images

ইসলাম

পর্দা রক্ষার ক্ষেত্রে সামাজিকতা বাধা হলে করণীয়

ধর্ম ডেস্ক

৩০ এপ্রিল ২০২৪, ০২:৫৩ পিএম

পর্দা ইসলামের ফরজ বিধান। এই বিধান নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন- ‘(হে নবী!) আপনি ঈমানদার পুরুষদের বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে। এতে তাদের জন্য উত্তম পবিত্রতা রয়েছে। নিশ্চয়ই তারা যা করে আল্লাহ এ ব্যাপারে অবগত। আর ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি সংযত রাখে এবং যৌনাঙ্গের হেফাজত করে।’ (সুরা নুর: ৩০)

পর্দার বিধানের প্রতি সমর্পিত থাকা ঈমানের দাবি। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই যে, বিজাতীয় সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রভাবে আমাদের ‘মুসলিম-সমাজ’ এতটাই প্রভাবিত হয়ে পড়েছে যে, কোরআন ও সুন্নাহর বিধানও তাদের কাছে অপরিচিত ও অপ্রয়োজনীয়! (নাউজুবিল্লাহ)। 

বর্তমান সমাজে ইসলামের এই বিধান যারা মানতে চান, তাদেরকে সমাজে খাটো করা হয়, ‘অসামাজিক’ ট্যাগ দেওয়া হয়। মামাতো খালাতো বোনের সঙ্গে পর্দা করতে চাইলে আত্মীয়-স্বজন অসন্তুষ্ট হন, দেবর কিংবা স্বামীর বড় ভাইদের সঙ্গে পর্দা করতে চাইলে স্বয়ং মা-বাবা বিরক্ত হয়ে যান। এটাই বর্তমান সমাজের বাস্তবতা। অথচ হাদিসে রয়েছে, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, তোমরা নারীদের নিকট যাওয়া থেকে বিরত থাক। এক আনসারি সাহাবি আরজ করলেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! স্বামী পক্ষীয় আত্মীয় সম্পর্কে আপনি কী বলেন? তিনি বললে, সে তো মৃত্যু।’ (বুখারি: ৯/২৪২; মুসলিম: ২১৭২; তিরমিজি: ১১৭১; মুসনাদে আহমদ: ৪/১৪৯, ১৫৩)

আরও পড়ুন: পুরুষদের পর্দা কীভাবে করতে হয়?

যারা সামাজিকতার তুলনায় পর্দাকে সস্তা বিষয় মনে করে, ওসব ‘মুসলমানদের’ কে বোঝাবে যে, এটা নিজের পায়ে কুঠারাঘাতের শামিল। ইসলামের এই বিধানগুলো শুধু আমাদের আখেরাতে নাজাতেরই উপায় নয়, আমাদের দুনিয়ার জীবনের শান্তি, স্বস্থি ও পবিত্রতারও রক্ষাকবচ। ইরশাদ হয়েছে- ذٰلِكُمْ اَطْهَرُ لِقُلُوْبِكُمْ وَ قُلُوْبِهِنَّ ‘এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সুরা আহজাব: ৫৩)

পর্দা রক্ষায় সামাজিকতা বাধা হলে করণীয়
ইসলামের ফরজ বিধান রক্ষা করতে গিয়ে যদি মা-বাবাসহ দুনিয়ার সবাই বিরক্ত হয়ে যায়, তবুও আল্লাহর বিধানকে আঁকড়ে ধরতে হবে। কবিরা গুনাহে জড়ানো যাবে না। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেছেন- لَا طَاعَةَ لِبَشَرٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ ‘আল্লাহর নাফরমানির করে কোনো মানুষের আনুগত্য করা জায়েজ নয়।’ (মুসনাদে আহমদ: ১০৬৫)

অনেকে মনে করেন, জেনা-ব্যভিচার তো আর করছে না। শুধু দেখা-সাক্ষাৎ আর কথাবার্তা হচ্ছে। পারিবারিক ও সামাজিক সৌন্দর্য রক্ষায় তো এসব করতে হবে এবং সবাইকে মিলেমিশে থাকতে হবে। এসব অবুঝের প্রলাপ। হাদিস বলছে, জেনা-ব্যভিচারের প্রথম পদক্ষেপই হচ্ছে দৃষ্টি। সব বেহায়াপনার শুরুই হচ্ছে দেক্ষা-সাক্ষাৎ ও অনর্থকা কথাবার্তা। এজন্যই নবীজি (স.) বেগানা নারীকে দেখাও ব্যভিচার বলেছেন। 

আরও পড়ুন: বালেগ না হলেও যে বয়সে পর্দা করা জরুরি

হাদিসে এসেছে, ‘বেগানা নারীকে দেখা চোখের ব্যভিচার, তার সঙ্গে বেহুদা বা যৌন উদ্দীপক কথা হলো জিহ্বার ব্যভিচার, যৌন উদ্দীপক কথা শোনা কানের ব্যভিচার, স্পর্শ করা হাতের ব্যভিচার, পায়ের জেনা হলো ব্যভিচারের উদ্দেশ্যে অগ্রসর হওয়া এবং মনের ব্যভিচার হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা।’ (বুখারি: ৬২৪৩ ও মেশকাত: ৮৬)

নারী-পুরুষের সতর
একজন পুরুষের সতর হলো- নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত। তবে, মানুষের সামনে যাওয়ার সময় শালীন ও খোদাভীতি প্রকাশ করে এমন পোশাক পরিধান করা উত্তম। নারীদের জন্য গায়রে মাহরামের সামনে পূর্ণ শরীরই সতর। তবে অতীব প্রয়োজনে চেহারা, পা ও হাত খোলা জায়েজ আছে। যেমন—রাস্তায় প্রচণ্ড ভিড় হলে, আদালতে সাক্ষ্য দেওয়া ইত্যাদি। আর মাহরাম পুরুষের সামনে মাথা, চুল, ঘাড়, গলা, কান, হাত, পা, টাখনু, চেহারা, গলা, ঘাড় সংশ্লিষ্ট সিনার উপরের অংশ ছাড়া বাকি পূর্ণ শরীর সতর। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৪০৬; ফতোয়ায়ে রহিমিয়া: ৪/১০৬; হেদায়া: ১/৯২; নসবুর রায়াহ: ১/২৯৬-৮; তাতারখানিয়া ২/২২; ১৮/৯০) আল্লামা ইবনে তাইমিয়া (রহ) বলেন, সঠিকতর সিদ্ধান্ত এই যে, নারীর জন্য পরপুরুষের সামনে দুই হাত, দুই পা ও মুখমন্ডল খোলা রাখার অবকাশ নেই। (মাজমুআতুল ফতোয়া: ২২/১১৪)