images

ইসলাম

রমজানের আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষার সহজ ৩ উপায়

ধর্ম ডেস্ক

০৩ এপ্রিল ২০২৫, ০৪:১০ পিএম

images

রমজানের শিক্ষা প্রকৃত অর্থে তারাই ধারণ করেন, যারা রমজানের পরেও মহিমান্বিত মাসের আমলের ধারাবাহিতক রক্ষা করে চলেন। মূলত মৃত্যু পর্যন্ত একজন মুমিনকে ইবাদতের প্রতি যত্নশীল থাকতে হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তুমি তোমার প্রতিপালকের ইবাদত করো মৃত্যু আসার আগ পর্যন্ত।’ (সুরা হিজর: ৯৯)

আর সেই প্রশিক্ষণ লাভ হয় রমজান মাসে। যা বাকি ১১ মাস আল্লাহর পথে অটল অবিচল থাকতে সাহায্য করে মুমিনকে। ইসলামের দৃষ্টিতে নিয়মিত আমলেই বান্দার সফলতা নির্ভরশীল। মহানবী (স.) বলেছেন, মহান আল্লাহ ওই আমলকে ভালোবাসেন, যা নিয়মিত করা হয়, যদিও তা পরিমাণে কম হয়। তিনি (স.) কোনো আমল করলে তা নিয়মিতভাবে করতেন। (সুনানে আবু দাউদ: ১৩৬৮)

অনেকে রমজানে সুন্দরভাবে ইবাদত-বন্দেগি করেন, কিন্তু রমজান চলে গেলে ইবাদত থেকে গাফেল হয়ে পড়েন। এটি মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। আমল শুরু করার পর কেউ তাতে শৈথিল্য প্রদর্শন করলে শয়তান প্রলুব্ধ হয় এবং ব্যক্তি শয়তানের শিকারে পরিণত হয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তাদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও, যাকে আমি দিয়েছিলাম নিদর্শন, অতঃপর সে তাকে বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে। আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়।’ (সুরা আরাফ: ১৭৫)

আরও পড়ুন: দোয়া করলেই কবুল—এমন কিছু সময়

তাই আমল শুরু করার পর ছেড়ে দেয়া অনুচিত। এক হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, হে আবদুল্লাহ! অমুক ব্যক্তির মতো হয়ো না। সে তাহাজ্জুদ আদায় করত, অতঃপর তাহাজ্জুদ ত্যাগ করেছে। (সহিহ বুখারি: ১১৫২)

রমজানের আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষার উপায়
তিন কাজের মাধ্যমে আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করা যায়। তা হলো—

১. সর্বোচ্চ চেষ্টা করা
আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে। কেননা যে ব্যক্তি নেক কাজের ধারাবাহিকতা রক্ষায় চেষ্টা করবে, তার জন্য আল্লাহর অঙ্গীকার হলো, ‘যারা আমার উদ্দেশ্যে সংগ্রাম করে আমি তাদেরকে অবশ্যই আমার পথে পরিচালিত করব। আল্লাহ অবশ্যই সৎকর্মপরায়ণদের সঙ্গে থাকেন।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৯)

২. আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করা
মুমিন নিজের ওপর আস্থা না রেখে আল্লাহর ওপর আস্থা রাখবে এবং আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষায় তাঁর কাছে সাহায্য কামনা করবে। পবিত্র কোরআনে দোয়া শেখানো হয়েছে, ‘হে আমাদের প্রতিপালক! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্য লঙ্ঘনপ্রবণ করবেন না এবং তোমার কাছে থেকে আমাদেরকে করুণা দান করো। নিশ্চয়ই তুমি মহাদাতা।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮)

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া

রাসুলুল্লাহ (স.) দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার রহমত প্রার্থী। কাজেই আমাকে এক পলকের জন্যও আমার নিজের কাছে সোপর্দ করবেন না এবং আমার সব কিছু সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে দিন। আর আপনিই একমাত্র ইলাহ।’ (আবু দাউদ: ৫০৯০)

৩. পুণ্যবানদের সান্নিধ্য গ্রহণ করা
নেককার বা পুণ্যবানদের পাশে থাকার উপকার বিস্ময়কর। গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা এবং নেক আমলে উৎসাহ বৃদ্ধিতে পুণ্যবানদের পাশে থাকার বিকল্প নেই। একটি প্রবাদও রয়েছে যে, সৎসঙ্গে সর্গ বাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ। পবিত্র কোরআনের একাধিক আয়াতে মানুষ আল্লাহওয়ালা ও নেককার মানুষের সান্নিধ্য গ্রহণে উৎসাহিত করা হয়েছে। যেমন ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হও।’ (সুরা তাওবা: ১১৯)

যারা নেক আমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখেন, তাদের পুরস্কার ঘোষণায় পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা বলে, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ, অতঃপর অবিচলিত থাকে, তাদের কাছে অবতীর্ণ হয় ফেরেশতা এবং বলে, তোমরা ভীত হয়ো না, চিন্তিত হয়ো না এবং তোমাদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল তার জন্য আনন্দিত হও। আমরাই তোমাদের বন্ধু দুনিয়ার জীবনে ও আখেরাতে। সেখানে তোমাদের জন্য রয়েছে যা কিছু তোমাদের মন চায় এবং সেখানে তোমাদের জন্য আছে যা তোমরা ফরমায়েশ করো। এটা ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু আল্লাহর পক্ষ থেকে আপ্যায়ন।’ (সুরা হা-মিম-সাজদা: ৩০-৩২)

আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।