়ই এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ। (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩২)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)। (সহিহ বুখারি: ৬২৪৩) অন্য বর্ণনামতে, দুই চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের ব্যভিচার যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের ব্যভিচার আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের ব্যভিচার (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের ব্যভিচার হলো জিনার উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত: ৮৬)

আরও পড়ুন: মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া জায়েজ?

তাই ইসলামি দিক-নির্দেশনা হলো—নারী-পুরুষ উভয়ে অযথা কথাবার্তা, দেখা-সাক্ষাৎ, অবৈধ সংস্পর্শ, হাসাহাসি, রসিকতা থেকে বেঁচে থাকবে; নিজেদের দ্বীন ও আত্মসম্মান রক্ষা করবে। সৎসপথে থাকতে মানুষকে সহযোগিতা করাও সওয়াবের কাজ। তাই অনেকের মধ্যে জানার কৌতূহল রয়েছে যে, অনৈতিক প্রেম-ভালোবাসা ব্রেকআপ করিয়ে দিলে সওয়াব হবে কি না অথবা সওয়াবের নিয়তে কারো বিয়েবহির্ভূত প্রেম যেকোনোভাবে থামিয়ে দেওয়া জায়েজ কি না।

এর উত্তরে আলেমরা বলেন, এক্ষেত্রে সওয়াবের আশায় কেবল দুইটা কাজই করার আছে। হয় বিয়ে করিয়ে দেওয়া, না হয় ব্রেকআপ করিয়ে দেওয়া। এ দুটি কাজ সওয়াবের নিয়তে করলে অবশ্যই সওয়াব পাওয়া যাবে। এ ছাড়া অন্যকিছুতে সওয়াব নেই, বরং গুনাহের আশংকা রয়েছে। যেমন- বিয়েবহির্ভূত প্রেম টিকিয়ে রাখতে যদি সহযোগিতা করেন এবং আপনার এই সহায়তার কারণে ওরা গুনাহের কাজে লিপ্ত হয়, তাতে আপনারও গুনাহ হবে। আর তাদের মধ্যে যেন বিয়ে না হয় সেই চেষ্টা করেন, তাতেও একই কারণে গুনাহ হবে।

আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা সৎকাজ ও আল্লাহভীতিতে পরস্পরকে সহযোগিতা করো। পাপকাজ ও সীমালঙ্ঘনে একে অন্যের সহযোগিতা করো না।’ (সুরা মায়েদা: ২)

আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পর্ক থাকাবস্থায় ইবাদত কবুল হবে?

আমাদের সমাজে বিয়েকে কঠিন রীতি-রেওয়াজের মধ্যে আবদ্ধ করে ফেলার কারণে যুবক-যুবতীরা বিয়েকে চাপ মনে করে। ফলে যা হবার তা-ই হয়। এক্ষেত্রে অভিভাবকদের দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। ভালো পাত্র থেকে বিয়ের প্রস্তাব এলে তাতে সম্মত হয়ে সহজে বিয়ের ব্যবস্থা করা উচিত। এটি না করলে হাদিসমতে ভালো কিছু হবে না। মহানবী (স.) বলেছেন, ‘তোমরা যে ব্যক্তির দ্বিনদারি ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সঙ্গে বিয়ে দাও। তা যদি না করো তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে।’ (জামে তিরমিজি: ১০৮৪)

আরও একাধিক হাদিসে সন্তান উপযুক্ত হলেই দ্রুত বিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। এতে সন্তানের চরিত্র হেফাজতে থাকবে, দ্বীনদারীও সহজ হবে, একইভাবে অভিভাবকও দায়িত্বমুক্ত হবে। প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘যার সন্তান রয়েছে সে যেন তার সুন্দর নাম রাখে এবং তাকে উত্তম চরিত্র শেখায়। যখন সে বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হবে, তখন তার বিয়ে দেয়। বালেগ (প্রাপ্তবয়স্ক) হওয়ার পরও যদি বিয়ে না দেয় আর সে কোনো গুনাহ করে ফেলে, তাহলে তার এই গুনাহ তার পিতার ওপর বর্তাবে। (শুয়াবুল ঈমান: ৮৬৬৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হারাম রিলেশন থেকে হেফাজত করুন। হারাম রিলেশনে কেউ জড়িত হলে, তাকে দ্রুত বিয়ে করানো বা গুনাহের কাজ থেকে ফেরানোর তাওফিক দান করুন। সবাইকে পবিত্র জীবন-যাপনের তাওফিক দান করুন। আমিন।