ধর্ম ডেস্ক
০১ মে ২০২৪, ০৪:১৬ পিএম
শিশুর জন্মের পর আকিকা দেওয়া মোস্তাহাব। প্রিয়নবী (স.) উম্মতকে নবজাতকের জন্য আকিকা দিতে উৎসাহ দিয়েছেন। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘সন্তানের সঙ্গে আকিকার বিধান রয়েছে। তোমরা তার পক্ষ থেকে রক্ত প্রবাহিত করো (অর্থাৎ পশু জবাই করো) এবং সন্তানের শরীর থেকে কষ্টদায়ক বস্তু (চুল) দূর করে দাও।’ (বুখারি: ৫৪৭২)
সন্তান আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। এ নেয়ামতের কৃতজ্ঞতাস্বরূপ আকিকা করতে হয়। আবার আকিকা না করা হলে বাচ্চার বিপদ-আপদ লেগে থাকা কিংবা কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়ার ব্যাপারেও হাদিস রয়েছে। যেমন, এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন- الْغُلاَمُ مُرْتَهَنٌ بِعَقِيقَتِهِ يُذْبَحُ عَنْهُ يَوْمَ السَّابِعِ وَيُسَمَّى وَيُحْلَقُ رَأْسُهُ ‘প্রত্যেক শিশু তার আকিকার সাথে দায়বদ্ধ থাকে। তার জন্মের সপ্তম দিনে তার পক্ষ থেকে পশু জবেহ করতে হয়, তার মাথা কামাতে হয় এবং নাম রাখতে হয়। (তিরমিজি: ১৫২২)
উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুহদ্দিসরা বলেন, أن العقيقة سبب لتخليص الولد من الشيطان وحمايته منه . وقد يفوت الولدَ خيرٌ بسبب تفريط الأبوين ‘আকিকা সন্তানকে শয়তানের ক্ষতি থেকে বাঁচানোর ওসিলা হয়। অনেক সময় মা-বাবার উদাসীনতার কারণে সন্তান এই কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে যায়।’ (জাদুল মাআদ: ২/৩২৫)
আরও পড়ুন: আর্থিক সমস্যা থাকলে ছেলের জন্য একটি ছাগল আকিকা করা যাবে?
তবে, দারিদ্র্যের কারণে সন্তানের আকিকা দিতে না পারলে গুনাহ হবে না। এ বিষয়ে আরবের সর্বোচ্চ ফতোয়া বোর্ড ‘আল-লাজনাতুদ্দায়িমাহ লিল-ইফতা’র বক্তব্য হলো- ‘যদি বাস্তবেই আপনি গরিব হন, তাহলে আপনার জন্য আপনার সন্তানদের পক্ষ থেকে আকিকা না করাতে কোনো অসুবিধা নেই। কেননা, আল্লাহ বলেছেন- لا يكلف الله نفساً إلا وسعها ‘আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোনো কাজের ভার দেন না।’ তবে যেহেতু রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন আমি তোমাদেরকে কোনো কাজের নির্দেশ দেই, তখন সাধ্যানুপাতে তা করবে আর যখন কোনো কোনো বিষয়ে নিষেধ করি তখন তা থেকে বেঁচে থাকবে।’ সুতরাং যখন আপনার অবস্থা ভালো হবে তখন আকিকা করে নেবেন।’ (ফতোয়া লাজনাতুদ্দায়িমাহ: ১১/৪৩৬,৪৩৭)
অতএব, অভিভাবকের উচিত, সন্তানের পক্ষ থেকে আকিকা দেওয়ার দৃঢ় নিয়ত করা এবং চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। পাশাপাশি এই আশা রাখতে হবে যে, আল্লাহ তাআলা যেহেতু সন্তান দিয়েছেন, চাইলে তিনি আর্থিক সংকটও দূর করে সন্তানের আকিকার ব্যবস্থা করে দেবেন।
সন্তান জন্মের ৭ম দিনে আকিকা দিতে হয়। তবে যদি কেউ তা না পারে, তাহলে পরবর্তীতে যেকোনো দিন আদায় করতে পারবে। (ইবনুল কাইয়িম, তুহফাতুল মাওদুদ: ৬৩ পৃ; ফতোয়া লাজনাতুদ্দায়িমাহ: ১৭৭৬; মাজমু ফতোয়া উসাইমিন: ২৫/২১৫)
আরও পড়ুন: আকিকা নিয়ে কিছু ভুল ধারণা
ছেলেসন্তানের পক্ষ থেকে একই ধরনের দুটি বকরি এবং মেয়ের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করা সুন্নত। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬) তবে, ছেলের পক্ষ থেকে একটি বকরি আকিকা করলেও মোস্তাহাব আদায় হয়ে যাবে। যদিও দুটি করা উত্তম। (রদ্দুল মুহতার: ৫/২১৩, আল মাউসুআতুল ফিকহিয়্যাহ: ৩০/২৭৭)
আকিকার বকরির বয়স এক বছর হওয়া শর্ত। এর কম বয়সী বকরি দিয়ে আকিকা শুদ্ধ হবে না। আকিকাতে খাসি দেওয়াই উত্তম। জাবির বিন আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (স.) কোরবানির দিন দুটি শিংওয়ালা, সাদা কালো রংওয়ালা খাসি করা বকরি জবাই করেন।’ (সুনানে আবু দাউদ: ২৭৯৫)
আকিকা ও কোরবানির গোশতের হুকুম একই। কাঁচা ও রান্না করা উভয়টিই বণ্টন করা যাবে। সর্বস্তরের লোক তা খেতে পারবে। এমনকি নিজের মা-বাবা, নানা-নানি, ধনী-গরিব সবাই নিশ্চিন্তে আকিকার গোশত খেতে পারবে। (ফতোয়ায়ে শামি: ৬/৩৩৬)