images

ইসলাম

দোয়ার শব্দ প্রয়োজনে পরিবর্তন করা যাবে?

ধর্ম ডেস্ক

২০ জানুয়ারি ২০২৫, ০৭:০৮ পিএম

কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত দোয়া মানে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের শেখানো দোয়া। এসব দোয়ার শব্দ-বাক্য কেমন হওয়া উচিত, তা আল্লাহ ও রাসুলের চেয়ে ভালো কেউ জানে না। তাই কোরআন ও হাদিসে যেসব দোয়া বর্ণিত হয়েছে, সেগুলোতে পরিবর্তন আনা ঠিক নয়। 

অনেককে দেখা যায় দোয়ার শব্দ ও বাক্যে পরিবর্তন আনেন। বিশেষ করে সম্মিলিত দোয়ার সময় মাসনুন দোয়ায় ব্যবহৃত একবচনকে বহুবচনে রূপান্তর করতে দেখা যায়। হয়তো হাদিসে একবচনে এসেছে—হে আল্লাহ, আমাকে ক্ষমা করুন, কিন্তু দোয়া করার সময় বহুবচনে বলা হচ্ছে, হে আল্লাহ, আমাদের ক্ষমা করুন। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, দোয়ার শব্দ ও বাক্য এভাবে পরিবর্তন করা হারাম নয়, তবে তা অনুচিত। কেননা কোরআন-হাদিসে বর্ণিত দোয়াগুলো ইবাদতেরই অংশ। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১)

আর ইবাদত সেভাবেই করা উত্তম, যেভাবে তা বর্ণিত হয়েছে। তাতে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনা অনুচিত। রাসুলুল্লাহ (স.) নিজেও এমন পরিবর্তন থেকে নিষেধ করেছেন। একবার হজরত বারা ইবনু আজিব (রা.) একটি মাসনুন দোয়া মুখস্থ করছিলেন, তখন তিনি ভুলে নবীর স্থলে রাসুল শব্দে দোয়াটি মুখস্থ করতে লাগলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, বরং তুমি বলো, ‘আমি বিশ্বাস স্থাপন করেছি তোমার নবীর প্রতি, যাকে তুমি প্রেরণ করেছ।’ (সহিহ মুসলিম: ২৭১০)

আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া

হাফেজ ইবনে হাজার আস্কালানি (রহ.) বলেন, ‘দোয়ার শব্দগুলো আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত। এর আলাদা বৈশিষ্ট্য ও তাৎপর্য আছে। এ ক্ষেত্রে যুক্তি-তর্ক গ্রহণযোগ্য নয়। সুতরাং যে শব্দে এসেছে, সে শব্দে তা সংরক্ষণ করা আবশ্যক।’ (ফাতহুল বারি: ১১/১১৬)

আল্লামা মাজেরি (রহ.) বলেন, ‘দোয়াগুলো যে শব্দে-বর্ণে বর্ণিত হয়েছে তাতেই সীমাবদ্ধ থাকবে। কেননা কখনো কখনো প্রতিদান বর্ণগুলোর সঙ্গেও যুক্ত থাকে। হয়তো বা এই শব্দই রাসুলুল্লাহ (স.)-এর কাছে অবতীর্ণ হয়েছে। তাই সেভাবেই তা আদায় করা আবশ্যক।’ (মুসনাদে আবি ইআলার টীকা: ৩/২৩০)

তবে কোনো কোনো দোয়ার শব্দে পরিবর্তন আনার অবকাশ রয়েছে। যেমন তাআউজ বা কারো ব্যাপারে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সময়। আবদুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রা.) বলেন, নবী (স.) হাসান ও হুসাইন (রা.)-এর জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এভাবে- ‘আমি তোমাদের দুজনের জন্য আল্লাহর পূর্ণাঙ্গ কালেমাগুলোর মাধ্যমে প্রত্যেক শয়তান ও বিষাক্ত প্রাণী থেকে এবং সকল প্রকার বদনজর থেকে মুক্তি চাইছি।’ অতঃপর তিনি বলতেন, তোমাদের পিতা ইবরাহিম (আ.)-ও ইসমাঈল এবং ইসহাক (আ.) উভয়ের জন্য এই দোয়া পড়ে আশ্রয় চাইতেন। (সুনানু আবি দাউদ: ৪৭৩৭)

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া

উল্লিখিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) হাসান ও হুসাইন (রা.) দুজনকে বোঝাতে দ্বিবচন শব্দ ব্যবহার করেছেন, যা থেকে বোঝা যায়—এখানে একজনের জন্য একবচন এবং বহুজনের জন্য বহুবচন ব্যবহারের অবকাশ রয়েছে। 

শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.)-কে একজন নারী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। যে নারী হাদিসে বর্ণিত ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আবদুকা ওয়া ইবনু আবদিকা’ (হে আল্লাহ! আমি আপনার দাস এবং দাসের ছেলে) বাক্যে দোয়া করত এবং দাসের পরিবর্তে দাসী বলতে অস্বীকার করেছিল। তিনি বলেন, তার জন্য উচিত ও উত্তম হলো এভাবে দোয়া করা—হে আল্লাহ, আমি আপনার দাসী, আমি আপনার দাসের মেয়ে দাসী।’ (আল ফাতাওয়াল কুবরা: ২/২০৫)

অতএব, যথাযথ অর্থ প্রকাশের উদ্দেশে দোয়ার শব্দ-বাক্য পরিবর্তন করা যাবে। যেমন- নারী দোয়ার ক্ষেত্রে পুরুষবাচক শব্দ বাদ দিয়ে স্ত্রীবাচক শব্দ গ্রহণ করতে পারবে। একইভাবে দোয়ায় বহুবচন থাকলে একজনের ক্ষেত্রে একবচন শব্দ গ্রহণ করা যাবে। যার দলিল উপরে তুলে ধরা হয়েছে। কিন্তু কোনোভাবেই দোয়াকে বিকৃতির উদ্দেশ্যে তা পরিবর্তন করা যাবে না। আর অকারণে পরিবর্তন করা আদবের বরখেলাফ ও দোয়া বরকতশূণ্য হওয়ার কারণ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে যথাযথভাবে ইবাদত করার তাওফিক দান করুন। আমিন।