ধর্ম ডেস্ক
২৫ মে ২০২২, ০১:২৫ পিএম
গুজব ও মিথ্যার সয়লাব অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠছে দিন দিন। দুষ্কৃতকারীরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে গুজব ছড়ানোর হাতিয়ারে পরিণত করেছে। মানুষকে বিভ্রান্ত করতে তারা বেছে নিয়েছে এই প্ল্যাটফর্মটাকে। গুজবের ভয়াবহতা থেকে জাতিকে রক্ষা করতে কঠোর আইন ও সামাজিক সচেতনতা যেমন দরকার, তেমনি দরকার দীনি শিক্ষার প্রসার ও প্রয়োগ। ইসলামের দৃষ্টিতে মানবজীবনের প্রতিটি মুহূর্ত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরকালে মানুষকে তার প্রতিটি কাজের জন্য জবাবদিহি করতে হবে। কল্যাণশূন্য ও ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে—এমন কাজে লিপ্ত হতে পারে না একজন মুসলিম। গুজব এমন একটি কাজ, যা পুরোপুরিই ভিত্তিহীন ও অমঙ্গলজনক।
এতে মানুষের ভেতর ভয় ও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ইসলাম কোনো অবস্থায়ই গুজবকে সমর্থন করে না। ইসলামের শিক্ষা হলো, মানুষ সর্বতোভাবেই তা পরিহার করবে। প্রয়োজন ছাড়া কোনো কথা সে বলবে না। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে চুপ থাকে সে মুক্তি পায়।’(তিরমিজি: ২৫০১) মানুষকে বিভ্রান্ত ও আতঙ্কিত করা মুনাফিকের বৈশিষ্ট্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তারা তোমাদের সঙ্গে বের হতো, তবে শুধু বিভ্রান্তিই বৃদ্ধি পেত। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য তারা তোমাদের ভেতর ছোটাছুটি করত। তোমাদের ভেতর তাদের কথা শোনার (বিশ্বাস করার) লোক রয়েছে। আল্লাহ অত্যাচারীদের সম্পর্কে অবগত আছেন।’ (সুরা তাওবা: ৪৭)
আল্লাহ তাআলা গুজব রটানোকে শয়তানের কাজ বলেও অভিহিত করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘যখন তাদের কাছে নিরাপত্তা বা ভয়ের কোনো সংবাদ পৌঁছে, তখন তারা তা প্রচার করে। যদি তারা তা (সংবাদটি) রাসুল বা তাদের দায়িত্বশীল ব্যক্তির দৃষ্টিগোচর করত, তবে তাদের (দায়িত্বপ্রাপ্ত) অনুসন্ধানকারীরা তার যথার্থতা নির্ণয় করতে পারত। তোমাদের প্রতি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকত, তবে সামান্যসংখ্যক ব্যতীত সবাই শয়তানের অনুসরণ করত।’ (সুরা নিসা: ৮৩) কোনো সংবাদ যাচাই-বাছাই না করে প্রচার করা গুজব ছড়িয়ে পড়ার পেছনে অন্যতম ভূমিকা পালন করে। ইসলাম তাদেরকে মিথ্যুক সাব্যস্ত করেছে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘সব শোনা কথা প্রচার ব্যক্তির মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য যথেষ্ট।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৯৯২)
পবিত্র কোরআনে ভুল তথ্য অনুসরণ করতে নিষেধ করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই, তার অনুসরণ করো না। নিশ্চয়ই কান, চোখ, অন্তর, এগুলোর প্রতিটি সম্পর্কে কৈফিয়ত তলব করা হবে।’ (সুরা বনি ইসরাঈল: ৩৬) ইসলামের নির্দেশনা হলো, সংবাদ প্রচারের আগে অবশ্যই তা যাচাই করে নিতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মুমিনগণ! তোমাদের কাছে যদি কোনো ফাসেক ব্যক্তি কোনো সংবাদ নিয়ে আসে, তবে তা যাচাই করো। অজ্ঞতাবশত কোনো গোষ্ঠীকে আক্রান্ত করার আগেই, (না হলে) তোমরা কৃতকর্মের জন্য লজ্জিত হবে।’ (সুরা হুজরাত: ৬)
আবার গুজব ছড়ানোর কারণে যদি সমাজে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা বা গুনাহের প্রচলন হয়ে যায়, এর দায়ভারও যিনি গুজব ছড়িয়েছেন তার ওপর এসে বর্তাবে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি সৎপথের দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান সওয়াব পাবে, অথচ অনুসরণকারীর সওয়াব কমানো হবে না। অপরদিকে যে ব্যক্তি ভ্রষ্টতার দিকে ডাকবে সে তার অনুসারীর সমান পাপে জর্জরিত হবে, তার অনুসারীর পাপ মোটেও কমানো হবে না।’ (আবু দাউদ: ৪৬০৯) গুজব ছড়ানোর পরিণাম যে কত ভয়াবহ, তা ওসব দুষ্কৃতকারীদের কল্পনায়ও আসে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আর যে ব্যক্তি কোনো অপরাধ বা পাপ অর্জন করে, অতঃপর কোনো নির্দোষ ব্যক্তির ওপর তা আরোপ করে, তাহলে সে তো মিথ্যা অপবাদ ও প্রকাশ্য গুনাহের বোঝা বহন করল।’ (সুরা নিসা: ১১২)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে গুজবের গুনাহ সম্পর্কে সঠিক উপলব্ধি দান করুন। আমাদের সবাইকে এই ঘৃণ্য কাজ থেকে বিরত রাখুন। আমিন।