images

ইসলাম

৫ আদব না মানলে আপনার মোনাজাত অর্থহীন

ধর্ম ডেস্ক

০৭ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৫৫ পিএম

ইসলামে দোয়া বা মোনাজাত একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)

আল্লাহ তাআলা বান্দার ডাকে সাড়া দিতে পছন্দ করেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)

দোয়া কখনো বিফলে যায় না। তাই দোয়ার ফল পেতে দেরি হলে হতাশ হওয়া অনুচিত। নিচে এমন ৫টি কারণ তুলে ধরা হলো, যে কারণে দোয়া বা মোনাজাত অর্থহীন হয়ে যায়।

১. ইখলাস না থাকা
দোয়া বা মোনাজাত করতে হবে ইখলাসের সঙ্গে। দোয়া একটি ইবাদত। ইখলাসহীন ইবাদত মহান আল্লাহর কাছে মূল্যহীন। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বান্দাদের ইখলাসের সঙ্গে ইবাদত করতে আদেশ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের শুধু এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তার জন্য দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে এবং নামাজ কায়েম করে ও জাকাত প্রদান করে। আর এটাই সঠিক দ্বীন।’ (সুরা বায়্যিনাহ: ৫)
অতএব, আল্লাহর অন্য ইবাদতের মতো দোয়াও ইখলাসের সঙ্গে করতে হবে, অন্যথায় সে দোয়া বিফলে যেতে পারে।

আরও পড়ুন: ফরজ নামাজের পর মাসনুন দোয়াগুলো জেনে নিন

২. হতাশার সঙ্গে দোয়া করা
দোয়া করার পর দ্রুত ফল না পেলে অনেকে হতাশ হয়ে পড়ে। এমনকি এ রকমও বলতে শুরু করে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করেন না। এতে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। ফলে তার দোয়া বিফলে যাওয়াই স্বাভাবিক। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়া না করে আর বলে যে আমি দোয়া করলাম, কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না।’ (বুখারি: ৬৩৪০)

৩. কোনো অন্যায় আবদার থাকা
পাপাচারমূলক কাজ করার ইচ্ছা করা ও আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করার দোয়া মহান আল্লাহ কবুল করেন না। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘বান্দার দোয়া সর্বদা গৃহিত হয়, যদি না সে অন্যায় কাজ অথবা আত্মীয়তার সম্পর্কচ্ছেদ করার জন্য দোয়া করে এবং দোয়ায় তাড়াহুড়া করে।’ (মুসলিম: ৬৮২৯)

৪. মনোযোগ না থাকা
দোয়ায় মনোযোগ না থাকলেও সে দোয়া আল্লাহর কাছে কবুল হয় না। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা কবুল হওয়ার পূর্ণ আস্থা নিয়ে আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমরা জেনে রাখো যে আল্লাহ নিশ্চয়ই অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না।’ (তিরমিজি: ৩৪৭৯)

আরও পড়ুন: প্রতিদিনের প্রয়োজনীয় ৪০ দোয়া

৫. গুনাহে অবিচল থেকে দোয়া করা
দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, গুনাহ ত্যাগ করে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা। অতএব, দোয়া কবুল হওয়ার জন্য গুনাহ ত্যাগ করে মহান আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করা উচিত। কারণ যারা নিজেকে বদলায় না, মহান আল্লাহও তাদের বদলান না। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না, যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে। আর কোনো সম্প্রদায়ের জন্য যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন, তবে তা রদ হওয়ার নয়। এবং তিনি ছাড়া কোনো অভিভাবক নেই।’ (সুরা রাদ: ১১)

উল্লেখ্য, দোয়া কখনও বিফলে যায় না। এই বিশ্বাস রেখে ইখলাসের সঙ্গে দোয়া করে যাওয়া উচিত। আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, কোনো মুসলিম পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ছাড়া যেকোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যেকোনো একটি দান করেন—১. হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা ২. তা পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা ৩. কোনো ক্ষতি (বিপদাপদ, সমস্যা ইত্যাদি) অপসারণ করেন।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৭১০, মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)

আল্লাহ তাআলা আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা করুন। সবাইকে যথাযথভাবে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।