ধর্ম ডেস্ক
১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পিএম
রাগ ক্ষতি ছাড়া ভালো কিছু বয়ে আনে না। রাগের সময় নেওয়া সিদ্ধান্ত বরাবরই ভুল হয়। সামান্য বিষয়ে রাগ করা মূর্খ লোকের বৈশিষ্ট্য। কারণ মাত্রাতিরিক্ত রাগ মূলত নিজেরই ক্ষতি করে। শত্রুতা বৃদ্ধি পায়। মন ও শরীরের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। রাগ-নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হলেও যে এই কঠিন কাজটি করতে সক্ষম, তাকে প্রিয়নবী (স.) প্রকৃত বীর বলে আখ্যায়িত করেছেন।
হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন- لَيْسَ الشَّدِيدُ بِالصُّرَعَةِ، إِنَّمَا الشَّدِيدُ الَّذِي يَمْلِكُ نَفْسَهُ عِنْدَ الْغَضَبِ ‘সে প্রকৃত বীর নয়, যে কাউকে কুস্তিতে হারিয়ে দেয়; বরং প্রকৃত বীর সে-ই, যে রাগের সময় নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হয়।’ (সহিহ বুখারি: ৫৬৮৪)
রাগ নিয়ন্ত্রণ আল্লাহকে সন্তুষ্ট করে। যে ব্যক্তি রাগ নিয়ন্ত্রণ করে, সে আধ্যাত্মিকভাবে এবং জাগতিকভাবেও পুরস্কৃত হয়। নবীজি (স.) বলেন- مَا مِنْ جُرْعَةٍ أَعْظَمُ أَجْرًا عِنْدَ اللَّهِ مِنْ جُرْعَةِ غَيْظٍ كَظَمَهَا عَبْدٌ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ‘আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য বান্দার ক্রোধ সংবরণে যে মহান প্রতিদান রয়েছে, তা অন্য কিছুতে নেই।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৯)
রাগ নিয়ন্ত্রণকারীকে আল্লাহ তাআলা কেয়ামতের দিন বাছাই করে নেবেন এবং উত্তম প্রতিদান দিয়ে সন্তুষ্ট করবেন। হাদিসে এসেছে- مَنْ كَظَمَ غَيْظًا وَهُوَ قَادِرٌ عَلَى أَنْ يُنْفِذَهُ، دَعَاهُ اللَّهُ عَزَّ وَجَلَّ عَلَى رُءُوسِ الْخَلَائِقِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ حَتَّى يُخَيِّرَهُ اللَّهُ مِنَ الْحُورِ الْعِينِ مَا شَاءَ ‘যে ব্যক্তি নিজের ক্রোধ চরিতার্থ করার ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তা সংবরণ করে, আল্লাহ তাকে কিয়ামতের দিন সমগ্র সৃষ্টির সামনে ডেকে আনবেন এবং জান্নাতের যেকোনো হুর নিজের ইচ্ছামতো বেছে নেওয়ার অধিকার দেবেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৪১৮৬)
আল্লাহ তাআলা রাগ নিয়ন্ত্রণকারীদের প্রশংসায় আয়াত নাজিল করে বলেন- الَّذِينَ يُنْفِقُونَ فِي السَّرَّاءِ وَالضَّرَّاءِ وَالْكَاظِمِينَ الْغَيْظَ وَالْعَافِينَ عَنِ النَّاسِ وَاللَّهُ يُحِبُّ الْمُحْسِنِينَ ‘‘যারা রাগ সংবরণ করে আর মানুষের প্রতি ক্ষমা প্রদর্শন করে, (তারাই সৎকর্মশীল।) বস্তুতঃ সৎকর্মশীলদেরকেই আল্লাহ ভালোবাসেন।’ (সুরা ইমরান: ১৩৪)
রাগ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম পুরস্কার হলো- কেয়ামতের দিন আল্লাহর রাগ থেকে নিরাপদ থাকা যাবে। আব্দুল্লাহ বিন আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি বললাম-يَا رَسُولَ اللَّهِ مَا يَمْنَعُنِي مِنْ غَضَبِ اللَّهِ ‘হে আল্লাহর রাসুল (স.), কোন জিনিস আমাকে আল্লাহর ক্রোধ থেকে বাঁচিয়ে রাখবে। রাসুল (স.) বলেন- لا تغضب “তুমি রাগ করো না।” (সহিহ ইবনে হিব্বান: ২৯৬)
এক ব্যক্তি নবীজি (স.)-কে বললেন, ‘আপনি আমাকে অসিয়ত করুন। তিনি বললেন, ‘তুমি রাগ করো না’। ওই ব্যক্তি কয়েকবার তা বললেন। নবীজি (সা.) প্রতিবারই বললেন, ‘রাগ করো না’। (বুখারি, খণ্ড: ৮, অধ্যায়: ৭৩, হাদিস: ১৩৭)
তবে, আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, দ্বীনের প্রয়োজনে রাগ করা যাবে। হাদিসে আছে, আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘আল্লাহর রাসুল (স.) কখনো নিজের কোনো ব্যাপারে কারোর কাছ থেকে প্রতিশোধ গ্রহণ করেননি। তবে, মহান আল্লাহর নিষিদ্ধ কোনো কাজ করে ফেললে তার জন্য যথাযথ শাস্তির ব্যবস্থা করতেন।’ (আল জামে বাইনাস সাহিহাইন: ৩১৮৪)
মহানবী (স.) প্রিয় উম্মতকে দ্রুত রাগ-প্রশমনের চমৎকার কিছু উপায় বর্ণনা করেছেন। উপায়গুলো হলো-
১. অজু করা
গ্রহণযোগ্য এক হাদিসে প্রিয়নবী (স.) বলেছেন, ‘রাগ বা ক্রোধ শয়তানের তরফ থেকে আসে। শয়তান আগুনের তৈরি। আর আগুনকে পানি ঠাণ্ডা করে দেয়। যদি কারো ক্রোধ বা রাগ আসে তবে তার উচিত অজু করে নেওয়া।’ (বুখারি, মিশকাত, আবু দাউদ: ৪৭৮৬)
আরও পড়ুন: অজু করে ঘুমানোর বিস্ময়কর ফজিলত
২. চুপ থাকা
রাগের সময় চুপ থাকার কথাটি প্রিয়নবী (স.) তিনবার বলেছেন। চুপ থাকলে রাগ দমন হয়। রাগের ক্ষতি থেকে বাঁচা যায়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা শিক্ষা দাও এবং সহজ করো; কঠিন করো না। যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো; যখন তুমি রাগান্বিত হও তখন চুপ থাকো।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৭৮৬)
৩. মাটিতে শুয়ে পড়া
প্রিয়নবী (স.) আরও বলেছেন, ‘যদি দাঁড়ানো অবস্থায় কেউ রাগান্বিত হয়, তবে সে যেন বসে যায়। এতেও যদি রাগ না কমে তবে সে যেন (মাটিতে) শুয়ে পড়ে।’ (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি, মিশকাত, আবু দাউদ: ৪৭৮৪)
৪. তাউজ পড়া
রাগ শুরু হলে তখনই আল্লাহর কাছে রাগ নিয়ন্ত্রণে ‘তাউজ’ পড়ার কথা বলেছেন বিশ্বনবী (স.)। নবী করিম (সা.) বলেন, ‘আমি এমন একটি কালেমা জানি, যা পাঠ করলে ক্রোধ দূর হয়ে যায়। (আর তা হলো) “আউযু বিল্লাহি মিনাশ্ শাইত্বনির রাজিম” অর্থাৎ, আমি বিতাড়িত শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর কাছে পানাহ চাই।’ (মুসলিম: ৬৩১৭)
দুই ব্যক্তি নবীজি (স.)-এর পাশে বসে পরস্পর গালাগাল করছিল। তাদের একজনের চোখ লাল হয়ে উঠল ও গলার শিরা ফুলে গেল। তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, ‘‘আমি একটি বাক্য জানি, যদি সে তা পড়ে, তবে তার এ অবস্থা কেটে যাবে। বাক্যটি হলো- أعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْم উচ্চারণ: ‘আউজু বিল্লাহি মিনাশ শাইত্বানির রাঝিম।’ অর্থ: ‘আমি আল্লাহর কাছে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় চাই’। (মুসলিম: ৬৮১২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মাত্রাতিরিক্ত রাগ নিয়ন্ত্রণের তাওফিক দান করুন। সুন্নত আমলে মনোযোগী হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।