images

ইসলাম

সন্তানহারা বাবা-মাকে নবীজির সান্ত্বনা

ধর্ম ডেস্ক

১৩ মার্চ ২০২৫, ০৫:৩৬ পিএম

images

আল্লাহ তাআলা যাকে ইচ্ছা সন্তান দেন; ইচ্ছা হলে ফিরিয়ে নেন। সব তাঁরই ইচ্ছাধীন। সন্তানের মৃত্যু একজন বাবা-মায়ের জন্য সীমাহীন কষ্টের। কিন্তু আল্লাহ তাআলার কাছে সন্তানহারা মা-বাবার মর্যাদা ঈর্ষণীয়। পরকালে তাদের দেওয়া হবে বিশেষ সম্মাননা। প্রিয়নবী (স.) সন্তানহারা পিতা-মাতাকে সেই সম্মাননার কথা শোনাতেন। 

প্রিয়নবী (স.) শোকার্ত পরিবারকে সান্ত্বনা দিতেন, ধৈর্যধারণে উৎসাহিত করতেন। যতটুকু সম্ভব সেবাও করতেন। সাহাবিদেরও সে শিক্ষা দিতেন। সন্তানহারা মাকে বিশেষ সান্ত্বনা দিয়ে তিনি বলতেন- ‘তোমাদের মধ্যে যে নারী তিনটি সন্তান আগেই পাঠাবে (মারা যাবে), তারা তার জন্য জাহান্নামের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াবে।’ তখন জনৈক নারী বলল, আর দুটি পাঠালে? তিনি বললেন, ‘দুটি পাঠালেও।’ (সহিহ বুখারি: ১০১) ‘এক নারী রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে তার অসুস্থ ছেলেকে নিয়ে এলো এবং বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এর ব্যাপারে আশঙ্কা করছি। ইতিপূর্বে আরো তিনজন মৃত্যুবরণ করেছে। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘তুমি তো এক কঠিন প্রাচীর দ্বারা জাহান্নাম থেকে নিজেকে রক্ষা করেছ।’ (সুনানে নাসায়ি: ১৮৭৭)

আবু হাসসান (রহ.) থেকে বর্ণিত, আমি আবু হুরায়রা (রা.)-কে বললাম, ‘আমার দুটি সন্তান মারা গেছে। আপনি কি রাসুল (স.) থেকে এমন একটি হাদিস বর্ণনা করবেন, যাতে আমার অন্তর সান্ত্বনা পায়? আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, হ্যাঁ, আমি নবী কারিম (স.)-কে  বলতে শুনেছি, ‘ছোট বয়সে মৃত্যুবরণকারী সন্তানেরা জান্নাতের প্রজাপতির মতো। তারা যখন বাবা অথবা বাবা-মায়ের উভয়ের সঙ্গে মিলিত হবে, তখন তার পরিধেয় কাপড় কিংবা হাত ধরবে, যেভাবে এখন আমি তোমার কাপড়ের আঁচল ধরেছি। এরপর সেই কাপড় বা হাত আর ছাড়বে না, যতক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাকে তার মা-বাবাসহ জান্নাতে প্রবেশ না করাবেন। (মুসলিম: ৬৩৭০)

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহকে (স.) বলতে শুনেছি, ‘শিশু (অবস্থায় মৃত্যুবরণকারী) মুসলিম সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তারা তাদের মাতা-পিতাকে পেলে কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না।’ (মেশকাত: ১৭৫২)

আরও পড়ুন: মহান আল্লাহ শিশু হত্যার যে শাস্তি দিতে বলেছেন 

গর্ভের সন্তান মারা গেলেও পুরস্কার দেওয়া হবে। রাসুল (স.) বলেন, যাঁর হাতে আমার জীবন তাঁর শপথ করে বলছি, যদি কোনো নারীর গর্ভপাত হয় এবং ওই মা ধৈর্য্য ধরে ও সওয়াবের আশা করে, তাহলে সন্তান তাঁর নাড়ী ধরে টেনে তাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ: ১৬০৯, মুসনাদে আহমদ: ২২০৯০)

হাদিসে আরও এসেছে, সন্তান জান্নাতের দরজায় বাবা-মাকে অভ্যর্থনা জানাবে। কুররা (রা.) থেকে বর্ণিত, এক সাহাবি রাসুল (স.)-এর কাছে নিয়মিত আসতেন। তাঁর সঙ্গে ছোট্ট একটা বাচ্চাও থাকত। রাসুল (স.) তাঁকে জিজ্ঞেস করেন, তুমি কি তোমার ছেলেকে ভালোবাসো? তিনি বললেন, আমার ছেলেকে আমি যতটুকু ভালোবাসি আল্লাহ আপনাকে তেমনি ভালোবাসেন। পরবর্তীতে ছেলেটি মারা যায়। রাসুল (স.) ছেলেটিকে দেখতে না পেয়ে তাঁর সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। ওই ছেলের মুত্যুর খবর জেনে মহানবী (স.) তাঁর বাবাকে বলেন, তুমি কি আনন্দিত নও যে, জান্নাতের যে দরজা দিয়েই তুমি প্রবেশ করবে, সেখানে ছেলেকে তোমার জন্য দরজা খোলার চেষ্টা করতে দেখতে পাবে।’ (সুনানে নাসায়ি: ২০৭০) 

সন্তানের মৃত্যুর পর ধৈর্য ধারণ করলে ওই মা-বাবার জন্য জান্নাতে বিশেষ বাড়ি থাকবে। আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন কারও সন্তান মারা যায়, তখন আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের ডেকে বলেন, ‘তোমরা আমার বান্দার সন্তানের জান কবজ করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা তার কলিজার টুকরোর জান কবজ করেছ? তারা বলেন, হ্যাঁ। আল্লাহ তাআলা বলেন, আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, আপনার বান্দা এই বিপদেও ধৈর্য্য ধারণ করে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন পড়েছে। তখন আল্লাহ তাআলা বলেন, তোমরা আমার এই বান্দার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করো এবং এর নাম দাও ‘বাইতুল হামদ’ তথা ‘প্রশংসার ঘর।’ (তিরমিজি সূত্রে রিয়াজুস সালেহিন: ১৩৯৫)

আরও পড়ুন: যে দোয়া ৩ বার পড়লে কেউ ক্ষতি করতে পারবে না

শৈশবেই মা-বাবাকে ছেড়ে চলে যাওয়া শিশুরা জান্নাতে হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সঙ্গে থাকে। ইবরাহিম (আ.) তাদের দেখাশোনা করবেন। সামুরা ইবনে জুনদুব (রা.) থেকে বর্ণিত দীর্ঘ একটি হাদিসে রাসুল (স.) মেরাজের ঘটনার বর্ণনায় বলেছেন, ‘আমরা চলতে চলতে একটা সজীব শ্যামল বাগানে এসে পৌঁছলাম। তাতে বসন্তের বিচিত্র ফুলের সমাহার আছে। বাগানের মধ্যে দীর্ঘকায় একজন পুরুষকে দেখলাম। তবে তাঁর মাথা আমি দেখছিলাম না। তাঁর চতুর্পাশে বিপুল সংখ্যক ছেলে-মেয়ে দেখলাম। এত বেশি ছেলে মেয়ে আমি কখনও দেখিনি। আমি ফেরেশতাদের বললাম, ওনি কে? আমাকে বলা হলো, ইনি ইবরাহিম (আ.)। আর তাঁর আশপাশের ছেলে-মেয়েরা ওইসব শিশু, যারা শৈশবের নিষ্পাপ অবস্থায় মারা গেছে।’ (সহিহ বুখারি: ৪২৯)

সন্তান বিয়োগের কঠিন পরীক্ষায় ব্যথিত ও মর্মাহত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ধৈর্যধারণ করা মুমিনদের কর্তব্য। এতেই রয়েছে কল্যাণ ও মহাসাফল্য। আল্লাহ তাআলা সন্তানহারা মা-বাবাদের আল্লাহর সিদ্ধান্তের ওপর ধৈর্যধারণ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।