ধর্ম ডেস্ক
১৩ জুন ২০২৪, ০৭:২২ পিএম
জিলহজ মাসের ৯ তারিখ ইয়াওমে আরাফা বা আরাফাতের দিন। এ বছর সৌদিতে এই দিনটি পড়বে ১৫ জুন, শনিবারে। আর আমাদের বাংলাদেশে দিনটি হলো ১৬ জুন, রোববার। অর্থাৎ যারা বাংলাদেশে অবস্থান করছেন, তারা শনিবার শেষরাতে সেহেরি খেয়ে রোববার রোজা রাখলে আরাফার দিনের রোজার বিশেষ সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
প্রশ্ন হলো- ইয়াওমে আরাফার রোজা কি ২টি রাখা উত্তম? এর উত্তর হলো- ২টি রোজা রাখলে সওয়াব বেশি—এতে সন্দেহ নেই। কিন্তু আরাফার দিনের রোজা মূলত একটিই। হাদিসে আরাফার দিনের একটি রোজার কথাই এসেছে। যারা বলছেন, একদিন রোজা রাখলে হবে না, তাদের কথা সঠিক নয়। আরাফার দিনে একটি রোজা রাখলে বান্দার দুই বছরের গুনাহ মাফ হয় বলে হাদিস রয়েছে। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আরাফার দিনের রোজার বিষয়ে আমি আল্লাহর কাছে প্রত্যাশা রাখি যে, তিনি আগের এক বছরের এবং পরের এক বছরের গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। (সহিহ মুসলিম: ১১৬২)
অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.)-এর জনৈকা স্ত্রী বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ৯ জিলহজ তারিখে রোজা রাখতেন।’ (আবু দাউদ: ২৪৩৭, নাসায়ি: ২৩৭২)
তবে কেউ চাইলে দুইটিও রাখতে পারেন। যেমন কেউ হজের দিন এবং নিজ দেশের সঙ্গে মিলিয়ে আরও একটি বাড়তি রোজা রাখতে পারেন। এতে বাড়তি রোজাটির সওয়াবও পাবেন। সেই হিসেবে ২টি রোজা রাখা অবশ্যই ভালো। তবে, আরাফার রোজা দুইটি বললে ভুল হবে।
কারণ, হাদিসে আরাফার দিন বলতে জিলহজের ৯ তারিখ উদ্দেশ্য। কোনো হাদিসেই এর অর্থ আরাফাতের মাঠ বোঝানো হয়নি। তাই এদিন রোজা রাখা মাঠের আমল নয়, বরং ৯ জিলহজের আমল। তাই তো হাজিদের জন্য আরাফাতের দিন রোজা না রাখাই উত্তম।
উম্মুল ফজল বিনতে হারেছ বলেন, তার নিকট কতক লোক ইয়াওমে আরাফায় রাসুল (স.)-এর রোজার ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করছিল। কেউ কেউ বলছিল, তিনি রোজা আছেন। আর কেউ বলছিল, তিনি রোজা নেই। উম্মুল ফজল একটি পেয়ালাতে দুধ পাঠালেন। নবীজি তখন উটের উপর ছিলেন। তিনি দুধ পান করলেন। (সহিহ মুসলিম: ১১২৩)
অনেকে মনে করেন, আরাফার রোজার সম্পর্ক মাঠের সঙ্গে। অর্থাৎ হাজিরা যেদিন আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন সেদিন রোজা রাখলেই হাদিসে বর্ণিত বিশেষ ফজিলত পাওয়া যাবে। এই ধারণা থেকে অনেকে আরাফার রোজা দুইটি বলে থাকেন। আসলে এটি সঠিক নয়।
হজের প্রধান রোকন উকুফে আরাফা তথা আরাফায় অবস্থান। ৯ জিলহজ তা আদায় করতে হয় বিধায় এই দিনের নাম ‘ইয়াওমে আরাফা’। মাঠে অবস্থানের কারণে ইয়াওমে আরাফা নয়। এছাড়াও গোটা মুসলিম উম্মাহর ইজমা আছে যে, ইয়াওমে আরাফার পরের দিনটিই ইয়াওমুন নাহর বা কোরবানির দিন।
আরও পড়ুন: তাশরিকের দিন শুরু হচ্ছে কবে
পৃথিবীর অনেক দেশে আরবের একদিন আগেও চাঁদ দেখা যায়। সেক্ষেত্রে যেদিন আরবের ৯ তারিখ, সেসব দেশের তারিখ হবে ১০ জিলহজ তথা ঈদুল আজহা। তাদের যদি আরবের সঙ্গে আরাফার রোজা রাখতে হয়, ঈদের দিন রোজা রাখতে হবে। এটি হাস্যকর। কেননা ঈদের দিন রোজা রাখা হারাম।
এছাড়াও যদি প্রশ্ন করা হয় যে, ইসলাম শুধু একবিংশ শতাব্দীর যোগাযোগমাধ্যমের সহজলভ্যতার ধর্মই নয়, বরং সর্বযুগের সব মানুষের ধর্ম। সেক্ষেত্রে যারা কোনো কারণে যোগাযোগমাধ্যম থেকে দূরে, তারা কিভাবে আরবের আরাফার দিন জানতে পারবে? এই প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই।
তাই সৌদি আরবে আরাফায় অবস্থানের সঙ্গে মিলিয়ে সব দেশে আরাফার রোজা রাখা ভুল। এমনকি সব দেশে সেটি সম্ভবও নয়। তাই সঠিক হলো- নিজ নিজ দেশের তারিখ অনুসারে মুসলমানরা ৯ জিলহজ তারিখে আরাফার রোজা রাখবেন। অবশ্য সৌদির আরাফার দিনের সঙ্গে মিলিয়ে দুটি রাখলে সমস্যা নেই। বরং আরাফার রোজার ফজিলতের বাইরে আরও একটি বাড়তি রোজার সওয়াব পাওয়া যাবে। যা আগেই বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জিলহজ মাসে নফল রোজা ও নামাজসহ বেশি বেশি নেক আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।