ধর্ম ডেস্ক
১৮ অক্টোবর ২০২৪, ১২:১৮ পিএম
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব পদে আজ শুক্রবার (১৮ অক্টোবর) নিয়োগ পেয়েছেন মুফতি মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মালেক। তিনি দেশবরেণ্য একজন ইসলামি আইন বিশেষজ্ঞ ও বিখ্যাত হাদিস বিশারদ। ইসলামের বিভিন্ন বিষয়ে গবেষণামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য তিনি আলেমসমাজে আস্থা ও নির্ভরতার প্রতীক। ফিকাহ ও ইলমে হাদিসে তার পাণ্ডিত্যের কথা দেশ-বিদেশে স্বীকৃত। তার যেকোনো মত ও গবেষণাকে সবাই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করে থাকেন।
১৯৬৯ সালে কুমিল্লার লাকসাম উপজেলার সারাশপুরে জন্মগ্রহণ করেন মাওলানা আব্দুল মালেক। তার বাবা শামসুল হক একজন আলেম ছিলেন। মাওলানা আব্দুল মালেক চাঁদপুরের খিড়িহারা কওমি মাদ্রাসায় মিশকাত জামাত পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানের জামিয়া উলুমুল ইসলামিয়ায় দাওরায়ে হাদিস সমাপ্ত করেন।
এরপর তিনি এই মাদ্রাসার উচ্চতর হাদিস বিভাগে তিন বছর আব্দুর রশীদ নোমানীর তত্ত্বাবধানে হাদিস অধ্যয়ন করেন। ১৯৯২ সালে তিনি দারুল উলুম করাচিতে ভর্তি হয়ে দুই বছর তাকি উসমানির তত্ত্বাবধানে উচ্চতর ফিকহ ও ফতোয়া অধ্যয়ন করেন। ১৯৯৫ সাল থেকে ১৯৯৭ পর্যন্ত তিনি সৌদি আরবের আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহর তত্ত্বাবধানে হাদিসশাস্ত্রসহ অন্যান্য গবেষণামূলক কাজের গবেষণা সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
আরও পড়ুন: বায়তুল মোকাররমের নতুন খতিব আবদুল মালেক
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার সহপ্রতিষ্ঠাতা তিনি। বর্তমানে এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষাসচিব ও উচ্চতর হাদিস বিভাগের প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন। ১৯৯৮ সালে তার রচিত আল মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ প্রকাশিত হয়, যা বিভিন্ন দেশে পাঠ্যবই হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। মারকাযুদ দাওয়াহ আল ইসলামিয়ার মুখপত্র হিসেবে ২০০৫ সালে তার তত্ত্বাবধানে মাসিক আল কাউসার প্রকাশিত হয়। এ পত্রিকায় হাদিসশাস্ত্রের নবউদ্ভাবিত বিভ্রান্তির নিরসনমূলক রচনাসহ সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে তার লেখায় উপকৃত বাংলা ভাষাভাষী লাখো আলেম ও তালিবুল ইলম।
২০১২ সালে তিনি বাংলাদেশ কওমি মাদ্রাসা শিক্ষা কমিশনের সদস্য মনোনীত হন। ২০১৯ সালে তিনি ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের জাতীয় চাঁদ দেখা উপকমিটির প্রধান মনোনীত হন। এছাড়াও তিনি ভারতের ইসলামি ফিকহ একাডেমির সদস্য।
মুফতি মাওলানা আব্দুল মালেক মক্কা, মদিনা, পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্কসহ বিভিন্ন দেশ সফর করেছেন এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সেমিনারে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি বাংলা, আরবি, ইংরেজি ও উর্দু ভাষায় মোট ১৬টি গ্রন্থ রচনা করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে তালিবুল ইলমের পথ ও পাথেয়; উম্মাহর ঐক্য : পথ ও পন্থা; প্রচলিত ভুল; হাদিস ও সুন্নায় নামাজের পদ্ধতি; তারাবির রাকাতসংখ্যা ও ঈদের নামাজ; ইমান সবার আগে; তাছাউফ ও তত্ত্ববিশ্লেষণ; প্রচলিত জাল হাদিস; তাবলিগ জামাত : বর্তমান পরিস্থিতি ও উত্তরণের উপায়, দুই খণ্ডের প্রবন্ধ সমগ্র। আরবি গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে আল-মাদখাল ইলা উলুমিল হাদিসিশ শরিফ; আল-ওয়াজিজ ফি শাইয়ি মিন মুসত্বলাহিল হাদিসিশ শরিফ; মুহাদিরাত ফি উলুমিল হাদিস; ইনায়াতুর রহমান ফি আদাদি আয় আল-কোরআন; তাওতিদ আল উখওয়াত আল ইমানিয়াত ইত্যাদি। তার লিখিত কিতাব বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিশ্ববিদ্যালয় মানের প্রতিষ্ঠানে পাঠ্যভুক্ত। এ ছাড়া তার সম্পাদনা ও তত্ত্বাবধানে বেশ কিছু বই ইতিমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং প্রকাশের পথে রয়েছে আরও অনেক বই।
আরও পড়ুন: বায়তুল মোকাররমের ঘটনা নিয়ে যা বললেন খতিব রুহুল আমীন
ইলমি পরিবারের সন্তান মাওলানা আব্দুল মালেক ছোটবেলা থেকেই প্রখর মেধার অধিকারী। এখনো সেই অভ্যাসটি ধরে রেখেছেন সযতনে। দিন-রাতের বেশিরভাগ সময় পড়াশোনাতেই ব্যস্ত থাকেন। হাজার হাজার কিতাবের মধ্যে তার বসবাস। প্রাচীন ও আধুনিক হাজারো কিতাব তার নখদর্পণে। মদিনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আওয়ামা মাওলানা আব্দুল মালেককে ‘মুহাক্কিক আলেম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রশীদ নোমানী (রহ.) তাকে ফিকাহ পড়ার জন্য যখন মুফতি তাকি উসমানির হাতে তুলে দেন তখন এক পত্রে লেখেন ‘এই তালিবে ইলম কী পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন, কত গভীর ইলমের অধিকারী, তাকে পড়ালেই তা বুঝতে পারবেন।’ আরব বিশ্বের সমাদৃত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি দাবি করেন, আমার কাছ থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। অথচ আমি দেখি তার থেকে আমিই অনেক উপকৃত হয়েছি। সে তার অনেক উস্তাদের থেকেও এগিয়ে যাবে। সেই উস্তাদদের মধ্যে আমি হব প্রথমজন।’
মদিনা মুনাওয়ারার বিখ্যাত মুহাদ্দিস শায়খ আওয়ামা মাওলানা আব্দুল মালেককে ‘মুহাক্কিক আলেম’ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছেন। শিক্ষক মাওলানা আব্দুর রশীদ নোমানী (রহ.) তাকে ফিকাহ পড়ার জন্য যখন মুফতি তাকি উসমানির হাতে তুলে দেন তখন এক পত্রে লেখেন ‘এই তালিবে ইলম কী পরিমাণ যোগ্যতাসম্পন্ন, কত গভীর ইলমের অধিকারী, তাকে পড়ালেই তা বুঝতে পারবেন।’ আরব বিশ্বের সমাদৃত মুহাদ্দিস শায়খ আব্দুল ফাত্তাহ আবু গুদ্দাহ (রহ.) তার সম্পর্কে বলেন, ‘তিনি দাবি করেন, আমার কাছ থেকে তিনি উপকৃত হয়েছেন। অথচ আমি দেখি তার থেকে আমিই অনেক উপকৃত হয়েছি। সে তার অনেক উস্তাদের থেকেও এগিয়ে যাবে। সেই উস্তাদদের মধ্যে আমি হব প্রথমজন।’
ব্যক্তিগত জীবনে অত্যন্ত বিনয়ী, সজ্জন, অমায়িক ও সাদাসিধে প্রকৃতির। দ্বীন ও নীতি-আদর্শের প্রশ্নে কোনো ছাড় দেন না।