ধর্ম ডেস্ক
১১ জুন ২০২৪, ০৮:৩৮ পিএম
হজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও ফরজ ইবাদত। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন- وَلِلهِ عَلَی النَّاسِ حِجُّ الْبَیْتِ مَنِ اسْتَطَاعَ اِلَیْهِ سَبِیْلًا ‘মানুষের মধ্যে যারা সেখানে (বায়তুল্লাহ) পৌঁছার সামর্থ্য রাখে তাদের উপর আল্লাহর উদ্দেশ্যে এ গৃহের হজ করা ফরজ। (সুরা আলে ইমরান: ৯৭)
কারো ওপর হজ ফরজ হলে দেরি না করে দ্রুত আদায় করে নেওয়া উচিত। ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ফরজ হজ আদায়ে তোমরা বিলম্ব করো না। কারণ তোমাদের কারো জানা নেই তোমাদের পরবর্তী জীবনে কী ঘটবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ২৮৬৭; সুনানে কুবরা বায়হাকি: ৪/৩৪০)
প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ ও মক্কায় গিয়ে হজকার্য সম্পন্ন করে ফিরে আসার সামর্থ্য রাখে, এমন প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীদের জন্য জীবনে একবার হজ করা ফরজ। তবে নারীদের জন্য স্বামী বা মাহরাম পুরুষ সঙ্গে থাকা জরুরি। (ফতোয়ায়ে শামি: ২/৪৫৫)
তবে অসুস্থতা বা যেকোনো ওজরের কারণে কেউ ফরজ হজ আদায় করতে না পারলে তার জন্য অন্য কাউকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করানো অথবা নিজের জীবদ্দশায় বদলি হজের অসিয়ত করা উচিত।
কিন্তু কেউ যদি সেই অসিয়ত করার আগেই ইন্তেকাল করেন, তাহলে তার ওয়ারিশদের কর্তব্য হলো- তার সম্পদ থেকে তার পক্ষ থেকে কাউকে দিয়ে বদলি হজ আদায় করানো। আর সেই ব্যক্তির সম্পদ না থাকলে বালেগ ওয়ারিসদের স্বতঃস্ফূর্ত ব্যয়ের মাধ্যমে এই হজ করানো। এর মাধ্যমে মৃত ব্যক্তির জিম্মায় থাকা ফরজ হজ আদায় হওয়ার আশা করা যায়। তবে এক্ষেত্রে যারা উদ্যোগ গ্রহণ করবেন, তাদের জিম্মায় থাকবে হজের ব্যয়ভার। মৃত ব্যক্তির ইজমালি সম্পদ থেকে তা নেওয়া যাবে না।
আবদুল্লাহ ইবনে আববাস (রা.) বলেন, এক মহিলা রাসুল (স.)-এর কাছে এসে বলল, আমার মা মান্নত করেছিলেন যে, তিনি হজ করবেন। কিন্তু তা পূর্ণ করার আগেই মারা গেছেন। (এখন আমার করণীয় কী?) রাসুলুল্লাহ (স.) বললেন, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করে নাও। বল তো, যদি তোমার মা কারো নিকট ঋণী হতেন তুমি কি তার ঋণ পরিশোধ করতে না? মহিলাটি বলল, হ্যাঁ। আল্লাহর রাসুল (স.) বললেন, তোমরা আল্লাহর ঋণ পরিশোধ করো। কেননা তিনি প্রাপ্য পাওয়ার অধিক হকদার। (সহিহ বুখারি: ১/২৪৯; আলমানাসিক: ৪২, ৪৩২; গুনইয়াতুন নাসিক: ২০)
মৃত ব্যক্তির যদি হজের উদ্দেশ্যে জমানো টাকা বা সম্পদ থাকে, ওই টাকা অসিয়ত করতে না পারার কারণে ওয়ারিসদের মালিকানায় চলে যাবে। অর্থাৎ তা মিরাসি (উত্তরাধিকার) সম্পত্তি হিসেবে গণ্য হবে। এ অবস্থায় ওয়ারিসদের উচিত হবে- তার পক্ষ থেকে বদলি হজ করিয়ে দেওয়া। যদিও তা আবশ্যক নয়।
এই মিরাসি সম্পত্তি থেকে হজের খরচ নিতে হলে— সকল ওয়ারিসের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন লাগবে। আর কোনো নাবালেগ ওয়ারিস থাকলে তার অংশ থেকে নেওয়া যাবে না। (বাদায়েউস সানায়ে: ২/৪৬৯; ফতোয়ায়ে খানিয়া : ১/৩০৮; ফতোয়ায়ে তাতারখানিয়া : ৩/৬৫৯; গুনইয়াতুন নাসিক, পৃষ্ঠা-৩২২)