ধর্ম ডেস্ক
১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:৫৯ পিএম
ঈমান আনার পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হলো নামাজ। অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েদের ওপর নামাজ ফরজ নয়। তবু ছোট থেকে তাদের নামাজে উৎসাহিত করা, নামাজের নিয়ম-কানুন ও সুরা শেখানো অভিভাবকের কর্তব্য।
ছোটকাল থেকে নামাজে অভ্যস্থ না হলে, প্রশিক্ষণ না পেলে এমন মহান ইবাদত নিয়ে তার মধ্যে অবহেলা, অনীহা চলে আসতে পারে। যার পরিণতি খুব কঠিন। এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা করার সুযোগ ইসলামে নেই। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
শিশুদের নামাজ শেখানোর বয়স সম্পর্কে হাদিসে এসেছে, মুআজ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে হাবিব আল-জুহানি (রহ.)-এর সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদা আমরা মুআজ ইবনে আব্দুল্লাহর কাছে উপস্থিত হলাম। এ সময় তিনি তাঁর স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন, ‘ছোট ছেলেমেয়েদের কখন নামাজ পড়ার নির্দেশ দিতে হবে?’ তাঁর স্ত্রী বললেন, ‘আমাদের একজন পুরুষ ব্যক্তি এ সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে প্রশ্ন করলে তিনি বলেছেন, ‘যখন ছোট ছেলেমেয়েরা তাদের ডান ও বাঁ হাতের পার্থক্য নির্ণয়ে সক্ষম হবে, তখন থেকে তাদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেবে।’ (আবু দাউদ: ৪৯৭)
‘অর্থাৎ শিশু যখন ডান ও বামের মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে। আর এ যোগ্যতা সাধারণত সপ্তম বছরে পৌঁছার পরই হয়।’ (আউনুল মাবুদ: ২/১৬৫)
আরও পড়ুন: ইসলামে যে শিক্ষা শিশুদের অধিকার
শরিয়তের দৃষ্টিতে সন্তানেরা নামাজে অবহেলা করলে, তাদের শাস্তির বিধান রয়েছে। আমর ইবনে শুআইব (রহ.) থেকে পর্যায়ক্রমে তাঁর পিতা এবং দাদার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের সন্তানেরা সাত বছরে উপনীত হবে, তখন তাদের নামাজ পড়ার নির্দেশ দেবে এবং তাদের বয়স যখন ১০ বছর হবে, তখন নামাজ না পড়লে তাদের শাস্তি দেবে। আর তাদের (ছেলেমেয়েদের) বিছানা পৃথক করে দেবে।’ (আবু দাউদ: ৪৯৫)
নবীজির হাদিস থেকে বোঝা যায়, নামাজ যদিও বালেগ হওয়ার পর ফরজ হবে; কিন্তু নামাজের শিক্ষাদান করতে হবে সাত বছর বয়স থেকেই। কাজেই সাত বছর বয়সই যথারীতি শিক্ষাদানের উপযুক্ত সয়ম। এরপর বিলম্ব করা যেমন ঠিক নয়, তেমনি এর আগে চাপাচাপি করাও উচিত নয়।
আরও পড়ুন: শিশুর ইসলাম-প্রীতি বিকশিত হোক মসজিদ থেকে
উল্লেখ্য, অভিভাবকদের নিজেদের নামাজে উদাসীনতা থাকলে তা আগে ঠিক করে নেওয়া জরুরি। পবিত্র কোরআনে এসেছে, কেয়ামতের দিন জাহান্নামীদের জিজ্ঞাসা করা হবে— ‘কেন তোমরা সাকার নামক জাহান্নামে এলে? তারা বলবে, আমরা তো নামাজি ছিলাম না।’ (সুরা মুদ্দাসসির: ৪২-৪৩)
অতএব, জাহান্নাম থেকে বাঁচতে হলে আগে নিজের নামাজ ঠিক করতে হবে। তাছাড়া অভিভাবকরা নিজেরা ঠিক না হলে ছোটরা সহজে ঠিক হবে না। কারণ শিশুরা বড়দের অনুসরণ করে। আর নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী শিশুকে ইবাদতে সহায়তার জন্য অভিভাবকরা সওয়াব লাভ করবেন। (ইবনু তায়মিয়াহ, আল ফতোয়াল কুবরা: ৫/৩১৮; বিন বায, মাজমু ফতোয়া: ১৬/৩৭৭)