images

ইসলাম

জুমার দিন এই দোয়াগুলো পড়তে পারেন

ধর্ম ডেস্ক

১১ এপ্রিল ২০২৫, ১২:৫২ পিএম

জুমার দিনের একটি বিশেষত্ব হলো- এই দিনে এমন একটি সময় রয়েছে, যখন আল্লাহর কাছে কোনোকিছু চাইলে তা কবুল করা হয়। এক হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন- فِيهِ سَاعَةٌ لا يُوَافِقُهَا عَبْدٌ مُسْلِمٌ وَهُوَ يُصَلِّى يَسْأَلُ اللهَ شَيْئًا إِلا أَعْطَاهُ إِيَّاهُ ‘জুমার দিন এমন একটি মুহূর্ত রয়েছে, কোনো মুসলিম বান্দা যদি এ সময় নামাজে দাঁড়িয়ে আল্লাহর কাছে কিছু চায়, তাহলে তিনি তাকে অবশ্যই তা দান করেন। (সহিহ বুখারি: ৯৩৫)

তাই জুমার দিন বেশি বেশি দোয়া করা উচিত। বিশেষত দুই মুহূর্তে। আলেমরা বিভিন্ন হাদিসের নির্যাস থেকে জুমার দিনের দোয়া কবুলের মুহূর্তটি দুই সময়েই রয়েছে বলে মত দিয়েছেন। ১. জুমার খুতবা শুরু হওয়ার পর থেকে জুমার নামাজ শেষ হওয়া পর্যন্ত এবং ২. আছরের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়। যদিও অধিকাংশ আলেম আছরের পরের সময়টিকে দোয়া কবুলের সময় বলে মত দিয়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.), আবু হুরায়রা (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.), কাব আহবার (রহ), সাঈদ ইবনে জুবায়ের (রহ)., মুজাহিদ (রহ) ও তাউস (রহ) প্রমুখ এই মত গ্রহণ করেছেন। (দ্রষ্টব্য: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা:৫৫০৩-৫৫০৫, ৫৫১৪; আততামহিদ: ১৯/২০, ২৩-২৪; আল-ইস্তিজকার: ৫/৮২, ৮৬, ৯৭)

আরও পড়ুন: জুমার দিন আছরের পরের আমল

আর খতিব সাহেব খুতবা দেওয়ার জন্য মিম্বরে উঠার পর থেকে নামাজ শেষ করা পর্যন্ত—এই সময়টিকে জুমাবারের দোয়া কবুলের সময় বলে মত দিয়েছেন, আবু মুসা আশআরি (রা.), আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.), আবু বুরদা (রহ) প্রমুখ এই মতের প্রবক্তা। (দ্রষ্টব্য: মুসান্নাফ ইবনে আবি শায়বা: ৫৫০৬, ৫৫০৭; আততামহিদ, ইবনে আবদুল বার: ১৯/২২) যাই হোক, এ দুই সময় মুমিনদের দোয়ায় নিমগ্ন থাকা উচিত। কোরআন হাদিসে বর্ণিত যেকোনো দোয়া জুমার দিনে পড়তে পারেন। দোয়া কবুলের সময়ে দোয়া করলেই কবুল হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ হাদিসেই তা বলা হয়েছে। নিচে কিছু দামী দোয়া তুলে ধরা হলে। 

জুমার দিন এই দোয়াগুলো পড়তে পারেন
১. দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাধিক কল্যাণ লাভের দোয়া
رَبَّنَا آتِنَا فِي الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ حَسَنَةً وَقِنَا عَذَابَ النَّارِ ‘রাব্বানা আতিনা ফিদ্ দুনইয়া হাসানাহ, ওয়াফিল আখিরাতি হাসানাহ, ওয়াকিনা আজাবান্নার।’ অর্থ: ‘হে আমার প্রভু! আমাকে দুনিয়াতে সুখ দান কর, আখেরাতেও সুখ দান কর এবং আমাকে জাহান্নাম থেকে বাঁচাও।’ (সুরা বাকারা: ২০১‍)

২. উত্তম জীবন যাপনের দোয়া
اَللَّهُمَّ اِنِّى أَسْألُكَ الْهُدَى وَالتُّقَى وَالْعَفَافَ وَالْغِنَى ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল হুদা; ওয়াত তুক্বা; ওয়াল আফাফা; ওয়াল গেনা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আমি আপনার কাছে হেদায়াত কামনা করি এবং আপনার ভয় তথা তাকওয়া কামনা করি এবং আপনার কাছে সতীত্ব তথা নৈতিক পবিত্রতা কামনা করি এবং সম্পদ তথা সামর্থ্য বা সচ্ছলতা কামনা করি।’ (মুসলিম: ২৭২১; তিরমিজি: ৩৪৮৯; ইবনে মাজাহ: ৩৮৩২; মুসনাদে আহমদ: ৩৬৮৪, ৩৮৯৪)

আরও পড়ুন: জুমার দিন দরুদ না পড়লে যা হারাবেন

৩. মা-বাবাসহ সকল মুমিনের জন্য দোয়া
رَبَّنَا اغْفِرْ لِي وَلِوَالِدَيَّ وَلِلْمُؤْمِنِينَ يَوْمَ يَقُومُ الْحِسَابُ উচ্চারণ: ‘রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালিদাইয়্যা ওয়ালিল মুমিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের পালনকর্তা! আমাকে, আমার পিতা-মাতাকে এবং সব মুমিনকে আপনি সেইদিন ক্ষমা করে দিবেন; যেইদিন হিসাব কায়েম করা হবে।’ (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

৪. ধৈর্য ও উত্তম মৃত্যু চেয়ে দোয়া
رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ উচ্চারণ: ‘রব্বানাফরিগ আলাইনা সাবরাও ওয়া তাওয়াফ্ফানা মুসলিমিন।’ অর্থ: ‘হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদের ধৈর্যদান করুন এবং মুসলিম হিসেবে মৃত্যু দান করুন।’ (সুরা আরাফ: ১২৬)

৫.  দ্বীনের ওপর অবিচল ও পথভ্রষ্টতা থেকে মুক্ত থাকার দোয়া
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ هَدَیۡتَنَا وَ هَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَهَّابُ উচ্চারণ: ‘রব্বানা লা তুঝিগ কুলুবানা বা’দা ইজ হাদাইতানা ওয়াহাব লানা মিল্লাদুনকা রহমাহ, ইন্নাকা আনতাল ওয়াহহাব।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব, আপনি হেদায়াত দেওয়ার পর আমাদের অন্তরসমূহ বক্র করবেন না এবং আপনার পক্ষ থেকে আমাদেরকে রহমত দান করুন। নিশ্চয় আপনি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)

আরও পড়ুন: জুমাবারে মসজিদে গিয়ে যেসব আমলের কথা ভুলবেন না

৬. رَبِّ اجۡعَلۡنِیۡ مُقِیۡمَ الصَّلٰوۃِ وَ مِنۡ ذُرِّیَّتِیۡ رَبَّنَا وَ تَقَبَّلۡ دُعَآءِ উচ্চারণ: ‘রব্বিজ আলনি মুক্বীমাস সালাতি ওয়া মিন জুররিয়্যাতি রব্বনা ওয়া তাক্বাব্বাল দুআ।’ অর্থ: ‘হে আমার রব, আমাকে সালাত কায়েমকারী বানান এবং আমার বংশধরদের মধ্য থেকেও, হে আমাদের রব, আর আমার দোয়া কবুল করুন।’

উল্লেখিত দোয়াগুলো বেশ দামী তাই দোয়া কবুলের দিনে এসব দোয়া যেন আমরা মিস না করি। কিন্তু এমন নয় যে, এগুলো জুমার দিনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। বরং যেকোনো দিনে যেকোনো সময়ে এসব দোয়া করা যায়। আল্লাহ তাআলা আমাদের উক্ত দোয়াগুলো জুমার দিনে পড়ার তাওফিক দান করুন।