ধর্ম ডেস্ক
২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:১৪ পিএম
নামাজ মহান ইবাদত। একজন মুমিনের ওপর নামাজ আদায়ের চেয়ে বড় কর্তব্য নেই। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মানে মহান আল্লাহর সঙ্গে দৈনিক পাঁচবার কথোপকথনের সৌভাগ্য লাভ করা। আনাস ইবনে মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যখন নামাজে দাঁড়ায় তখন সে যেন তার প্রতিপালকের সঙ্গে কথোপকথন করে!’ (বুখারি: ৪১৩)
অনেকে শুধুমাত্র দায়িত্ব পালন করতেই নামাজ পড়েন। দ্রুত রুকু-সেজদা দিয়ে নামাজ শেষ, দায়িত্ব পালনও শেষ! তারা মহান রবের সঙ্গে কী কথোপকথন করলেন! এতে স্বাদ বা তৃপ্তি লাভ হবে কীভাবে। বরং এ মহান দায়িত্ব যারা ভালোবাসার সঙ্গে যথাযথভাবে পালন করেন, তারাই নামাজের পূর্ণ স্বাদ ও তৃপ্তি লাভ করেন।
দুনিয়ার রাজা-বাদশার সামনে কথা বললে মানুষ কতটা জড়োসড়ো হয়ে থাকে! অথচ বাদশারও বাদশা, আকাশ-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, দুনিয়া-আখেরাত সবকিছুর বাদশা মহান আল্লাহর সামনে দাঁড়ালে কেমন হওয়া চাই একটু ভাবুন তো! অবশ্যই ভয়-ভীতি, ভক্তি-ভালোবাসা ও মনোযোগের সঙ্গে নামাজ আদায় করতে হবে। সাহাবিরা সে পন্থা নবীজির কাছ থেকে ভালোভাবেই শিখে নিয়েছিলেন।
আরও পড়ুন: জান্নাতে যেতে ন্যূনতম যেসব আমল করতে বলা হয়েছে হাদিসে
ঘরে, বাইরে, যুদ্ধের ময়দানে সর্বক্ষেত্রে এর প্রমাণ দিয়েছেন তারা। এমনকি শত্রুর নিক্ষিপ্ত তীর শরীরে বিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও নামাজে পূর্ণ খুশু বজায় রাখতেন। হজরত তালহা (রা.) একজন বিখ্যাত সাহাবি। একবার নামাজের প্রতি মনোযোগে ঘাটতি হওয়ায় তিনি তার প্রিয় বাগান আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিয়েছিলেন। (মুয়াত্তা মালিক: ২১৪)
জাতুর-রিকা যুদ্ধাভিযানে পাহারারত অবস্থায় এক আনসারী সাহাবি নামাজ আদায়ে মশগুল হয়ে পড়েন। এমন সময় শত্রুর তিনটি তীর তাঁর শরীরে বিধল। তিনি রক্তাক্ত অবস্থায় রুকু সেজদা করে যথারীতি নামাজ শেষ করলেন। তাঁর পাশে ঘুমিয়েছিলেন এক মুহাজির সাহাবি। নামাজশেষে তিনি সঙ্গীকে জাগালেন। মুহাজির সাহাবি জেগে উঠে তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখে বললেন, সুবহানাল্লাহ! প্রথম তীর নিক্ষেপের পরই আমাকে ডাকেননি কেন? তিনি বললেন, আমি (নামাজে) এমন একটি সুরা তেলাওয়াত করছিলাম যা ছাড়তে আমি পছন্দ করিনি।’ (আবু দাউদ: ১৯৮)
আরও পড়ুন: মহানবী (স.)-কে যেভাবে অনুসরণ করতেন সাহাবিরা
সাহাবায়ে কেরামের নামাজের এমন অসংখ্য ঘটনা রয়েছে। তাদের নামাজ ছিল সত্যিকার অর্থেই জীবন্ত ও প্রাণবন্ত। আমাদের নামাজও যেন হয় এমন খুশু-খুজুর অনুভূতিতে পূর্ণ। এভাবে নামাজ পড়লেই মিলবে নামাজের পূর্ণ স্বাদ। এমন নামাজ আদায়কারীকে সুসংবাদ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘সফলকাম ওইসব মুমিন, যারা তাদের নামাজে খুশুখুজু (পূর্ণ মনোযোগ) অবলম্বন করে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-২)
রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘এমনভাবে আল্লাহর ইবাদত করো, যেন তাকে তুমি দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে না পাও, তবে (ভাবো) তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন।’ (বুখারি: ৫০; মুসলিম: ৮) অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের কেউ নামাজে দাঁড়ালে সে মূলত তার প্রভুর সঙ্গে কথোপকথন করে। তাই সে যেন দেখে কীভাবে সে কথোপকথন করছে।’ (মুস্তাদরাক হাকিম; সহিহুল জামে: ১৫৩৮)
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে খুশু-খুজু নিয়ে তথা পূর্ণ মনোযোগ, ভালোবাসা ও একাগ্রতার সঙ্গে সহিহ-শুদ্ধভাবে নামাজ আদায়ের তাওফিক দান করুন। আমিন।