ধর্ম ডেস্ক
২৫ অক্টোবর ২০২৪, ০৩:৩১ পিএম
প্রত্যেকটি বৈধ কাজকেই চাইলে সওয়াবে পরিণত করা যায়। এক্ষেত্রে শুধু সঠিক নিয়ত করা প্রয়োজন। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘সব আমলের প্রতিদান নিয়তের ওপর নির্ভরশীল।’ (বুখারি: ১) নিচে এমন কিছু কাজের কথা উল্লেখ করা হলো, যেগুলোতে সাধারণত সওয়াব লাভ হয় না। কিন্তু সঠিক নিয়তের কারণে অফুরন্ত সওয়াব লাভ হয়।
লেখাপড়া
প্রত্যেক মুমিনের ওপর প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করা ফরজ। এর মানে এই নয়, জাগতিক জ্ঞান অর্জন করা যাবে না; বরং তা বৈষয়িক উন্নতি ও অগ্রগতির স্বার্থে জরুরি। তবে এর পেছনে নেক নিয়ত থাকলে তা সওয়াবে পরিণত হয়। যেমন- মেডিকেল শিক্ষার্থী তার অধ্যয়নের মাধ্যমে ভবিষ্যতে মুসলিম জনগোষ্ঠীকে চিকিৎসা সেবা দেওয়ার নিয়তে পড়ালেখা করলে অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং শাখার শিক্ষার্থীরা যদি তাদের বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জ্ঞান দ্বারা ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর সেবা করার নিয়ত করেন, তাহলে তাদের সেই পড়াশোনা ইবাদত হিসেবে গণ্য হবে। অন্যথায় সওয়াব হবে না। যেমন- কেউ যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া পার্থিব কোনো উদ্দেশ্যে ধর্মীয় জ্ঞানও অর্জন করে, তাহলে জান্নাতে প্রবেশ করা তো দূরের কথা, জান্নাতের সুগন্ধিও সে পাবে না। (আবু দাউদ: ৩৬৬৪)
ঘুম
ঘুম মানুষের চীরায়ত অভ্যাস। বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে এই ঘুমও ইবাদতে পরিণত হয়। মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) ইয়েমেনের এক সফরে আবু মুসা আশআরি (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, আপনি কীভাবে কোরআন তেলাওয়াত করেন? আবু মুসা (রা.) জবাবে বলেন, আমি দাঁড়িয়ে, বসে, সওয়ারির পিঠে আরোহী অবস্থায় এবং কিছুক্ষণ পর পর কোরআন তেলাওয়াত করি। জবাব শুনে মুয়াজ (রা.) বলেন, আমি রাতের প্রথম দিকে ঘুমিয়ে পড়ি, তারপর (শেষভাগে কোরআন তেলাওয়াতের জন্য) দাঁড়িয়ে যাই। এভাবেই আমি আমার নিদ্রার সময়কেও সালাতে দাঁড়ানোর মতোই সওয়াবের বিষয় মনে করি। (বুখারি: ৪৩৪৪)
আরও পড়ুন:
পানাহার
বেঁচে থাকার তাগিদে খাবার খেতে হয়। বিশুদ্ধ নিয়তে একজন মুমিন তার এই খাবার গ্রহণকে ইবাদতে পরিণত করতে পারে। এই খাবার খেয়ে দেহে যে শক্তি অর্জন হবে তা যদি আল্লাহর ইবাদতের কাজে ব্যয় করার নিয়ত করে এবং আল্লাহর নামে আহার করে, তাহলে এই খাবার ইবাদতে পরিণত হবে। রাসুল (স.) বলেন, ‘মুমিনের সব কাজের জন্য প্রতিদান দেওয়া হয়, এমনকি নিজের মুখে খাবারের লোকমা তুলে নেওয়ার সময়েও (তাকে নেকি দেওয়া হয়)।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৫৩১)
পরিবারের জন্য খরচ
পরিবারের ভরণ-পোষণের জন্য যা কিছু ব্যয় করা হয়, এর মাধ্যমেও নেকি অর্জন সম্ভব। রাসুল (স.) বলেন, ‘যখন কোনো মুসলমান সওয়াবের আশায় পরিবারের জন্য খরচ করে, তখন তার জন্য সদকা করার সমতুল্য সওয়াব নির্ধারণ করা হয়।’ (মুসলিম: ১০০২)
চাকরি-ব্যবসা
জীবিকার জন্য চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী, ড্রাইভার, মৎস্যজীবী, নাপিত, কামার, কুমার, মিস্ত্রি, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর মানুষকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়। তাদের কাজগুলো নিছক কর্তব্য নয়, এর জন্য আল্লাহর কাছে আছে সীমাহীন পুরস্কার। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘একদিন আমরা রাসুল (স.)-এর সঙ্গে বসেছিলাম। হঠাৎ আমাদের সামনের দিক থেকে এক যুবকের আগমন ঘটল। আমরা তাকে দেখে বললাম, যদি এই যুবক তার যৌবন, উদ্দীপনা ও শক্তিমত্তা দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করত! (তাহলে কত উত্তম হতো)। বর্ণনাকারী বলেন, রাসুল (স.) আমাদের কথাবার্তা শুনে বলেন, নিহত হওয়া ছাড়া কি আল্লাহর পথে সংগ্রামের কোনো রাস্তা নেই? যে ব্যক্তি তার মাতা-পিতার জন্য কাজ করে, সে আল্লাহর পথেই কাজ করছে। যে তার পরিবারে জন্য শ্রম ব্যয় করছে, সে আল্লাহর পথেই পরিশ্রম করছে। আর যে ব্যক্তি নিজেকে নিষ্কলুষ রাখার জন্য মেহনত করছে, সে আল্লাহর পথেই মেহনত করছে। কিন্তু যে ব্যক্তি শুধু সম্পদ বৃদ্ধির জন্য পরিশ্রম করে, সে শয়তানের পথে পরিশ্রম করে। (বায়হাকি, শুআবুল ঈমান: ৯৮৯২)
গৃহস্থালি কাজ
নারীদের গৃহস্থালি কাজও বিশুদ্ধ নিয়তের কারণে ইবাদতে পরিণত হতে পারে। পরিবারের জন্য খরচ করলেও বিপুল সওয়াব লাভ হয়। একবার উম্মে সালামা (রা.) রাসুল (স.)-কে বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, (আমার প্রথম স্বামী) আবু সালামার সন্তানদের জন্য আমি খরচ করি, তাতে কি আমি সওয়াব পাব? আমি তাদের এভাবে ছেড়ে দিতে পারি না, তারা তো আমারই সন্তান। রাসুল (স.) বলেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তাদের জন্য যা কিছু দান করবে, তার বিনিময়ে সওয়াব পাবে। (মুসলিম: ১০০১)
উল্লেখ্য, নিয়ত আরবিতে বলা বা মুখে উচ্চারণ করার বিষয় নয়। নিয়ত অর্থ ইচ্ছা, অভিপ্রায়, উদ্দেশ্য, প্রত্যয়, সংকল্প ইত্যাদি। এটি মনের বিষয়। আল্লাহ তাআলার আনুগত্য, সন্তুষ্টি, নৈকট্য ও তাঁর নির্দেশ পালনার্থে কোনো কাজ করার দৃঢ় সংকল্পকে নিয়ত বলে। প্রত্যেক আমলের জন্য নিয়ত করতে হয়। ‘নিয়ত ছাড়া কোনো আমল গৃহীত হয় না।’ (সুনানে কুবরা: ৬/৪১)
আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে বিশুদ্ধ নিয়তের মাধ্যমে অভ্যাসমূলক এবং প্রয়োজনীয় প্রত্যেকটি বৈধ কাজ সঠিক নিয়তে সম্পাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।