ধর্ম ডেস্ক
১১ মে ২০২২, ১২:১৫ পিএম
আল্লাহ তাআলা কার কোন আমলে সন্তুষ্ট হয়ে যান, কেউ জানে না। অবিশ্বাস্য ছোট আমলেও মহান আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দাকে জান্নাতে দাখিল করাতে পারেন। তেমনই একটি আমল হচ্ছে তাহিয়্যাতুল অজু বা অজুর অভিবাদন। এটি মূলত দুরাকাত নফল নামাজ।
তাহিয়্যাতুল অজু নামাজের কারণে হজরত বেলাল (রা.)-এর ওপর আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হয়েছেন বলে হাদিস থেকে জানা যায়। মেরাজের রাতে রাসুলুল্লাহ (স.)-কে জান্নাতে হজরত বেলালের পায়চারি শুনানো হয়েছিল। হজরত বেলালের এই মর্যাদার কারণ তাহিয়্যাতুল অজু। মেরাজ থেকে ফিরে একদিন ফজরের নামাজের সময় বেলাল (রা.)-কে নবী (স.) জিজ্ঞেস করলেন—
‘বেলাল! আমাকে বলো- ইসলামে দীক্ষিত হওয়ার পর থেকে তোমার কোন আমলটি তোমার কাছে (সওয়াবের আশা করার মতো) সবচেয়ে উত্তম বলে মনে হয়? কারণ, আমি জান্নাতে আমার সামনে সামনে তোমার জুতার আওয়াজ শুনেছি।’
তখন বেলাল (রা.) বললেন, ‘তেমন কোনো আমল আমার নেই; যার কারণে (বিপুল সওয়াবের) আশা করতে পারি। তবে দিনরাতে যখনই আমি অজু করি; তখনই সেই অজুর মাধ্যমে যে কয় রাকাত সম্ভব হয়, নামাজ আদায় করি।’ (বুখারি: ১১৪৯; মুসলিম: ২৪৫৮)
অজু শেষ করার পর অজুর পনি শুকানোর আগে দুই রাকাত নামাজ পড়া মুস্তাহাব (আদ্দুররুল মুখতার: ২/২২)। হাদিসে এসেছে এটি নিশ্চিত জান্নাত লাভের মাধ্যম। আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, যে সুন্দর করে অজু করে এবং অজুর পর মনোযোগ দিয়ে দুই রাকাত নামাজ পড়ে; তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম: ২৩৪)
সুন্দরভাবে অজু করার পর অজুর অভিবাদন হিসেবে মসজিদে ঢুকে দুরাকাত নফল নামাজ পড়া শিখিয়েছেন প্রিয়নবী (স.)। তাই এই নামাজ সুন্নত। আলেমদের মতে, এটি প্রশংসনীয় সুন্নত বা মোস্তাহাব। হজরত বেলাল সেই আমলটি করে গেছেন। তাহিয়্যাতুল অজুর নামাজের মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা উসমান (রা.) একদিন অজুর পানি চাইলেন। তিনবার সুন্দর করে দুই হাতের কব্জি পর্যন্ত ধুলেন। তারপর তিন বার কুলি করলেন। নাকে পানি দিয়ে নাক পরিষ্কার করলেন। এরপর তিন বার চেহারা ধুলেন। দুই হাতের কনুই পর্যন্ত ভালোভাবে তিনবার ধুলেন। তারপর মাথা মাসেহ করলেন এবং টাখনু পর্যন্ত পা তিনবার ধৌত করলেন। এরপর বললেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এভাবে (সুন্দর করে) অজু করবে, তারপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে, যাতে (দুনিয়ার) কোনো খেয়াল করবে না, তার পেছনের সব (সগিরা) গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ (বুখারি: ১৫৯; মুসলিম: ২২৬)
অন্য হাদিসে নবীজি (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আমার মতো করে অজু করার পর দুরাকাত সালাত আদায় করবে, মনে অন্য কোন চিন্তা আনবে না, আল্লাহ তার পূর্বের সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন।’ (বুখারি: ১৬৪)
ফরজ ইবাদত পালনের পাশাপাশি নফল ইবাদত আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাহিয়্যাতুল অজুসহ সকল নফল আমলের প্রতি যত্ন নেওয়া মুমিন মুসলমানের জন্য বাঞ্ছনীয়। এতে হাদিস অনুযায়ী, গুনাহ মাফ হবে, মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, রাসুল (স.)-এর সুন্নতও আদায় হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্দরভাবে অজু করার পর তাহিয়্যাতুল অজু আদায় করে মহান রবের সন্তুষ্টি অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমিন।