ধর্ম ডেস্ক
০১ জানুয়ারি ২০২৫, ০৪:৩৭ পিএম
প্রত্যেক নেক আমলের প্রতিদান রয়েছে। শর্ত হলো- নিয়ত সহিহ থাকা, ইখলাসের সঙ্গে নবীজির সুন্নত মেনে করা। তাহলে কোনো আমলই প্রতিদানবিহীন নয়। তবে কিছু আমলের ফজিলত অনেক বেশি। নবীজি এমন কিছু আমলের কথাও উম্মতকে জানিয়েছেন, যার প্রতিদান জান্নাত। এখানে হাদিসের আলোকে সেরকম ৮টি নফল আমল তুলে ধরা হলো।
১. সকাল-সন্ধ্যায় ‘সাইয়েদুল ইসতেগফার’ পড়া
সাইয়েদুল ইসতেগফার আল্লাহর এত চমৎকার প্রশংসায় ভরপুর যে, যদি কেউ গুনাহ মাফের জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে আল্লাহর কাছে দোয়াটি পড়ে নিঃশর্ত ক্ষমা চায়; আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে ক্ষমা করে দেন। হাদিসে এসেছে- ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় দোয়াটি (সাইয়িদুল ইস্তেগফার) দৃঢ় বিশ্বাসের সাথে পড়বে, অতঃপর সেদিন সন্ধ্যা হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতিদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে এটি পড়বে, অতঃপর সকাল হওয়ার আগেই মারা যাবে, সে জান্নাতীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৩০৬)
সাইয়িদুল ইস্তেগফার (উচ্চারণসহ)
اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلٰهَ إِلاَّ أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلٰى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّه“ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلاَّ أَنْتَ ‘আল্লাহুম্মা আনতা রব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাকতানি ওয়া আনা আবদুকা ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাতাতু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানাতু। আবু-উ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়া ওয়া আবু-উ লাকা বিজাম্বি ফাগফিরলী ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া কোনো প্রভু নাই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি সাধ্যমত তোমার কাছে দেয়া ওয়াদা ও প্রতিশ্রুতিগুলো পালনে সচেষ্ট আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে তোমার কাছে আশ্রয় চাই। আমাকে যে নেয়ামত দান করেছ, তা স্বীকার করছি এবং আমি আমার পাপগুলো স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। কেননা তুমি ছাড়া কেউ ক্ষমাকারী নেই।’
২. প্রতিদিন ‘সুরা মুলক’ পড়া
প্রতিদিন সুরা মুলক একবার পড়লে জান্নাত সুনিশ্চিত। যা প্রতিদিন এশার নামাজের পর পড়া হয়। যদিও মুখস্থ থাকলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজেই তা তেলাওয়াত করা যেতে পারে। এ সুরা পড়লে মহান আল্লাহর প্রতি ভয় সৃষ্টি হয় এবং নেক কাজের আগ্রহ বেড়ে যায়। সুরা মুলক পড়ে নামাজ আদায় করলে দিনব্যাপী অগণিত খারাপ কাজের মাঝে একটি ভালো কাজ করার অন্যরকম অনুভূতি পাওয়া যায়। সুরাটির নিয়মিত পাঠকারীকে আল্লাহ তাআলা কবরের আজাব থেকে সুরক্ষা দেবেন। কেয়ামতের দিন সুরা মুলক তার তেলাওয়াতকারীকে সুপারিশ করে জান্নাতে নিয়ে যাবে। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘পবিত্র কোরআনে ত্রিশ আয়াতবিশিষ্ট একটি সুরা আছে, যেটি কারো পক্ষে সুপারিশ করলে— তাকে মাফ করে দেওয়া হয়। এ সুরাটি হলো- তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪০০; সুনানে তিরমিজি: ২৮৯১) অন্য হাদিসে ইবনে মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতি রাতে তাবারাকাল্লাজি বিয়াদিহিল মুলক পড়বে, আল্লাহ তাআলা তাকে এই সুরার মাধ্যমে কবরের আজাব থেকে বাঁচিয়ে রাখবেন।’ (আমালুল ইয়াউমি ওয়াল লাইলাতি, নাসায়ি: ৭১১; সহিহুত তারগিব: ২/২৫৩: ১৫৮৯)
৩. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর ‘আয়াতুল কুরসি’ পড়া
সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতটিকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। হাদিসের বক্তব্য অনুযায়ী, এটি কোরআনের সর্বশ্রেষ্ঠ আয়াত; সব আয়াতের সর্দার বা নেতা। সুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘প্রতিটি জিনিসের একটি চূড়া থাকে। কোরআনের চূড়া হলো সুরা বাকারা। তাতে এমন একটি আয়াত আছে, যা কোরআনের অন্যসব আয়াতের ‘নেতা’। সেটা হলো আয়াতুল কুরসি।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩১১৯) আরেক হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশে মৃত্যু ছাড়া আর কোনো বাধা থাকবে না।’ (সুনানে নাসায়ি: ৯৯২৮)
৪. অজুর পর দু’রাকাত নামাজ পড়া
হজরত উকবা বিন আমের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘কোনো মুসলিম যখন সুন্দরভাবে অজু করে দাঁড়িয়ে একাগ্রতার সঙ্গে দুই রাকাত সালাত আদায় করে, তার জন্য জান্নাত অবধারিত হয়ে যায়।’ (আবু দাউদ: ৯০৬; তিরমিজি: ১০৫৯)
৫. অজুর পর কালেমা শাহাদাত পড়া
অজুর শেষে এই দোয়া ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকা লাহ; ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহ’ পড়লে তার জন্য জান্নাতের আটটি দরজাই খুলে দেওয়া হয়। যে দরজা দিয়ে ইচ্ছা সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে। (সহিহ মুসলিম: ৩৪৫)
৬. আজানের উত্তর দেওয়া
আজানের জবাব (তথা মুয়াজ্জিন যা বলে অনুরূপ বলা, তবে হাইয়া আলাস সালাহ ও হাইয়া আলাল ফালাহের উত্তরে লা হাউলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ বলা) দেয়ার কারণে মানুষ জান্নাতে যাবে। (সহিহ মুসলিম: ৩৮৫; আবু দাউদ: ৫২৭)
৭. তিন কাজের প্রতিদান জান্নাত
হাদিসে এসেছে, তিন কাজ তথা সালামের প্রসার, মানুষকে খাওয়ানো এবং শেষরাতে নামাজ-এই তিনটি কাজ যে ব্যক্তি করবে, সে সহিহ-সালামতে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (তিরমিজি: ২৪৮৫; ইবনে মাজাহ: ১৩৩৪)
৮. প্রিয়জনকে হারিয়ে সওয়াবের আশায় ধৈর্যধারণ করলে জান্নাত
আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, আমি যখন আমার মুমিন বান্দার কোনো প্রিয়বস্তু দুনিয়া হতে উঠিয়ে নেই আর সে ধৈর্য ধারণ করে, আমার কাছে তার জন্য জান্নাত ছাড়া অন্যকিছু (প্রতিদান) নেই। (সহিহ বুখারি: ৬৪২৪)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুনিশ্চিত জান্নাত লাভে উল্লেখিত আমলগুলো যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।