images

ইসলাম

আল্লাহ তাঁর অবাধ্যদের কতদিন অবকাশ দেন

ধর্ম ডেস্ক

০২ আগস্ট ২০২৪, ০৩:০৪ পিএম

আল্লাহ ভালো করেই জানেন যে, সব বান্দা তাঁর অনুগত হবে না। কারা অবাধ্য হবে তা-ও তাঁর জ্ঞানসীমার ভেতরেই রয়েছে। তবুও তিনি সবাইকে পৃথিবীতে বসবাসের সুযোগ দেন। অবাধ্য-অনুগত সবাইকে দয়াও করেন। কারণ তিনি রহমান। এই সুযোগে কিছু বান্দা অবাধ্যতার সীমা লঙ্ঘন করে বসে। তবুও মহান আল্লাহ ওসব বান্দাদের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত ছাড় দিয়ে থাকেন। এর কারণ কী?

কারণ হলো- মহান আল্লাহ তাঁর প্রতিটি বান্দাকেই পাপ থেকে ফিরে আসার সুযোগ দেন। এই ছাড় পেয়ে যারা নিজেকে শুধরে নেয় এবং তাওবা করে, তিনি তাদের ক্ষমা করেন। কারণ তাঁর আরেক নাম গাফুর বা ক্ষমাশীল। তিনি বস্তুত ক্ষমা করতেই ভালোবাসেন। কিন্তু যারা ছাড় পেয়ে পাপের সাগরে ডুব দেয়, নির্দিষ্ট সময় পরে তাদের পাকড়াও করা হয়।

তখন আর আল্লাহর আজাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার সুযোগ থাকে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘বলো, আমার প্রতিপালক অবশ্যই প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা, পাপ, অন্যায়, বিরোধিতা, আল্লাহর অংশীদার স্থির করা যে ব্যাপারে তিনি কোনো প্রমাণ নাজিল করেননি, আর আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের অজ্ঞতাপ্রসূত কথাবার্তা নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন। আর প্রত্যেক জাতির এক নির্দিষ্ট সময় আছে। সুতরাং যখন তাদের সময় আসবে, তখন তারা মুহূর্তকালও বিলম্ব বা ত্বরা করতে পারবে না।’ (সুরা আরাফ: ৩৩-৩৪)

আরও পড়ুন: আল্লাহর রাগের চেয়ে রহমত বেশি

আমরা অনেকে অবিশ্বাসীদের দৌরাত্ম্য দেখে হতাশ হয়ে বলি, এরা এত অবাধ্যতার পরও কোনো ধরনের শাস্তির সম্মুখীন হচ্ছে না কেন। উল্টো মুমিনদেরই তাদের কাছে জিম্মি হয়ে থাকতে হয়। আল্লাহ কেন তাদের এভাবে অত্যাচার করার সুযোগ দিচ্ছেন। এই প্রশ্নে উত্তর পবিত্র কোরআনেই রয়েছে।

আল্লাহ বলেন, ‘এমন একটা সময় আসবে যখন অবিশ্বাসীরা আক্ষেপ করে বলবে, ‘হায়, আমরা যদি মুসলিম হয়ে যেতাম!’ ছেড়ে দিন ওদেরকে, ওরা খেতে থাক আর ভোগ করতে থাক, আর (মিথ্যা) আশা ওদেরকে উদাসীনতায় ডুবিয়ে রাখুক, শিগগিরই ওরা (ওদের আমালের পরিণতি) জানতে পারবে। আমি কোনো জনপদকে তার নির্দিষ্ট কাল পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত ধ্বংস করিনি। কোনো জাতিই তাদের সুনির্ধারিত সময় থেকে আগে বাড়তে পারে না আর পিছাতেও পারে না।’ (সুরা হিজর: ২-৫)

আরও পড়ুন: মৃত্যুর দিনক্ষণ গোপন রাখা হয়েছে যে কারণে

অর্থাৎ অবিশ্বাসী ও জালিমদের দৌরাত্ম্য চিরস্থায়ী নয়, তাদেরকে মিথ্যা আশা, অহংকার ও উদাসীনতা অন্ধ করে রেখেছে, যার জন্য পরকালে তারা আফসোস করবে। এর বিপরীতে যেসব মুমিন একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর ইবাদত করে, আল্লাহর আদেশ মানতে গিয়ে কখনো কখনো শারীরিক-মানসিক অত্যাচারের শিকার হয়, অবিশ্বাসী ও পাপীদের তাচ্ছিল্যের শিকার হয়, তাদের ব্যাপারে নবীজি (স.) বলেছেন, ‘জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক হলো। জান্নাত বলল, গরিব-মিসকিন ও দুর্বল ব্যক্তি আমার মধ্যে প্রবেশ করবে।

জাহান্নাম বলল, যত স্বৈরাচারী জালিম ও অহংকারীরা আমার মধ্যে প্রবেশ করবে। আল্লাহ তাআলা জাহান্নামকে বলেন, তুই আমার আজাব, আমি তোর দ্বারা যার থেকে ইচ্ছা প্রতিশোধ গ্রহণ করব। তিনি জান্নাতকে বলেন, তুমি আমার রহমত, আমি তোমার দ্বারা যাকে ইচ্ছা উপকৃত করব।’ (তিরমিজি: ২৫৬১)

অতএব পাপিষ্ঠদের দৌরাত্ম্যে হতাশ হওয়ার কিছু নেই, প্রকৃত সফল তো তারা, যারা পরকালীন সফলতা পাবে। মুমিনদের কাজ হলো মহান আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থেকে পরকাল সমৃদ্ধ করা। মৃত্যু বা চূড়ান্ত আজাব আসার আগেই কৃত পাপ থেকে মহান আল্লাহর কাছে তাওবা করা। এটাই প্রকৃত বুদ্ধিমানের কাজ। মহান আল্লাহ আমাদের সুবুদ্ধি দান করুন। মহান আল্লাহর অনুগত হয়ে সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।