ধর্ম ডেস্ক
১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫:০৬ পিএম
শিক্ষক ও শিক্ষা দুটি পারস্পরিক সম্পর্কযুক্ত শব্দ। শিক্ষকের মাধ্যমেই শিক্ষার প্রচার ও প্রসার ঘটে থাকে। মানুষ সাধারণত শিক্ষক হয় ‘Derived knowledge’ বা সংগৃহীত জ্ঞানের মাধ্যমে। যে বিষয়ের ওপর বেশি জ্ঞান সংগৃহীত হয়, সে বিষয়েরই শিক্ষক হতে পারেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু নবীজি শিক্ষক হয়েছেন evealed knowledge’ বা নাজিলকৃত জ্ঞানের মাধ্যমে। সর্বজ্ঞানের ওপর সর্বশ্রেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন তিনি। সেই মহাপবিত্র ও নিখুঁত জ্ঞান বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে শিক্ষকরূপেই প্রিয়নবীজির আবির্ভাব ঘটেছিল। তাই তিনি বিশ্ব মানবতার মহান শিক্ষক।
শিক্ষক, সমাজসংস্কারক, রাষ্ট্রপতি, রাজনীতিবিদ, অর্থনীতিবিদসহ একজন পরিপূর্ণ মানুষ হিসেবে সব গুণের অধিকারী ছিলেন তিনি। সবকিছুর নেতৃত্বে তিনিই ছিলেন। কিন্তিু তিনি পৃথিবীতে রাষ্ট্রপ্রধান বা সেনাপতি কোনো নামেই নিজের পরিচয় তুলে ধরেননি। বরং তিনি নিজেকে শিক্ষক হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘আমি মানবতার জন্য শিক্ষকরূপে প্রেরিত হয়েছি।’
আল্লাহ তাআলাও বলেন- ‘হে মানুষেরা! আমি তোমাদের কাছে তোমাদেরই মধ্য থেকে একজন রাসুল পাঠিয়েছি। যে তোমাদের কাছে আমার আয়াত (কোরআন) পাঠ করে শোনায়, তোমাদের জীবন পরিশুদ্ধ করে, তোমাদের কিতাব ও হিকমত (কোরআন ও বিজ্ঞান) শিক্ষা দেয় এবং তোমরা যে বিষয়ে কিছুই জানতে না, সেটা শিক্ষা দেয়।’ (সুরা বাকারা : ১৫১)
আরও পড়ুন: নবীজির জীবনী পাঠ যে কারণে গুরুত্বপূর্ণ
বিশ্বনবী (স.) তাঁর কার্যকর ও বাস্তবমুখী শিক্ষানীতি ও পদ্ধতির মাধ্যমে আরবের মূর্খ ও বর্বর একটি জাতিকে পৃথিবীর নেতৃত্বের আসনে সমাসীন করান এবং ইসলামের মহান বার্তা ছড়িয়ে দেন পৃথিবীর আনাচে-কানাচে। যাঁর প্রতিটি কথা, কাজকর্মে ছিল কেবলই শিক্ষা। তাই তো হওয়ার কথা। কারণ তিনি ছিলেন পরিপূর্ণ ও পরিশুদ্ধ জ্ঞানের ভাণ্ডার আল কোরআনের ধারক-বাহক। অজ্ঞতা-অশান্তির চরম সময়ে শিক্ষার মশাল নিয়ে এসেছিলেন তিনি। তাঁর জ্ঞানের মশাল জ্বলে উঠেছিল শত দীপশিখায়, ছড়িয়ে পড়েছিল দিগন্তে। তাঁর আবির্ভাবে এবং কোরআনের চির নির্ভুল সত্যবাণী অবতীর্ণ হওয়ার ফলে অজ্ঞতার গাঢ় অন্ধকার কেটে গেল। বিশ্বমানবতা লাভ করল জ্ঞান-বিজ্ঞানের এক পূর্ণাঙ্গ জীবনদর্শন।
নিঃসন্দেহে রাসুলুল্লাহ (স.) ছিলেন সেই শিক্ষক, যাঁকে স্বয়ং আল্লাহ তাআলা সর্বোত্তম শিক্ষা ও শিষ্টাচার শিখিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘আমাকে আমার প্রভু শিক্ষা দিয়েছেন, সুতরাং আমাকে তিনি সর্বোত্তম শিক্ষা দিয়েছেন। আমার প্রভু আমাকে শিষ্টাচার শিখিয়েছেন সুতরাং তিনি সর্বোত্তম শিষ্টাচার শিখিয়েছেন।’
মহান আল্লাহ মুহাম্মদ (স.)-এর পরিচয় দিতে পবিত্র কোরআনে বলেন, ‘তিনিই সেই পবিত্র সত্তা। যিনি উম্মি লোকদের মধ্য থেকে তাদের একজনকে রাসুল করে পাঠিয়েছেন। যিনি তাদেরকে তার আয়াতসমূহ পাঠ করে শোনাবেন, তাদেরকে পবিত্র করবেন, তাদের শিক্ষা দেবেন কিতাব ও প্রজ্ঞা। যদিও ইতঃপূর্বে তারা ভ্রান্তিতে মগ্ন ছিল।’ (সুরা জুমা: ২)
আরও পড়ুন: বারবার গুনাহ করেও বান্দা যে কারণে ক্ষমা পায়
নবীজির দেওয়া নিখুঁত শিক্ষা মানুষ সহজে ধারণ করতে পারত। কারণ তাঁর শিক্ষা বিলাতেন নমনীয় ব্যবহার, উদার ও ভালোবাসাপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে। এ কারণে মানুষ তাঁর আনুগত্য স্বীকার করে ইসলামে দীক্ষিত হতো। তাঁর শিক্ষা পেয়ে আরবের অসভ্য সমাজে যে বিপ্লব ঘটেছিল, এর আগে বা পরের কোনো শিক্ষক বা আন্দোলনের নেতা দ্বারা তা সম্ভব হয়নি। সামাজিকতা, শিক্ষাদীক্ষা, রাজনীতি, যুদ্ধনীতিসহ সব দিক থেকে তাঁর হাতে গড়া সাহাবিরা ছিলেন অগ্রদূত।
মহাগ্রন্থ আল কোরআন সবরকম জ্ঞানের বিশুদ্ধ ভাণ্ডার। জ্ঞান-বিজ্ঞানের মূল উৎসই হলো কোরআন। ভ্রুণতত্ত্ববিদ্যা, শরীরতত্ত্ববিদ্যা, জীববিদ্যা, প্রাণিবিজ্ঞান, উদ্ভিদবিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান, ভূতত্ত্ববিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, জ্যোতির্বিজ্ঞান, সমাজবিজ্ঞান, ভাষাবিজ্ঞান, সমরবিজ্ঞান ও মহাকাশবিজ্ঞানসহ জীবনের বিভিন্ন শাখা ও প্রশাখাগত বিজ্ঞানের সর্বোৎকৃষ্ট সমাহার এই ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন। আর সেই পবিত্র ও নিখুঁত জ্ঞাভাণ্ডারের একটি বিন্দুও নবীজির জ্ঞানের বাইরে ছিল না। সেই মহানবীই (স.) আমাদের শিক্ষক, পথ নির্দেশক
মানবতার এই শিক্ষকের আবির্ভাব না হলে সেই জাহেলিয়্যাতেই ডুবে থাকত পুরো মানবজাতী। এখনও পৃথিবীতে সর্বশ্রেষ্ঠ এই শিক্ষকের কদর যারা বুঝেনাই তারা নিতান্তই অভাগা; বড়ই মূর্খ। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে নবীজির বিলানো ঐশী শিক্ষাকে ধারণ করার তাওফিক দান করুন। নবীজির শিক্ষা অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।