ধর্ম ডেস্ক
২৬ জুন ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম
দোয়া মুমিনের হাতিয়ার। দোয়া কবুলের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা অসম্ভবকেও সম্ভব করে দেন। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আমার কাছে দোয়া করো; আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব’(সূরা মুমিন: ৬০)। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না।’ (তিরমিজি: ২১৩৯)
দোয়া কবুলের জন্য কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে। কোরআন-হাদিসের আলোকে যে বিষয়গুলো মেনে দোয়া করলে আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করেন, এখানে সেগুলো তুলে ধরা হলো।
১. দৃঢ় বিশ্বাস
আল্লাহ তাআলা দোয়া কবুল করবেন—এ কথার ওপর দৃঢ় সংকল্প সহকারে দোয়া করতে হবে। হাদিসে এসেছে, ‘আল্লাহ তোমার দোয়ার জবাব দেবেন, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হয়ে আল্লাহকে ডাকো। তবে, এটাও জেনে রাখো যে, গাফেল (অমনোযোগী ও অসাড়) অন্তরের দোয়ার জবাব দেওয়া হয় না।’ (তিরমিজি: ৭৪৭৯)
২. সংশয় নয়
দোয়া কবুলের ব্যাপারে মনে কোনো দ্বিধা রাখা যাবে না। সংশয় রাখার কোনো কারণও নেই। কারণ, আল্লাহ তাআলা শয়তানের দোয়াও কবুল করেছেন। শয়তান দোয়া করেছিল, তাকে যেন পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দেওয়া হয়। ‘সে (ইবলিস) বলল, ‘আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন’। তিনি (আল্লাহ) বললেন, ‘নিশ্চয় তুই অবকাশপ্রাপ্তদের অন্তর্ভুক্ত’ (সুরা আরাফ: ১৪-১৫)
৩. ইখলাস জরুরি
ইখলাস বা একনিষ্ঠতা থাকলে আল্লাহ সবার দোয়া কবুল করেন। অবিশ্বাসীরাও (মুশরিক) যদি বিপদে পড়ে আল্লাহকে ডাকেন, তখন তিনি তাদের ডাকেও সাড়া দেন। এ প্রসঙ্গে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন তারা কোনো জলযানে আরোহন করে, তারা আল্লাহকে একনিষ্ঠভাবে ডাকে। অতঃপর তিনি যখন নিরাপদে তাদের স্থলে পৌঁছে দেন, তখন তারা তাঁর সঙ্গে শরিক করতে থাকে।’ (সুরা আনকাবুত: ৬৫)
আরও পড়ুন: ফরজ নামাজের পর মাসনুন দোয়াগুলো জেনে নিন
আল্লাহ জানেন যে, তাদেরকে নিরাপদে তীরে পৌঁছে দেওয়ার পর তারা আবারও শিরক করবে। তারপরও তাদের দোয়া আল্লাহ কবুল করেছেন। কারণ, তারা ক্ষণিকের জন্য হলেও আল্লাহকে ডেকেছে ইখলাস বা একনিষ্ঠতার সঙ্গে। এই উপায়ে দোয়া করলে যদি মুশরিকের দোয়াও কবুল করা হয়, তাহলে তাওহিদের অনুসারীদের দোয়া ফিরিয়ে দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তাই দরকার ইখলাস বা একনিষ্ঠতা।
৪. দোয়ার আগে-পরে দরুদ পাঠ করা
দোয়া কবুল হওয়ার জন্য শুরু ও শেষে এবং মাঝখানে দরুদ পাঠ করা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বিষয়ে আবু সুলায়মান আদ-দারানি সুন্দর একটি কথা বলেছেন যে ‘নবীর প্রতি দরুদ এমনিতেই কবুল হয়। আর আল্লাহ কোনো দোয়ার শুরু এবং শেষ অংশ কবুল করবেন, মাঝখানের অংশ প্রত্যাখ্যান করবেন, এমনটি হতে পারে না।’ তাই কবুলের জন্য দোয়ার আগে ও পরে দরুদ পড়া গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবীজি (স.) বলেছেন, ‘যখন কেউ দোয়া করবে, তখন সে যেন তার পবিত্র প্রতিপালকের প্রশংসা বর্ণনাযোগে ও আমার প্রতি দরুদ ও সালাম পেশ করে দোয়া আরম্ভ করে, তারপর যা ইচ্ছা (যথারীতি) প্রার্থনা করে।’ (সুনানে আবু দাউদ: ১৪৮১; তিরমিজি: ৩৪৭৬) আরেক হাদিসে এসেছে, ‘নবী (স.)-এর ওপর দরুদ না পড়া পর্যন্ত যেকোনো দোয়া আটকে থাকে।’ (আল-মুজামুল আওসাত: ১/২২০)
আরও পড়ুন: অন্তরের যে সৌন্দর্যে আল্লাহ খুশি হন
৫. হতাশ হওয়া যাবে না
অতীতের কোনো দোয়া এখনও কবুল হয়নি বলে মনে হতাশা রাখা যাবে না এবং হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না। বরং দোয়ার পরিমাণ বাড়িয়ে দিতে হবে। এমনটি বলা যাবে না যে, আমি এত দোয়া করলাম, অথচ আল্লাহ কবুল করলেন না। এভাবে বান্দা মূলত নিজের দোয়াকে নিজেই ধ্বংস করে ফেলে। সালাফদের মধ্যে দেখা যায়, কেউ ২০ বছর ধরে একটি জিনিস চেয়ে পাননি, তারপরও তাঁরা আশা ছেড়ে দেননি। অবিরত দোয়া করে গেছেন এই আশায় যে, একদিন আল্লাহ তাআলা তাঁর দোয়া কবুল করবেন।
উল্লেখ্য, হারাম ভক্ষণকারীর দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না। তাই হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয় ইত্যাদি পরিহার করা জরুরি। হালাল ভক্ষণকারীর দোয়া কখনো বিফলে যায় না। হাদিসে এসেছে, ‘কোনো মুসলিম দোয়া করার সময় কোনো গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এ তিনটির কোনো একটি দান করেন। ১. হয়ত তাকে তার কাঙ্ক্ষিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন। ২. অথবা তা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন। ৩. অথবা তার কোনো অকল্যাণ বা বিপদাপদ তার থেকে দূরে করে দেন। সহাবিরা বলেন, তাহলে তো আমরা অনেক বেশি লাভ করব। তিনি বলেন, আল্লাহ এর চেয়েও বেশি দেন। (আত-তারগিব: ১৬৩৩)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে একনিষ্ঠভাবে কাকুতি-মিনতি করে বুকভরা আশা নিয়ে তাঁর কাছে দোয়া করার তাওফিক দান করুন। আমিন।