images

ইসলাম

অন্যের জন্য দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে যা পাবেন

ধর্ম ডেস্ক

০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০২:৪৪ পিএম

অনুপস্থিত কারো জন্য দোয়া করা বড় ফজিলতপূর্ণ আমল। হাদিসে এ ব্যাপারে অনেক উৎসাহমূলক বক্তব্য রয়েছে। অনুপস্থিত ভাইয়ের জন্য কোনো দোয়া করলে সঙ্গে সঙ্গে যা পাবেন তা হলো- একই দোয়া আপনার জন্য করবেন একজন ফেরেশতা। ফেরেশতারা নিষ্পাপ ও পূত-পবিত্র। তারা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ ও ইবাদতে মগ্ন থাকেন। তাই তাদের দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।

হজরত আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের জন্য তার পশ্চাতে দোয়া করে, তখন তার (মাথার কাছে নিযুক্ত) একজন ফেরেশতা তাঁকে লক্ষ্য করে বলে, তোমার জন্যও এমনই হোক’। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩২)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, ‘কোনো মুসলিম তার ভাইয়ের অবর্তমানে তার জন্য নেক দোয়া করলে তা কবুল হয়। তার মাথার কাছে একজন ফেরেশতা নিয়োজিত থাকে, যখনই সে তার ভাইয়ের জন্য দোয়া করে, তখনই ওই ফেরেশতা বলেন, ‘আমিন! তোমার জন্যও এমনই হোক”। (সহিহ মুসলিম: ২৭৩২)

আরও পড়ুন: নবীজি অসুস্থ ব্যক্তিকে যে দোয়া পড়ে ফুঁ দিতেন

খুব সহজ ও চমৎকার একটি আমল। ধরুন, আপনি অসুস্থ, ওই অবস্থায় আপনার অসুস্থ ভাইদের জন্য দোয়া করুন। এতে মিলবে কী? হাদিসের ভাষ্যমতে, আপনার জন্যও অনুরূপ দোয়া করবেন ফেরেশতারা। ধরুন, আপনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তো আপনার যেসব ভাই আপনার মতো নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন, তাদের জন্য আন্তরিকভাবে দোয়া করতে থাকুন, এর বিনিময়ে ফেরেশতারা আপনার নিরাপত্তার জন্য দোয়া করবেন। 

মুসলিম ভাইয়ের জন্য দোয়া করার আরেকটি বড় উপকার হচ্ছে এতে সীমাহীন সওয়াব আমলনামায় লেখা হয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মুসলিম পুরুষ ও মুসলিম নারীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, প্রত্যেক মুসলমানের বিপরীতে একটি করে সওয়াব মহান আল্লাহ তার আমলনামায় লিখে দেন।’ (তাবরানি: ৩/২৩৪)  

এছাড়াও অন্যের জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করতে পারা মুমিন হৃদয়ের স্বচ্ছতার প্রমাণ বহন করে। কারো হৃদয়ে কুটিলতা থাকলে সে অন্যের জন্য দোয়া করতে পারে না, যা মুমিনের বৈশিষ্ট্যের বিপরীত। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘মুমিন ব্যক্তি ঠাট্টা-বিদ্রুপকারী, ভর্ৎসনাকারী, অভিশাপকারী, অশ্লীলভাষী ও মন্দ স্বভাবের হতে পারে না।’ (সুনানে তিরমিজি: ১৯৭৭)

আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া

অন্যের জন্য যে দোয়া করবেন
অনুপস্থিত ভাইদের জন্য যেকোনো দোয়া করতে পারেন। মহানবী (স.) সকল মুমিন নারী-পুরুষের জন্য ক্ষমা, বরকত ও কল্যাণের দোয়া করতেন। কেননা আল্লাহ তাঁর রাসুলকে আয়াত নাজিল করে বলেছেন, ‘(হে রাসুল! আপনি) ক্ষমা প্রার্থনা করুন, আপনার নিজের জন্য এবং মুমিন পুরুষ ও নারীদের জন্য।’ (সুরা মুহাম্মদ: ১৯)

এজন্য সবরকম দোয়া করা যাবে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত এই দোয়াটি করা যায়— رَبَّنَا اغۡفِرۡ لَنَا وَ لِاِخۡوَانِنَا الَّذِیۡنَ سَبَقُوۡنَا بِالۡاِیۡمَانِ وَ لَا تَجۡعَلۡ فِیۡ قُلُوۡبِنَا غِلًّا لِّلَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا رَبَّنَاۤ اِنَّکَ رَءُوۡفٌ رَّحِیۡمٌ উচ্চারণ: ‘রাব্বানাগফির লানা ওয়ালিয়িহওয়া-লিনাল্লাজীনা সাবাক্বুনা- বিল ই-মানি ওয়ালা তাজআল ফী ক্বুলু-বিনা গিল্লাল্লিল্লাজীনা আ-মানূ রাব্বানা ইন্নাকা গাফূরুর রাহীম।’ অর্থ: ‘হে আমাদের রব! আমাদের এবং ঈমানে অগ্রণী আমাদের ভাইদের ক্ষমা করুন। আর মুমিনদের বিরুদ্ধে আমাদের অন্তরে বিদ্বেষ রাখবেন না। হে আমাদের রব! আপনি তো দয়ালু, পরম দয়ালু।’ (সুরা হাশর: ১০)

ইবরাহিম (আ.)-এর জবানে সব মুসলমানের জন্য আরেকটি সুন্দর দোয়া হলো— رَبَّنَا اغۡفِرۡ لِیۡ وَ لِوَالِدَیَّ وَ لِلۡمُؤۡمِنِیۡنَ یَوۡمَ یَقُوۡمُ الۡحِسَابُ উচ্চারণ: ‘রব্বানাগ-ফিরলি ওয়ালি ওয়ালি-দাইয়্যা ওয়ালিল মু’মিনিনা ইয়াওমা ইয়াকুমুল হিসাব।’ অর্থ : হে আমাদের রব! আমাকে, আমার মাতা-পিতাকে এবং সব ঈমানদারকে আপনি সেই দিন ক্ষমা করে দিন, যেদিন হিসাব কায়েম করা হবে। (সুরা ইবরাহিম: ৪১)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল মুসলিমের জন্য দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।