images

ইসলাম

বিদআতের সঙ্গে আপস করা হারাম

ধর্ম ডেস্ক

০৬ মে ২০২৪, ০২:৪০ পিএম

ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন বিধান। এটি এমন দ্বীন, যাতে কোনো অপূর্ণতা নেই, বক্রতা নেই। এই দ্বীন পূর্ণতার সর্বোচ্চ শিখরে উপনীত। এ বিষয়ে আল্লাহ তাআলা নিজেই ঘোষণা করেছেন—‘আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের ওপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন হিসেবে পছন্দ করলাম।’ (সুরা মায়েদা: ৩)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বোত্তম বাণী আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম আদর্শ মুহাম্মদ (স.)-এর আদর্শ। সবচেয়ে নিকৃষ্ট বিষয় হলো, (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত বিষয়। (দ্বীনের মধ্যে) নব-উদ্ভাবিত সবকিছুই বিদআত। প্রত্যেক বিদআত ভ্রষ্টতা, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণাম জাহান্নাম।’ (মুসলিম: ১৫৩৫; নাসায়ি: ১৫৬০)

নবীজি অন্যত্র বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের এ দ্বীনে (ইসলাম ধর্মে) নতুন কিছু সৃষ্টি করে, যা তার মধ্যে নেই তা প্রত্যাখ্যানযোগ্য।’ (সহিহ বুখারি: ২৬৯৭)

ইসলামে বিদআত খুবই নিকৃষ্ট ও ঘৃণিত বিষয়। কেননা, বিদআতে মানুষ জড়িত হয় ইবাদত মনে করেই। যে কারণে কোনো এলাকায় বিদআত ঢুকে গেলে তা সহজে বের হয় না। কারণ সবাই ভাবে ওটা ইবাদত। তাছাড়া, বিদআত প্রচলনের মধ্য দিয়ে পরোক্ষভাবে সুন্নতকে অপূর্ণ আখ্যা দেওয়া হয়। অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ। (সুরা মায়েদা: ৩) আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) বলেন, ‘এ উম্মতের ওপর আল্লাহর সবচেয়ে বড় অনুগ্রহ হলো আল্লাহ তাদের দ্বীন পরিপূর্ণ করেছেন। সুতরাং তারা দ্বীনের ব্যাপারে অন্যকিছুর মুখাপেক্ষী নয়।’ (তাফসিরে ইবনে কাসির: ৩/৩৪)

বিদআত মানুষের ঈমান আকিদা নষ্ট করে দেয়। নবীজি বলেছেন, ‘শীঘ্রই আমার উম্মতের মধ্যে এমন লোকজনের উদ্রেক হবে যাদের শরীরের গিরায় গিরায় বিদআত প্রবণতা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়বে যেভাবে পাগলা কুকুর কামড় দেওয়ার বিষ দংশনকৃত ব্যক্তির শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তার শরীরের কোনো গিরা বা জোড়া অবশিষ্ট থাকে না যেখানে এ বিষ না ঢুকে। (ইমাম আহমদ, ইমাম আবু দাউদ সূত্র : মেশকাত ৩০)

শয়তান বিদআতকে খুব পছন্দ করে। কোনো মুসলমান জেনা-ব্যভিচার, খুন-খারাবি করলে সে যতটা খুশি হয় তার চেয়ে বেশি খুশি হয় বিদআতে লিপ্ত হলে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি (রহ) বলেন- ‘ইবলিসের নিকট নাফরমানির চেয়েও বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

তাই তো সাহাবিরা, তাবেয়ি ও তাবে-তাবেয়িরা বিদআত থেকে দূরে থাকতেন। তাঁদের অভিন্ন নীতি ছিল বিদআতকে প্রশ্রয় না দেওয়া। বিদআতের খারাবি থেকে সবাইকে সতর্ক করতেন। এ ব্যাপারে তাঁরা এতই কঠিন ছিলেন যে বিদআতের পক্ষে কাউকে কোনো যুক্তি দাঁড় করানোরও সুযোগ দিতেন না। হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় রাসুলুল্লাহ (স.) একটি গাছের নিচে বসে সাহাবিদের বাইয়াত নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে দেখা গেল- লোকেরা গাছটিকে সম্মান করছে। আমিরুল মুমিনিন হজরত ওমর (রা.) বিষয়টি খেয়াল করলেন এবং গাছটি কেটে ফেলার নির্দেশ দিলেন। (মাজালিসুল আবরার পৃ. ১২১)

তাবেয়ি হজরত মুজাহিদ (রহ) বলেন, আমি সাহাবি হজরত ইবনে উমর (রা.)-এর সঙ্গে এক মসজিদে ছিলাম। এমন সময় এক ব্যক্তি জোহর, কিংবা বলেছেন, আছর নামাজের জন্য ডাকাডাকি করছিল। তখন ইবনে উমর (রা.) বললেন, এই মসজিদ থেকে বেরিয়ে চল। এখানে বিদআত চলে। (আবু দাউদ: ৪৫৩)

বিদআতে জড়িত ব্যক্তি কেয়ামতের দিন চরমভাবে লাঞ্ছিত হবে। সেদিন রাসুল (স.) বিদআতি লোকদের হাউজে কাউসারের পানি পান করাবেন না। তিনি তাদের বলবেন, ‘যারা আমার দীনের পরিবর্তন করেছ, তারা দূর হও, দূর হও।’ (বুখারি: ৬৬৪৩)

বিদআতকারীদেরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দেওয়াও ইসলামে নিষেধ। হাদিসে এসেছে, বিদআতকারীদের যারা আশ্রয়-প্রশ্রয় দেয় তাদের ওপর আল্লাহর লানত। (সহিহ মুসলিম: ৪৯৬২)

বিদআত থেকে বেঁচে থাকার অনেক বড় ফজিলত রয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে, তোমাদের মধ্যে যারা পরকালের আশা রাখে এবং আল্লাহকে খুব বেশি করে স্মরণ করে তাদের জন্য রাসুলুল্লাহর জীবনে সর্বোত্তম আদর্শ রয়েছে’ (সুরা আহজাব: ২১)। আল্লাহ তাআলা আরো বলেন, ‘বলো, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তাহলে আমার অনুসরণ করো, আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (আলে ইমরান: ৩১)

হাদিসে এসেছে, সাওবান (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, আমার উম্মতের একটি দল সুপ্রতিষ্ঠিত থাকবে হকের উপর। শত্রুরা যাদের ক্ষতিগ্রস্ত করতে সক্ষম হবে না। এ দলটি এভাবে হকের উপর থাকবে আল্লাহর নির্দেশ (কিয়ামতের প্রত্যক্ষ আদেশ) আসা পর্যন্ত।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৯৫০)

অন্য হাদিসে এসেছে, রাসুলে কারিম (স.) বলেন, ‘যে আমার সুন্নতকে ভালোবাসে, সে অবশ্যই আমাকে ভালোবাসে; আর যে আমাকে ভালোবাসে সে জান্নাতে আমার সঙ্গেই থাকবে। (মেশকাত: ১৭৫, কিতাবুল ঈমান; তিরমিজি: ২৬৭৮)

আল্লাহ তাআলা আমাদের বিদআত থেকে দূরে রাখুন। কোরআন ও সুন্নাহ অনুযায়ী জীবন পরিচালনার তাওফিক দান করুন। আমিন।