ধর্ম ডেস্ক
০২ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩২ পিএম
ঈমানের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমল হলো নামাজ। দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যথাসময়ে আদায় করা ফরজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নির্ধারিত সময়ে নামাজ আদায় করা মুমিনের অবশ্য কর্তব্য।’ (সুরা নিসা: ১০৩)
নির্ধারিত ওয়াক্তে ফরজ বা ওয়াজিব নামাজ পড়তে না পারলে, সময় চলে যাওয়ার পর তা আদায় করাকে ‘কাজা’ বলা হয়। মুসলিম উম্মাহর সব বরেণ্য মুজতাহিদ ইমাম এ ব্যাপারে একমত যে ফরজ নামাজ নির্ধারিত সময়ে আদায় করতে না পারলে পরে তা কাজা করা আবশ্যক। ইমাম কুরতুবি (রহ.) বলেন, সব আলেম এ কথার ওপর ঐকমত্য পোষণ করেন যে জেনে-শুনে ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করলে তা কাজা করা জরুরি। (তাফসিরে কুরতুবি: ১/১৭৮)
শাফেয়ি মাজহাবের প্রসিদ্ধ আলেম মুহাম্মদ ইবনে আবদুর রহমান (রহ.) বলেন, ছুটে যাওয়া নামাজের কাজা করা বিষয়ে সব ফকিহ একমত পোষণ করেন। (রহমতুল উম্মাহ, পৃষ্ঠা-৪৬) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহ.) বলেন, যদি কারো দায়িত্বে কাজা নামাজের পরিমাণ অনেক বেশি হয়, তবে সুন্নত নামাজে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে ছুটে যাওয়া ফরজ নামাজগুলোর কাজা করাই উত্তম। (ফতোয়া ইবনে তাইমিয়া: ২২/১০৪)
আরও পড়ুন: ফজরের কাজা কখন পড়বেন, সুন্নত পড়তে হবে কি?
নামাজের কাজার কাফফারা হিসেবে তাওবা করা যথেষ্ট নয়। বরং কাজা আদায় করতেই হবে। এ কারণেই হাদিসে দেখা যায়, রাসুল (স.) নামাজ কাজা হলে তা আদায় করে নিতেন ও অন্যকে আদায় করতে বলতেন। রাসুল (স.) বলেন- مَنْ نَسِيَ صَلَاةً فَلْيُصَلِّهَا إِذَا ذَكَرَهَا، لَا كَفَّارَةَ لَهَا إِلَّا ذَلِكَ ‘কেউ যদি নামাজের কথা ভুলে যায়, সে যেন স্মরণ হওয়া মাত্রই তা আদায় করে নেয়। কেননা, তার কাফফারা একমাত্র সেই নামাজই।’ (সহিহ মুসলিম: ৬৮৪)
এমনকি নামাজ কাজা থাকলে মৃত্যুর আগে ফিদিয়া দেওয়ার ওসিয়ত করতে হবে। নামাজের ফিদিয়া হলো- প্রতিদিনকার কাজা করা বিতিরসহ ছয় ওয়াক্ত নামাজ হিসেব করে প্রত্যেক ওয়াক্তের জন্য পৌনে দুই সের গম বা আটা অথবা এর বাজার মূল্য গরীব মিসকিনকে মালিক বানিয়ে দান করে দিতে হবে। অথবা প্রতি ওয়াক্তের বদলে একজন গরীবকে দুই বেলা তৃপ্তি সহকারে খানা খাওয়াতে হবে। যা সদকায়ে ফিতর এর টাকা পরিমাণ হয়। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৭২)
আরও পড়ুন: আছরের পর কাজা পড়া যায়?
এক ওয়াক্ত নামাজ কাজা হলে তা পরবর্তী নামাজের আগে পড়ে নিবে। (দ্র: বুখারি: ৫৯৬) অর্থাৎ ফজর ছুটে গেলে ঘুম থেকে উঠার পরপরই তা আদায় করা উত্তম অথবা জোহরের আগে আদায় করবে। জোহর ছুটে গেলে আছরের আগে, আছর ছুটে গেলে মাগরিবের আগে, মাগরিব ছুটে গেলে এশার আগে এভাবে আদায় করা।
দীর্ঘদিনের কাজা নামাজ আদায়ের নিয়ম হলো- কাজা নামাজগুলো একটা অনুমান করে কোন নামাজ কত ওয়াক্ত কাজা হয়েছে তা নির্ধারণ করে নিবে। তারপর যত দ্রুত এবং যত বেশি সম্ভব এই কাজাগুলো আদায় করা উচিত। প্রতি ওয়াক্তে কয়েক ওয়াক্তের কাজা আদায় করলেও সমস্যা নেই। এছাড়া সুবিধামতো যখন যে নামাজের কাজা আদায়ের সুযোগ হবে, তখনই তা আদায় করা যাবে।
উল্লেখ্য, সুন্নত নামাজের কাজা নেই, কেবল ফরজ ও বিতিরের নামাজেরই কাজা আদায় করা যায়। (বুখারি: ৫৯৬; আল ইসতিজকার: ১/৩০২; আদ্দুররুল মুখতার, সাঈদ, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা-৬৮; ফতোয়া দারুল উলুম, জাকারিয়া, খণ্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৩৩২)