ধর্ম ডেস্ক
১৯ মে ২০২৪, ০৪:৪৩ পিএম
দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের মধ্যে ফজরের নামাজ বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ফজর নামে একটি সুরা রয়েছে। ওই সুরার শুরুতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘শপথ ফজরের।’ (সুরা ফজর: ১)
রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মুনাফিকদের জন্য ফজর ও এশার চেয়ে বেশি ভারি কোনো নামাজ নেই। এ দুই নামাজের ফজিলত যদি তারা জানত, তাহলে হামাগুড়ি দিয়ে হলেও তারা উপস্থিত হতো।’ (বুখারি: ৬৫৭) অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি দুটি শীতল সময়ে (ফজর ও আছর) সালাত আদায় করে, সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।’ (সহিহ বুখারি: ৫৭৪, সহিহ মুসলিম: ৬৩৫/২১৫)
ফজরের সুন্নত সম্পর্কে নবীজি বলেছেন ‘ঘোড়া যদি তোমাদের রেখে চলেও যায়, তবুও ফজরের দুই রাকাত সুন্নত ত্যাগ করো না।’ (আবু দাউদ: ১২৫৮) আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, ‘ফজরের দুই রাকাত সুন্নত দুনিয়া ও দুনিয়ার মাঝে যা কিছু রয়েছে, তার চেয়ে উত্তম।’ (মুসলিম: ৭২৫)
ফজরের সুন্নত নামাজে যে সুরা পড়তেন নবীজি
হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘আমি এক মাস পর্যন্ত নবী (স.)-কে খেয়াল করে দেখেছি, তিনি ফজরের সুন্নতে সুরা কাফিরুন ও সুরা ইখলাস এ দুই সুরা পড়েছেন। (জামে তিরমিজি: ৪১৭)
উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) থেকেও এমন বর্ণনা রয়েছে। (সহিহ ইবেন খুজাইমা: ১১১৪; মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা: ৬৩৯৫)
আরও পড়ুন: ফজর নামাজের ১০ ফজিলত
অন্য হাদিসে আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) বেশিরভাগ সময় ফজরের সুন্নতের প্রথম রাকাতে সুরা বাকারার ১৩৬ নম্বর আয়াত এবং দ্বিতীয় রাকাতে সুরা আলে ইমরানের ৬৪ নম্বর আয়াত তেলাওয়াত করতেন। (সহিহ ইবনে খুজাইমা: ১১১৫; সহিহ মুসলিম: ৭২৭)
অতএব ফজরের সুন্নত নামাজে মাঝেমাঝে এই দুই আয়াত পড়াও উত্তম; তবে, কোনোটাই আবশ্যক বা জরুরি বিধান মনে করা যাবে না।
ফজরের ফরজ নামাজে যে সুরা পড়তেন নবীজি
ফজরের নামাজে ‘তিওয়ালে মুফাসসাল’ তথা সুরা হুজরাত থেকে সুরা ইনশিকাক পর্যন্ত সুরাগুলো পাঠ করা সুন্নত। বিষয়টি হাদিস থেকে গৃহীত। তবে সফরে সুরা নাস, ফালাক, ইখলাস ও কাফিরুনের মতো ছোট ছোট সুরাও পাঠ করা যায়।
কুতবা ইবনে মালিক (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে ফজরের প্রথম রাকাতে সুরা কফ তিলাওয়াত করতে শুনেছি। (মুসলিম: ৪৫৭) জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ফজরের নামাজে সুরা ওয়াকেয়া এবং এ জাতীয় সুরা পাঠ করতেন। (মুসনাদে আহমদ: ২০৯৯৫)
আরও পড়ুন: স্যান্ডো গেঞ্জি পরে নামাজ শুদ্ধ হবে?
উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে আমার অসুস্থতার বিষয়ে জানালাম। তিনি বলেন, তুমি (সওয়ারিতে) আরোহণ করে মানুষদের পেছনে গিয়ে তাওয়াফ করো। আমি তাওয়াফ করছিলাম আর রাসুলুল্লাহ (স.) নামাজ পড়ছিলেন। নামাজে তিনি তিলাওয়াত করছিলেন সুরা তুর। (বুখারি: ১৬৩৩) আমর ইবনে হুরাইস (রা.) বলেন, আমি নবী কারিম (স.)-কে ফজরের নামাজে সুরা তাকবির তেলাওয়াত করতে শুনেছি। (নাসায়ি: ৯৫১) আবু বারজা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) ফজরের নামাজে ৬০ আয়াত থেকে ১০০ আয়াত পর্যন্ত তেলাওয়াত করতেন। (বুখারি: ৫৯৯)
তবে নবী করিম (স.) ফজরের নামাজে ‘মুফাসসাল’-এর বাইরে থেকেও দীর্ঘ কিরাত পড়েছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সাইব (রা.) বলেন, নবী (স.) মক্কায় আমাদের নিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করলেন। নামাজে তিনি সুরা মুমিনুন শুরু করলেন। যখন মুসা ও হারুন (আ.) অথবা ঈসা (আ.)-এর আলোচনায় পৌঁছলেন তখন তার কাশি এলো, ফলে তিনি রুকুতে চলে গেলেন। (মুসলিম: ৪৫৫) সুরা মুমিনুন-এ মুসা (আ.) ও হারুন (আ.)-এর আলোচনা শুরু হয়েছে ৪৫ নম্বর আয়াত থেকে এবং ঈসা (আ.)-এর আলোচনা শুরু হয়েছে ৫০ নম্বর আয়াত থেকে।
স্বাভাবিক অবস্থায় ফজরের নামাজ দীর্ঘ কিরাত পাঠ করা সুন্নত হলেও বিশেষ কোনো কারণে সুরা নাস, ফালাক, ইখলাস ও কাফিরুনের মতো ছোট সুরাও পাঠ করা যায়। রাসুলুল্লাহ (স.) সফর অবস্থায় সুরা নাস ও সুরা ফালাক দিয়ে ফজরের নামাজ আদায় করেছেন। (আবু দাউদ: ১৪৬২)