ধর্ম ডেস্ক
১৪ মে ২০২৪, ০২:৪৫ পিএম
পবিত্র কাবাঘরের দেয়ালে বিশেষভাবে স্থাপনকৃত পাথরের নাম ‘হাজরে আসওয়াদ’। হাজরে আসওয়াদ অর্থ হলো কালো পাথর। এটি বেহেশতের মর্যাদাপূর্ণ একটি পাথর। হাজিরা হজ করতে গিয়ে এতে সরাসরি বা ইশারার মাধ্যমে চুম্বন দিয়ে থাকেন। মর্যাদাপূর্ণ পাথরটি পবিত্র কাবাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণের দেয়ালে মাতাফ থেকে দেড় মিটার উঁচুতে গাঁথা অবস্থায় রক্ষিত আছে।
হাজরে আসওয়াদ তাওয়াফ শুরুর স্থানে অবস্থিত। প্রথমে এখান থেকেই তাওয়াফ শুরু করতে হয়। কাবাঘর তাওয়াফ ও প্রদক্ষিণের সময় হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করা ও চুম্বন করা সুন্নত। তবে ভীড় বেশি হওয়ার কারণে সবাই ফ্রেমে মুখ ঢুকিয়ে চুম্বন দিতে পারে না। এ অবস্থায় তারা হাত ইশারা করার মাধ্যমে তাওয়াফ শুরু করেন।
হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের নিয়ম
অনেকে হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের জন্য রীতিমতো যুদ্ধ শুরু করে দেন। এটির দরকার নেই। আপনি যদি দেখেন যে, চুমু দেওয়ার সুযোগ নেই, কিন্তু হাত দিয়ে স্পর্শ করা যাচ্ছে। তখন হাতে স্পর্শ করে হাতকে চুম্বন করবেন। যেমনটি নবী (স.) আমাদের শিখিয়েছেন। যদি এ কাজও কষ্টকর হয়, তাহলে দূর থেকে হাজরে আসওয়াদকে ডান হাত দ্বারা ইশারা করবেন। কিন্তু সেই হাতকে চুম্বন করতে হবে না। করলেও সমস্যা নেই। সাহাবি আবু তুফাইল (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করতে, তাঁর সঙ্গের লাঠি দিয়ে রোকন স্পর্শ করতে এবং লাঠিতে চুম্বন করতে দেখেছি। (মুসলিম: ২৯৬৭)
প্রতি চক্করে চুমু বা ইশারার সময় আল্লাহু আকবর বলা সুন্নত
প্রতি চক্করে হাজরে আসওয়াদ বরারব এসে সরাসরি বা ইশারায় চুমু খাওয়ার সময় ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলা সুন্নত। সহিহ বুখারিসহ অন্যান্য কিতাবে আছে, রাসুলুল্লাহ (স.) তাওয়াফের মধ্যে যখনই হাজরে আসওয়াদের কাছে আসতেন তাকবির তথা আল্লাহু আকবার বলে চুমু দিতেন বা লাঠি ইত্যাদি দিয়ে ইশারা করতেন। কিন্তু বিসমিল্লাহ বলাটা মারফু হাদিসে না থাকলেও আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে সহিহ সনদে বর্ণিত আছে যে তিনি ‘বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার’ বলে হাজরে আসওয়াদে চুমু দিতেন। (বুখারি ১/২১৯; মুসান্নাফে আবদুর রাজ্জাক ৫/৩৩)
আরও পড়ুন: ‘মাকামে ইবরাহিম’ আল্লাহর কুদরতের অনন্য নিদর্শন
হাজরে আসওয়াদে চুমা দেওয়ার উদ্দেশ্য
হাজরে আসওয়াদে চুমু দেওয়ার প্রধান উদ্দেশ্য নবীজির সুন্নতের অনুসরণ। এই সুন্নতের অনুসরণই উম্মতের করণীয় এবং এতেই কল্যাণ। এই পাথর কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারে না। নবীজি (স.)-এর প্রিয় সাহাবি ওমর (রা.) হাজরে আসওয়াদের কাছে এসে তা চুম্বন করে বললেন, আমি অবশ্যই জানি যে তুমি একখানা পাথর মাত্র, তুমি কারো কল্যাণ বা অকল্যাণ করতে পারো না। নবী (স.)-কে তোমায় চুম্বন করতে না দেখলে কখনো আমি তোমাকে চুম্বন করতাম না। (বুখারি: ১৫৯৭)
হাজরে আসওয়াদ চুম্বনের ফজিলত
হাজরে আসওয়াদ চুম্বন করা বরকতময়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘কেয়ামতের দিন এ পাথর আবু কুবাইস পাহাড় থেকে বড় আকার ধারণ করে উপস্থিত হবে। তার একটি জিহ্বা ও দুটি ঠোঁট থাকবে, (বায়তুল্লাহর জিয়ারতকারীরা) কে কোন নিয়তে তাকে চুম্বন করেছে, সে সম্পর্কে বক্তব্য দেবে।’ (ইবনে খুজায়মা: ৪/২২১; মুসতাদরাক হাকেম: ১/৪৫৭)
‘হাজরে আসওয়াদ স্পর্শ করলে গুনাহ মাফ হয়’ (নাসায়ি: ৫/২২১; আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন, নম্বর: ২৭৩২ )। অন্য হাদিসে এসেছে, হাজরে আসওয়াদের একটি জিহবা ও দুটি ঠোঁট রয়েছে, যে ব্যক্তি তাকে চুম্বন-স্পর্শ করল, তার পক্ষে সে কেয়ামতের দিন সাক্ষ্য দেবে। (আহমদ: ১/২৬৬; আলবানি এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্র: সহিহ ইবনে মাজাহ, নম্বর: ২৩৮১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মর্যাদাপূর্ণ জান্নাতি পাথর হাজরে আসওয়াদকে বিশুদ্ধ নিয়তে যথাযথভাবে চুম্বন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।