images

ইসলাম

পরকালসহ ৬ বিষয় বিশ্বাস না করলে সে মুসলিম নয়

ধর্ম ডেস্ক

২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৯:৫৬ পিএম

ঈমান অর্থ দৃঢ় বিশ্বাস, স্বীকার করা, স্বীকৃতি দেওয়া ইত্যাদি। ওই সত্য আকিদাকে স্বীকার করা ও বিশ্বাস করার নাম ঈমান, যা ওহির (কোরআন ও সুন্নাহর) মাধ্যমে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করার পর ঈমান আনার কিছুই নেই। মুমিন বলতেই আল্লাহ ও রাসুল (স.)-এর ওপর আস্থার ভিত্তিতে অদৃশ্য বিষয়সহ নির্দিষ্ট বিষয়াবলীর ওপর সুদৃঢ় বিশ্বাস রাখবে ও স্বীকার করবে। এরকম ৬ বিষয়ের ওপর আজীবন বিশ্বাস থাকা জরুরি। মূলত এগুলো ঈমানের স্তম্ভ। বিষয়গুলো হলো—

১. আল্লাহর ওপর ঈমান
এ কথা বিশ্বাস করা যে আল্লাহ এক, অদ্বিতীয় ও অতুলনীয়। তিনি কারো বাবা নন, ছেলেও নন। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।  তিনিই সব কিছুর সৃষ্টিকর্তা, রক্ষাকর্তা ও পালনকর্তা, বিধানদাতা। আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তাঁর একান্ত বৈশিষ্ট্যসমূহে কাউকে শরিক করা যাবে না—না কোনো মতবাদকে, না কোনো নেতা বা দলকে, না রাষ্ট্র বা সম্প্রদায়কে। তাওহিদকে পূর্ণরূপে ধারণ করা ও শিরক থেকে পরিপূর্ণ বেঁচে থাকা ঈমানের সবচেয়ে বড় অংশ। আল্লাহর কাছে মুশরিকের ঈমান ঈমানই নয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তারা তো আদিষ্ট হয়েছিল আল্লাহর আনুগত্যে বিশুদ্ধচিত্ত হয়ে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদত করতে এবং সালাত কায়েম করতে ও জাকাত দিতে। এটাই সঠিক দ্বীন। কিতাবিদের মধ্যে যারা কুফরি করে, তারা এবং মুশরিকরা জাহান্নামের আগুনে স্থায়ীভাবে অবস্থান করবে; তারাই সৃষ্টির অধম।’ (সুরা বায়্যিনাহ: ৫-৬)

২. ফেরেশতাদের ওপর ঈমান
এই বিশ্বাস রাখতে হবে যে ফেরেশতারা আল্লাহ তাআলার এক শক্তিশালী সৃষ্টি। তাঁরা নুরের তৈরি, যাদের মানুষ স্থূল দৃষ্টিতে দেখতে পায় না। আল্লাহ তাঁদের যা আদেশ করেন, তাঁরা সঙ্গে সঙ্গে তা পালন করেন। কখনও তাঁরা আল্লাহর আদেশের বিরুদ্ধাচারণ করেন না। ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আনা ঈমানের ছয়টি স্তম্ভের অন্যতম (সুরা নিসা: ১৩৬; সহিহ মুসলিম: ৮; মেশকাত: ২)

আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

৩. আসমানি কিতাবের ওপর ঈমান
আল্লাহ তাআলা মানুষের পথ প্রদর্শনের জন্য নবী-রাসুলদের ওপর আসমানি কিতাব নাজিল করেছেন। বড় আসমানি কিতাবগুলো হচ্ছে—কোরআন, ইঞ্জিল, জাবুর ও তাওরাত। বিভিন্ন নবীর ওপর ছোট ছোট আসমানি কিতাবও অবতীর্ণ হয়েছে; যেগুলোকে বলা হয় ‘সহিফা’। সবগুলো আসমানি কিতাবের ওপর বিশ্বাস রাখা ঈমানের অংশ। যারা আসমানি কিতাবের প্রতি বিশ্বাস রাখবে না তারা পথভ্রষ্ট। (সুরা বাকারা: ১৩৬; সুরা নিসা: ১৩) কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার পর পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের ওপর আমল করা রহিত হয়ে গেছে।’ (সুরা আনআম: ১৯) কোরআনের কিছু অংশ বিশ্বাস, কিছু অংশ অবিশ্বাস করা কুফরি। (সুরা বাকারা: ৮৫) কোরআন কেয়ামত পর্যন্ত অবিকৃত থাকবে। (সুরা হিজর: ৯)

৪. রাসুলদের ওপর ঈমান
আল্লাহ তাআলা যুগে যুগে অনেক নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন। সব রাসুল সত্যবাদী, সত্যায়নকারী, পুণ্যবান, সঠিক পথের দিশারি, তাকওয়াবান ও বিশ্বস্ত। নবী-রাসুলরা নিষ্পাপ। আল্লাহ তাঁদের যা কিছু দিয়ে পাঠিয়েছেন তাঁরা তা পরিপূর্ণভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। আর সর্বশেষ রাসুল হচ্ছেন মুহাম্মদ (স.)। নবী- রাসুলদের ওপর বিশ্বাস না রাখলে ঈমানওয়ালা হওয়া যায় না। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘রাসুল তার নিকট তার রবের পক্ষ থেকে নাজিলকৃত বিষয়ের প্রতি ঈমান এনেছে, আর মুমিনগণও। প্রত্যেকে ঈমান এনেছে আল্লাহর ওপর, তাঁর ফেরেশতাকুল, কিতাবসমূহ ও তাঁর রাসুলগণের ওপর, আমরা তাঁর রাসুলগণের কারো মধ্যে তারতম্য করি না। আর তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মানলাম। হে আমাদের রব! আমরা আপনারই ক্ষমা প্রার্থনা করি, আর আপনার দিকেই প্রত্যাবর্তনস্থল।’ (সুরা বাকারা: ২৮৫) এক হাদিসে জিবরাঈল (আ.)-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘ঈমান হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, আখেরাত ও ভালো-মন্দ তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।’ (বুখারি: ৫০; মুসলিম: ১)

আরও পড়ুন: নবী-রাসুলদের ব্যাপারে ১০ বিষয়ে বিশ্বাস রাখা জরুরি

৫. পরকালে বিশ্বাস
অন্তরে দৃঢ়ভাবে এ বিশ্বাস থাকতে হবে যে কেয়ামত সংঘটিত হবে। এরপর আল্লাহ তাআলা সব প্রাণীকে পুনরুত্থিত করবেন। সব মানুষ ও জ্বিন পুনরুত্থানের পর নিজ নিজ কৃতকর্মের ফল ভোগ করবে। শারীরিক ও আত্মিক উভয়ভাবে পুনরুত্থান এবং হাশরের ময়দানে বিচার ও হিসাব-নিকাশ সত্য। (সুরা জুমার: ৬৮; সুরা ইয়াসিন: ৭৮-৭৯) নেককারদের আমলনামা ডান হাতে এবং বদকারদের আমলনামা বাঁ হাতে দেওয়া হবে। (সুরা হাক্কাহ: ১৯-২৯; সুরা কাহাফ: ৪৯) আমাদের নবী মুহাম্মদ (স.)-এর সুপারিশ এবং পরবর্তীতে আল্লাহর হুকুমে ফেরেশতা, নবীগণ ও সৎ মুমিনদের সুপারিশ অনিবার্য সত্য। (বুখারি: ৪৪৭৬; মুসলিম: ৩২২)  আমাদের নবী (স.) কাউসার নামক নহর থেকে নেককার উম্মতকে পানি পান করাবেন। (সুরা কাউসার: ১; বুখারি: ৬৫৭৯; মুসলিম: ২২৯৫) জাহান্নামের ওপর দিয়ে চুলের চেয়েও চিকন ও তরবারির চেয়েও ধারালো পুল পার হওয়া অনিবার্য সত্য। নেককাররা তাদের আমল অনুপাতে দ্রুতগতিতে পার হবে। আর গুনাহগাররা হোঁচট খেয়ে পড়ে যাবে, অথবা তাদের টেনে জাহান্নামে ফেলে দেওয়া হবে। (বুখারি: ৮০৬; মুসলিম: ২৯৯) এক হাদিসে জিবরাঈল (আ.)-এর প্রশ্নের উত্তরে রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘ঈমান হলো আল্লাহ, ফেরেশতাগণ, কিতাবসমূহ, রাসুলগণ, আখেরাত ও ভালো-মন্দ তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।’ নেককাররা আল্লাহর রহমতে জান্নাতে যাবে এবং বদকাররা আল্লাহর ন্যায়বিচারে জাহান্নামে যাবে। গুনাহগার ঈমানদারদের কাফির বলা হবে না এবং তারা চিরজাহান্নামিও হবে না। (সুরা নিসা: ৪৮) কবরে সওয়াল-জবাব অনিবার্য সত্য। (তিরমিজি: ১০৭১) পরকালে মুমিনরা আল্লাহ তাআলাকে স্বচক্ষে দেখবে। (সুরা ক্বিয়ামাহ: ২২-২৩; বুখারি: ৫৫৪)

৬. তাকদিরে বিশ্বাস
ভালো-মন্দ তাকদিরের ওপর বিশ্বাস রাখা ছাড়া ঈমানদার হওয়ার সুযোগ নেই। সব সৃষ্টির ব্যাপারে লাওহে মাহফুজে আগে থেকেই শুরু-শেষ, বিস্তারিত কুদরতি কলম দ্বারা লিপিবদ্ধ ও নির্ধারিত আছে। ভালো-মন্দ তাকদির আল্লাহ তাআলা আলিমুল গাইব হিসেবে আগে থেকেই লিখে রাখলেও মানুষ কোনো কাজে বাধ্য ও অক্ষম নয়, বরং আল্লাহ তাআলা সবাইকে নিজ নিজ ইচ্ছাশক্তি দান করেছেন, যা কাজে লাগিয়ে সে  ভালো-মন্দ কাজ করে থাকে। এ জন্যই ভালো কাজে পুরস্কার এবং মন্দ কাজে শাস্তির বিধান রয়েছে। তাকদির নিয়ে বেশি গবেষণা ও বাড়াবাড়ি নিষেধ। কেননা তা আল্লাহ তাআলার কুদরতের একটি রহস্য। (সুরা আনআম: ৫৯; মুসলিম: ১; বুখারি : ৪৯৪৫; তিরমিজি: ২১৩৩)