images

ইসলাম

গুনাহগার বান্দা যেভাবে ডাকলে আল্লাহ ক্ষমা করে দেন

ধর্ম ডেস্ক

২৭ আগস্ট ২০২৪, ০২:৪২ পিএম

মানুষ গুনাহ করে এটি স্বাভাবিক। শয়তানের ধোঁকায় হোক বা নফসের কারণে হোক। তবে গুনাহ করার পর মনে আফসোস সৃষ্টি না হওয়া মুমিনের জন্য অস্বাভাবিক। এমন অবস্থা থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া জরুরি। কারণ আল্লাহ বলেছেন- ‘দুর্ভোগ ওই লোকদের জন্য, যাদের অন্তর আল্লাহর স্মরণ থেকে কঠোর। তারা সুস্পষ্ট ভ্রান্তির মধ্যে রয়েছে।’ (সুরা জুমার: ২২)

গুনাহ করে ফেললে যারা আক্ষেপ করেন, আফসোস করেন, ক্ষমা পাওয়ার ব্যাকুলতায় ইস্তেগফার করেন, সেজদায় লুটিয়ে পড়ে অশ্রুসিক্ত হন, তারা মুমিন। এটি তাদের ঈমানের প্রমাণ। আবু উমামা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জিজ্ঞেস করল, ‘ঈমান কী হে আল্লাহর রাসুল! (অর্থাৎ আমি কীভাবে বুঝব যে, আমার মাঝে ঈমান আছে?) তখন রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, যখন তোমার নেক আমল তোমাকে আনন্দিত করবে এবং তোমার গুনাহ তোমাকে কষ্টে নিপতিত করবে (গুনাহের কারণে তুমি কষ্ট পেতে থাকবে), তাহলে (বুঝবে) তুমি মুমিন। (মুসনাদে আহমদ: ২২১৬৬; মুসতাদরাকে হাকেম: ৩৩)

আরও পড়ুন: মুমিনের গুনাহ লিখতে চান না ফেরেশতা

গুনাহগার বান্দা যখন গুনাহ মাফের জন্য চটফট করেন, তাওবা-ইস্তেগফারে অশ্রুসজল হন, তখন গাফুরুর রাহিমের ক্ষমার সাগরে ঢেউ খেলে যায়। হাদিসে এসেছে, তখনই বান্দার সকল গুনাহ ধুয়ে মুছে সাফ করে দেওয়া হয়। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মুসলিম যখন কোনো গুনাহ করে ফেলে, অতঃপর অজু করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং উক্ত পাপের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তখন আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দেন। এরপর নবীজি (স.) এ দুটি আয়াত তেলাওয়াত করেন ১. ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সুরা নিসা: ১১০) ২. ‘এবং তারা সেই সকল লোক, যারা কখনও কোনো অশ্লীল কাজ করে ফেললে বা (অন্য কোনোভাবে) নিজেদের প্রতি জুলুম করলে, সঙ্গে সঙ্গে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং তার ফলশ্রুতিতে নিজেদের গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে..’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৫) (সূত্র: মুসনাদে আহমদ: ৪৭; সহিহ ইবনে হিব্বান: ৬২৩; মুসনাদে আবু ইয়ালা: ১৩)

অতএব, অন্তরে আল্লাহভীতি জাগ্রত করতে হবে, যেন গুনাহের প্রবণতা কমে যায়। এরপরও যদি গুনাহ হয়ে যায় বিলম্ব না করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ অবশ্যই সেসব মানুষের তাওবা কবুল করবেন, যারা ভুলবশত মন্দ কাজ করে এবং সত্বর তাওবা করে। এরাই তারা, যাদের তাওবা আল্লাহ কবুল করেন। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। তাওবা তাদের জন্য নয়, যারা আজীবন মন্দ কাজ করে, অবশেষে তাদের কারো মৃত্যু উপস্থিত হলো; সে বলে, আমি এখন তাওবা করছি। এবং তাদের জন্যও নয়, যাদের মৃত্যু হয় কাফের অবস্থায়। এরা তারাই, যাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তির ব্যবস্থা।’ (সুরা নিসা: ১৭-১৮)

আরও পড়ুন: নেকি খেয়ে ফেলে যে ৬ গুনাহ 

মূলত আল্লাহ তাআলা বান্দাকে অনেক বেশি ভালোবাসেন। সব সৃষ্টির প্রতি তাঁর দয়া ও ভালোবাসা বিদ্যমান। এ সম্পর্কে ইরশাদ হয়েছে- إِنَّ ٱللَّهَ بِٱلنَّاسِ لَرَءُوفٞ رَّحِيمٞ ‘নিশ্চয় আল্লাহ মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সুরা বাকারা: ১৪৩)। অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে-  وَ رَحۡمَتِیۡ وَسِعَتۡ کُلَّ شَیۡءٍ ‘আমার দয়া তো প্রত্যেক বস্তুকে ঘিরে রয়েছে।’ (সুরা আরাফ: ১৫৬)

রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘মা তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার উপর তদাপেক্ষা অধিক দয়ালু।’ (সহিহ বুখারি: ৭/৭৫, কিতাবুল আদাব: ৫৯৯৯; সহিহ মুসলিম, ৪/২১০৯, কিতাবুত তাওবা: ২৭৫৪) আর আল্লাহ তাআলার ভালোবাসার শান ও মর্যাদা আলাদা। তাঁর ভালোবাসায় কোনো খাদ নেই।

বান্দা যখন অন্তর থেকে গুনাহ মাফ চায়, গুনাহ না করার ওয়াদা করে, তখন তিনি ক্ষমা না করার প্রশ্নই আসে না। মূলত এটিই তিনি পছন্দ করেন। গুনাহ কমবেশি আমরা সবাই করি, কিন্তু সবাই তাওবা-ইস্তেগফার করি না। আমরা অনেকে মনে করি, আমরা পাপের সাগরে ডুবে গেছি, আল্লাহ আমাদের হয়তো ক্ষমা করবেন না; এগুলো ভুল ধারণা। তিনি দয়ার সাগর। বান্দার এক বিন্দু অনুশোচনার অশ্রু তিনি সহ্য করতে পারেন না। কখনও এক ফোঁটা অশ্রুতেই তিনি বান্দার জীবনের সকল গুনাহ ধুয়ে সাফ করে দেন; জাহান্নামকে হারাম করে দেন চিরতরে। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলার ভয়ে যে লোক কাঁদে, তার জাহান্নামে যাওয়া এরূপ অসম্ভব যেমন অসম্ভব দোহন করা দুধ আবার ওলানের মধ্যে ফিরে যাওয়া। আল্লাহ তাআলার পথের ধুলা এবং জাহান্নামের ধোঁয়া কখনো একত্র হবে না (আল্লাহ তাআলার পথের পথিক জাহান্নামে যাবে না)। (তিরমিজি: ১৬৩৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) আরও বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হও, আল্লাহ তাআলা তার বান্দার তাওবাতে এরচেয়েও বেশি খুশি হন।’ (বুখারি: ৬৭০৯) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে তাকওয়া দান করুন। গুনাহ থেকে ক্ষমা পেতে একনিষ্ঠভাবে অশ্রুসিক্ত হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।