ধর্ম ডেস্ক
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
নফল যেকোনো ইবাদত না করলে গুনাহ নেই। কিন্তু আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে ফরজ-ওয়াজিবের পাশাপাশি নফল ইবাদতের ভূমিকা অপরিসীম। মহান আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে নফল ইবাদতের বিকল্প নেই। আল্লাহর ওলিদের কাছে নফল ইবাদত অনেক গুরুত্বপূর্ণ। তারা কিছুতেই সময় নষ্ট করেন না; কোনো না কোনো আমলে মশগুল থাকেন। মহান আল্লাহ সবসময় তাদের পাশে থাকেন।
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলা বলেন, যে ব্যক্তি আমার কোনো ওলির সঙ্গে দুশমনি রাখবে, আমি তার সঙ্গে যুদ্ধ ঘোষণা করব। আমি যা কিছু আমার বান্দার ওপর ফরজ করেছি, তা দ্বারা কেউ আমার নৈকট্য লাভ করবে না। আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে।
এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে, আমিই তার কান হয়ে যাই (রূপক অর্থে), যা দিয়ে সে শোনে। আমিই তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমিই তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমিই তার পা হয়ে যাই, যা দ্বারা সে চলে। সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তাহলে আমি নিশ্চয়ই তাকে তা দান করি। আর যদি সে আমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তাহলে অবশ্যই আমি তাকে আশ্রয় দিই। আমি কোনো কাজ করতে চাইলে তা করতে কোনো দ্বিধা করি না, যতটা দ্বিধা করি মুমিন বান্দার প্রাণ নিতে। সে মৃত্যুকে অপছন্দ করে আর আমি তার বেঁচে থাকাকে অপছন্দ করি। (বুখারি: ৬৫০২)
আরও পড়ুন: অন্তত একটি আমল গোপন রাখতে পারলে পরকালে যে লাভ হবে
কেয়ামতের দিন নফল ইবাদত খুব দরকার হবে। ফরজ ইবাদতের ত্রুটি পূরণ করবে নফল ইবাদতগুলো। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম যে আমলের হিসাব নেওয়া হবে, তা হলো নামাজ। নামাজ সঠিক হলে সে সফল হলো। আর নামাজ সঠিক না হলে সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্ত হলো। যদি তার ফরজে কিছু ত্রুটি থেকে যায়, তখন আল্লাহ বলবেন- দেখো, আমার বান্দার কোনো নফল আমল আছে কি না, যার দ্বারা ফরজে হয়ে যাওয়া ত্রুটি পূরণ হবে। অতঃপর তার বাকি সব আমল এমনই হবে।’ (তিরমিজি: ৪১৩)
চাইলে প্রতিদিনই নফল আমল করা যায়। যেমন সাধ্যমতো নফল নামাজ পড়া, নফল রোজা রাখা, রোগীকে দেখতে যাওয়া ও সেবা করা, জিকির করা, দরুদ শরিফ পড়া, কোরআন শিক্ষা দেওয়া, কোরআন তেলাওয়াত করা, কবর জিয়ারত করা, মাসনুন দোয়াগুলো পড়া, দান-সদকা করা, সালামের প্রচার-প্রসার করা, মেসওয়াক করা, যেকোনো কাজে নিয়তকে পরিশুদ্ধ করা, সর্বদা অজু অবস্থায় থাকা, রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে দেওয়া, মসজিদে নামাজের পর একটুখানি অবস্থান করা, মানুষের ছোটখাটো উপকার করা, ক্ষুধার্তকে খাওয়ানো, এমনকি একজন মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কথা বলাতেও নফল ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন: আল্লাহর ভয়ে কান্নার ফোঁটা পানি বৃথা যাবে না
ছোট ছোট আরও অনেক নফল আমল রয়েছে। যেমন পশু-পাখিকে খাওয়ানো, গাছের যত্ন নেওয়া, কেউ শোকার্ত; তাকে একটু সান্ত্বনা দেওয়া, গরিব-দুঃখিদের পাশে থাকার চেষ্টা করা, তাদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা ইত্যাদি। অর্থাৎ চাইলে অনেক নফল আমল করা যায়। আর এর কারণে মহান আল্লাহ সন্তুষ্ট হয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ।
অতএব, ছোট্ট এই জীবন যেন শুধু হাসি-তামাশা আর নোংরামিতে পূর্ণ হয়, বরং ফরজ-ওয়াজিব ও নফল আমলে আলোকিত হয়। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।