images

ইসলাম

আত্মহত্যা প্রতিরোধে কোরআনি সচেতনতা 

ধর্ম ডেস্ক

০২ জুন ২০২২, ০৯:২০ এএম

ইচ্ছাকৃতভাবে নিজের প্রাণনাশ করাই আত্মহত্যা। বর্তমানে আত্মহত্যা নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দারিদ্র, দাম্পত্য কলহ, প্রেমে ব্যর্থতা ইত্যাদি কারণে সৃষ্ট হতাশা থেকে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এ সর্বনাশা খেলায় মেতে উঠছেন। ইন্টারন্যাশনাল অ্যাসোসিয়েশন অব সুইসাইড প্রিভেনশনের তথ্যমতে, বিশ্বজুড়ে বছরে সাত লাখের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করেন। প্রতি ১ হাজার মৃত্যুর মধ্যে ১৩ জনই আত্মহত্যার মধ্য দিয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় নেন। 

আত্মহত্যার পেছনে ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞতাকে দায়ী করেন আলেমরা। ইসলামে নিজের জীবন বাঁচানোকে ফরজ করা হয়েছে আর আত্মহত্যা কবিরা গুনাহ। কোরআনের যেসব নির্দেশনা মানলে সমাজ থেকে আত্মহত্যার চিন্তাও ধ্বংস হয়ে যায়, সেসব আয়াত নিয়ে নিচে আলোচনা করা হলো।

১) আত্মহত্যা হারাম: প্রত্যেক মুমিনের অন্তরে প্রথমেই গেঁথে রাখতে হবে যে, আত্মহত্যা হারাম। এই নিষেধাজ্ঞা স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। তিনি বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না’ (সুরা নিসা: ২৯)। তাই এই নির্দেশ অমান্য করার সুযোগ নেই। 

২) হতাশাকে ছুঁড়ে ফেলুন: ইসলাম শিখিয়েছে, আত্মহত্যা কখনও সমাধান নয়। তাই যে কারণেই হতাশা আসুক, মনে স্থান দেওয়া যাবে না। বরং আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করতে হবে। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হয়ো না।’ (সুরা জুমার: ৫৩)

৩) বিপদে ধৈর্যধারণ করুন: ইসলাম বলে, আল্লাহ তাআলা বিপদাপদ দেন মানুষের ধৈর্যের পরীক্ষা নেওয়ার জন্য। যারা ধৈর্যধারণ করবে তারাই সফল হবে। ‘আমি তোমাদের কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধন-সম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা: ১৫৫)

৪) অভাবগ্রস্তদের সাহায্য করুন: অভাব-অনটন অসহ্য হয়ে উঠলেও মানুষ আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। ধনীরা গরীবের পাশে দাঁড়ালে এমনটি আর হয় না। তাই ইসলাম ধনীদের নির্দেশ দিয়েছে অভাবীদের অভাব মোচনে এগিয়ে আসতে। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের (ধনীদের) সম্পদে প্রার্থী ও বঞ্চিতের অধিকার রয়েছে (সুরা জারিয়াত: ১৯)

৫) ইসলামে পার্থিব ব্যর্থতা বলতে কিছু নেই: মনে রাখতে হবে, সাফল্য ও ব্যর্থতার স্থান হলো আখেরাত। পার্থিব জগতে কোনো কিছু অর্জিত না হলে সেজন্য জীবননাশ করা অজ্ঞতা ছাড়া কিছুই নয়। এ জীবনকে বড় করে দেখা উচিত নয়। পরকালই আসল জীবন। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘এ দুনিয়ার জীবন তো ক্ষণস্থায়ী উপভোগের বস্তু। নিঃসন্দেহে আখেরাতই চিরস্থায়ী আবাস’ (সুরা মুমিনুন: ৩৯)। যত ব্যর্থই হোন, আল্লাহ তাআলার সরাসরি নির্দেশ ভুলে যাবেন না যে, ‘তোমরা নিজেদের হাতে নিজেদের ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিও না।’ (সুরা বাকারা: ১৯৫)

৬) প্রেমের কারণে আত্মহত্যা হতভাগাদের কাজ: ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম তো দূরের কথা গায়েরে মুহরাম নারী-পুরুষ পরস্পরের দিকে দৃষ্টিপাতই নিষেধ। যেখানে প্রেম করার আগে দৃষ্টিপাতই নিষেধ, সেখানে প্রেমে ব্যর্থ হয়ে আত্মহত্যা করা— এ বিষয়ে আলোচনা করাও অবান্তর। মহান আল্লাহ বলেন, ‘মুমিন পুরুষদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং লজ্জাস্থানের হেফাজত করে। মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে এবং তার লজ্জাস্থানের হিফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩০-৩১)।

উল্লেখ্য: ইসলামে বৈধ ও পবিত্র সম্পর্ক হলো বিয়ে। বিয়ে-বহির্ভূত প্রেমের অনুমতি নেই; তবে পছন্দ করে শরিয়তসম্মতভাবে বিয়ে করার অনুমতি আছে।

৭) অপমানবোধ থেকে আত্মহত্যা: অপমান সইতে না পেরেও অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। অপমান ও ঠাট্টা বিদ্রূপ নিষেধ করে আল্লাহ তাআলা বলেন, হে ঈমানদারগণ, কোনো সম্প্রদায় যেন অপর কোনো সম্প্রদায়কে বিদ্রূপ না করে, হতে পারে তারা বিদ্রূপকারীদের চেয়ে উত্তম। আর কোনো নারীও যেন অন্য নারীকে বিদ্রূপ না করে, কেননা যাদেরকে উপহাস করা হচ্ছে তারা উপহাসকারিণীদের চেয়ে উত্তম পারে। আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতইনা নিকৃষ্ট! আর যারা তওবা করে না, তারাই তো জালেম। (সুরা হুজরাত: ১১)

সর্বোপরি, ইসলাম মানলে, ইসলামে পুরোপুরি দাখিল হলে আত্মহত্যার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ারও সুযোগ নেই। তাছাড়া আত্মহত্যাকারীর জন্য জাহান্নামই চূড়ান্ত স্থান। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামেও তার সেই যন্ত্রণাকে অব্যাহত রাখা হবে। আর যে ব্যক্তি ধারালো কোনো কিছু দিয়ে আত্মহত্যা করবে, তার সেই যন্ত্রণাকেও জাহান্নামে অব্যাহত রাখা হবে’ (বুখারি: ৪৪৬)। সুতরাং আত্মহত্যা প্রতিরোধে কোরআনি সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আল্লাহর নির্দেশগুলোকে সমাজে তুলে ধরতে হবে। এতেই চূড়ান্ত সফলতা অর্জন হবে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পুরোপুরি ইসলামে দাখিল হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।