ধর্ম ডেস্ক
০৬ আগস্ট ২০২৪, ০৪:০৭ পিএম
ইসলামে সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ স্থান মসজিদ। এই মসজিদকেন্দ্রিক যাবতীয় আমল ও কাজকর্মের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হলেন ইমাম। এরপর মুয়াজ্জিন ও খাদেম। ইমাম শব্দের অর্থ পথপ্রদর্শক, নেতা ও পরিচালক। ইমাম শুধু মসজিদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি নন বরং মুসলিম সমাজেরও নেতা তিনি। ইমামতি ছাড়াও মুসলমানদের যাবতীয় ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠানে তিনি নেতৃত্ব দিয়ে থাকেন। মুয়াজ্জিন ও খাদেমের মর্যাদাও কম নয়।
ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘তিন প্রকারের মানুষ কেয়ামতের দিন মেশকের টিলার ওপর থাকবে। যাঁদের মর্যাদা দেখে পূর্ববর্তী ও পরবর্তী সবাই ঈর্ষান্বিত হবে। এক হলো, সেই ইমাম, যার প্রতি মুক্তাদিরা সন্তুষ্ট; দ্বিতীয়ত, সেই মুয়াজ্জিন যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের আজান দেয়; তৃতীয়ত, এমন দাস যে আল্লাহ ও তার মালিকের হক আদায় করে।’ (মুসনাদে আহমদ: ৪৭৯৯)
আরও পড়ুন: জানাজা পড়ানোর বেশি হকদার কে, মসজিদের ইমাম নাকি মৃতের ওলি?
ইমাম
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘ইমাম হলেন (সালাতের সার্বিক) জিম্মাদার। আর মুয়াজ্জিন হলেন আমানতদার। হে আল্লাহ, ইমামদের সঠিক পথ প্রদর্শন করুন এবং মুয়াজ্জিনদের ক্ষমা করুন।’ (তিরমিজি: ২০৭) ইমাম সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার অধিকার রাখেন। নবীজি (স.) বলেন, ‘তোমরা মানুষের স্তরভেদ অনুপাতে তাদের সম্মান দাও।’ (সুনানে আবু দাউদ : ৪৮৪২)
মুয়াজ্জিন
আজানের সঙ্গে সম্পৃক্ততার কারণে মুয়াজ্জিনের মর্যাদাও অনেক উঁচু। মুয়াজ্জিনের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে। এক হাদিসে আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, ‘জ্বিন ও মানুষসহ যারাই মুয়াজ্জিনের আওয়াজ শোনে তারা সবাই কিয়ামতের দিন তাঁর পক্ষে সাক্ষ্য দেবে।’ (বুখারি: ৬০৯) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন মুয়াজ্জিনদের মাথা সবার থেকে উঁচু থাকবে।’ (মুসলিম: ৩৮৭)
আরও পড়ুন: মসজিদের গাছের ফল ইমাম-মুয়াজ্জিন খেতে পারবে?
মসজিদের খাদেম
মসজিদের খেদমত, পরিচ্ছন্নতা ও মসজিদ আবর্জনামুক্ত করা অনেক সওয়াবের কাজ। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন : ‘যে ব্যক্তি মসজিদ থেকে আবর্জনা সরিয়ে নেয়, আল্লাহ তাআলা তার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি করেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৭৫৭)
একজন হাবশি নারী রাসুলুল্লাহ (স.)-এর মসজিদের সেবা করতেন, মসজিদের আবর্জনা ও ধুলাবালি পরিষ্কার করতেন। কয়েক দিন তাকে দেখা যায়নি। রাসুলুল্লাহ (স.) জিজ্ঞেস করলেন, মহিলা কোথায়? আবু বকর (রা.) বললেন, মহিলাটি মারা গেছে এবং আমরা তাকে কবর দিয়েছি। তিনি বললেন, আমাকে মৃত্যুসংবাদ দিলে না কেন? সাহাবিরা জিজ্ঞাসা করলেন, তখন গভীর রাত ছিল, তাই আপনাকে কষ্ট দেওয়া আমাদের পছন্দ হয়নি। তিনি বলেন, নারীর কবর কোথায়? সাহাবায়ে কেরাম কবর দেখালে রাসুলুল্লাহ (স.) ওই নারীর কবরে জানাজা আদায় করেন। (বুখারি: ১৩৩৭)
আরও পড়ুন: মসজিদে শুধু বসে থাকলে যে সওয়াব
মসজিদের মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের এতটা মর্যাদা ও গুরুত্ব থাকা সত্ত্বেও আজ প্রায়ই দেখা যায় যে মসজিদের দায়িত্বশীলগণ তাদের প্রতিনিয়ত হেয়প্রতিপন্ন করছে। এটা দুঃখজনক। তাই পরিচালনা কমিটির কর্তব্য হলো, নিজেদের শাসক হিসেবে বিবেচনা না করে মসজিদের খাদেম মনে করা। মুয়াজ্জিন ও খাদেমদের সঙ্গে সহানুভূতি, ভালোবাসা ও দয়ার আচরণ করা। তাদের আত্মসম্মানের প্রতি বিশেষ যত্ন নেওয়া। আল্লাহ আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।