images

ইসলাম

রমজানের জন্য বাছাইকৃত ১১ জিকির

ধর্ম ডেস্ক

২৫ মার্চ ২০২৪, ০৪:৫২ পিএম

জিকির বা আল্লাহর স্মরণ মুমিনের গুণ। বান্দাদের সর্বাবস্থায় অধিকহারে তাঁর জিকির করার নির্দেশ দিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো এবং সকাল সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো। (সুরা আহজাব: ৪১-৪২) আরও বর্ণিত হয়েছে, ‘তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করবে যাতে সফলতা অর্জন করো।’ (সুরা আনফাল: ৪৫) 

যারা জিকির করে না, তাদেরকে মৃতব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করেছেন নবীজি (স.)। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যারা আল্লাহর জিকির করে এবং যারা আল্লাহর জিকির করে না, তাদের দৃষ্টান্ত জীবিত ও মৃত ব্যক্তির মতো।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪০৭)

মুহাদ্দিসরা বলেন, আল্লাহর যেকোনো ধরনের আনুগত্য ও ইবাদত, আল্লাহর নাম ও তাঁর গুণাবলির উচ্চারণ, কোরআন তেলাওয়াত ও ধর্মীয় আলোচনাগুলো আল্লাহর স্মরণের অন্তর্ভুক্ত। তবে সাধক আলেমরা তাঁদের অনুসারীদের অবস্থা বিবেচনায় বিশেষ জিকির ও তাসবিহ পাঠের পরামর্শ দিয়ে থাকেন। কোরআন ও হাদিস অনুযায়ী হলে এসব তাসবিহও জিকির হিসেবে গণ্য হবে। এখানে বিস্ময়কর ফজিলতের ১৫ তাসবিহের জিকির তুলে ধরা হলো।

১. আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা ও সাক্ষ্য: আল্লাহর একত্ববাদের ঘোষণা হলো- لا إله إلا الله ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ বা মাবুদ নেই এবং আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্য হলো- أشهد أن لا إله إلا الله ‘আশহাদু আল্লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ অর্থ: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নেই। এগুলো হচ্ছে-সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির। এই দুই কালেমার ওজন অনেক ভারী। সাত আসমান ও সাত জমিনের চেয়েও। হাশরের মাঠে অভাবনীয় কাজে আসবে এই দুই কালেমা। ইখলাসের সঙ্গে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পড়া লোক জান্নাতি হবে। (মুসলিম: ১৫৬)

আরও পড়ুন: রমজানের জন্য এই ৮ দোয়া মুখস্থ রাখুন

২. ইস্তেগফার: কোরআন-হাদিসে বর্ণিত যেকোনো ইস্তেগফার পড়া যায়। সবচেয়ে ছোট ইস্তেগফার হলো- أستغفر الله ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে মাফ চাই। ইস্তেগফারের ফজিলত বলে শেষ করা যাবে না। দুনিয়া-আখেরাতের সবরকম কল্যাণে ইস্তেগফারের ভূমিকা রয়েছে। (সুরা হুদ: ৫২, সুরা আনফাল: ৩৩, সুনানে আবু দাউদ, সুনানে নাসায়ি, সুরা নুহ: ১০-১২ ও সুরা হুদ: ৩)

৩. দরুদ: দরুদে ইবরাহিমসহ অনেক দরুদ রয়েছে। সবচেয়ে সংক্ষিপ্ত দরূদ হচ্ছে- صَلَّىٰ ٱللَّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ উচ্চারণ: সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। অর্থ: তাঁর ওপর আল্লাহর দোয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক। দরুদের ফজিলত বিস্ময়কর। দরুদ অবারিত কল্যাণ লাভের উপায়। কেউ যদি দরুদ ছাড়া অন্যকিছু না-ও পড়ে, সেটাই তার মাকসুদ হাসিলের জন্য যথেষ্ট হয়ে যায়। (তিরমিজি: ২/৭২) মাজমাউজ জাওয়ায়েদ: ১০/২৪৮; মুসান্নাফ ইবনে আবি শাইবা: ৬/৪৫)

৪. জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: اللهم اني اسالك الجنة واعوذ بك من النار উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকাল জান্নাহ, ওয়া আঊযুবিকা মিনান্নার।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ আমি আপনার কাছে জান্নাত কামনা করছি এবং জাহান্নাম থেকে আপনার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো লোক আল্লাহ তাআলার নিকট তিনবার জান্নাত প্রার্থনা করলে জান্নাত তখন বলে, হে আল্লাহ! তাকে জান্নাতে প্রবেশ করান। আর কোনো লোক তিনবার জাহান্নাম হতে পানাহ (আশ্রয়) চাইলে জাহান্নাম তখন আল্লাহ তা’আলার নিকট বলে, হে আল্লাহ! তাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিন। (সুনানে তিরমিজি: ২৫৭২)

আরও পড়ুন: ১০টি গুরুত্বপূর্ণ দোয়া

৫. বেশি বেশি ‘আলহামদুলিল্লাহ’ পড়া: সুখে-দুঃখে সর্বাবস্থায় আলহামদুলিল্লাহ জিকির অনেক বড় নেক আমল। এর ফজিলত অসীম। আলহামদুলিল্লাহ হলো সর্বোত্তম দোয়া। হাদিস অনুযায়ী, পুরো দুনিয়ার মালিক হওয়ার চেয়ে উত্তম শুধু একবার আলহামদুলিল্লাহ বলা। আলহামদুলিল্লাহ শব্দটি মুমিনের সফলতার সোপান। কেননা আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করার জন্য আলহামদুলিল্লাহ পাঠ কর হয়। আর শুকরিয়া আদায়কারীদেরকে শুধু নেয়ামতের ওপরই রাখা হয়। তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের (নেয়ামত) বাড়িয়ে দেবো, আর যদি তোমরা অকৃতজ্ঞ হও, নিশ্চয়ই আমার আজাব বড় কঠিন।’ (সুরা ইবরাহিম: ০৭)

৬. ১০০ বার বিশেষ তাসবিহ: হাদিসে একটি জিকিরের বিশেষ গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জিকিরটি হলো—‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়ালাহুল হামদু ওয়াহুয়া আ'লা কুল্লি শাইয়িং ক্বদীর’। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি প্রতিদিন ১০০ বার উক্ত কালেমাটি বলবে, সে ১০টি গোলাম আজাদ করার সমান সওয়াব লাভ করবে, তার নামে ১০০টি সওয়াব লেখা হবে ও তার আমলনামা হতে ১০০ গুনাহ মুছে ফেলা হবে। আর সে সেদিন সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের ধোঁকা থেকে মুক্ত থাকবে। কেয়ামতের দিন কেউ তার থেকে ভালো আমল আনতে পারবে না, একমাত্র সেই ব্যক্তি ব্যতীত যে তার থেকে বেশি নেক আমল করেছে।’  (বুখারি: ৬০৪০)

৭. দোয়া ইউনুস: দোয়া ইউনুস হলো— لَا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ ‘লা ইলাহা ইল্লা আংতা, সুবহানাকা ইন্নি কুংতু মিনাজ জ্ব-লিমিন।’ অর্থ: ‘তুমি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই; তুমি পুতঃপবিত্র, নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত।’ (সুরা আম্বিয়া: ৮৭) এই দোয়া কবুল হওয়ার ব্যাপারে মহানবী (স.) বলেছেন, ‘মাছের পেটে ইউনুস (আ.) এই দোয়া পড়ে আল্লাহকে ডেকেছিলেন এবং মুক্তি পেয়েছিলেন। যদি কোনো মুসলিম বিপদে পড়ে এই দোয়া পাঠ করে, আল্লাহ তা কবুল করবেন।’ (আহমদ, তিরমিজি, মেশকাত: ২২৯২) দোয়া ইউনুসের আরও অনেক উপকারের কথা রয়েছে বিভিন্ন বর্ণনায়।

আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া

৮. আল্লাহর গুণবাচক নামের জিকির: আল্লাহর গুণবাচক নামের জিকির করার তাগিদ দেওয়া হয়েছে কোরআন ও হাদিসে। এখানে বিশেষ এক গুণবাচক নামের পরিচয় দেওয়া হচ্ছে, যে নামের জিকির অনেক বেশি ফজিলতপূর্ণ। তা হলো- হলো ذُو الْجَلَالِ وَالْاِكْرَامِ ‘জুল জালালি ওয়াল ইকরাম’। এই নামের দুটি অংশ। প্রথম অংশ জুল জালাল অর্থ হলো- ‘সমস্ত সৃষ্টি জগতের অধিপতি; যিনি সৃষ্টিকুল থেকে ভয় পাওয়ার হকদার ও একমাত্র প্রশংসার যোগ্য; দ্বিতীয় অংশের অর্থ হলো- মহত্ব-বড়ত্ব-দয়া ও ইহসানের অধিকারী’। নবী কারিম (স.) এই জিকিরকে সর্বদা আঁকড়ে ধরতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ইয়া জাল জালালি ওয়াল ইকরাম-কে সর্বদা আঁকড়ে ধরে থাকবে।’ (তিরমিজি: ৫/৫০৪; মুসতাদরাক হাকিম: ১/৬৭৬)

৯. ক্ষমালাভের বিশেষ দোয়া: রমজান মাসে বিশেষ করে রমজানের শেষ দশকে এই দোয়া বেশি বেশি পড়া উচিত। দোয়াটি হলো- اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারিমুন তুহিব্বুল আফওয়া ফা'ফু আন্নি।’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করতে পছন্দ করেন। অতএব আমাকে ক্ষমা করুন।’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮৫০; আহমদ: ২৫৩৮৪)

১০. বেশি বেশি ‘লা হাওলা ওয়ালা কুয়্যাতা ইল্লা বিল্লাহ’ পড়া: আরবি: لاَ حَوْلَ وَلاَ قُوَّةَ إِلاَّ بِاللهِ উচ্চারণ: লা হাওলা অলা ক্বুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। অর্থ: ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ভরসা নেই; কোনো ক্ষমতা বা শক্তি নেই।’ এই কালেমাটি হলো জান্নাতের অন্যতম ধনভাণ্ডার বা গুপ্তধন। (বুখারি: ২৯৯২; মুসলিম: ২৭০৪, তিরমিজি: ৩৩৭৪; আবু দাউদ: ১৫২৬)

১১. বেশি বেশি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়াবিহামদিহি’ পড়া: আরবি: سُبْحَانَ اللَّهِ الْعَظِيمِ، وَبِحَمْدِهِ উচ্চারণ: ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ অর্থ: ‘মহান আল্লাহর প্রশংসাসহ তাঁর পবিত্রতা ও মহিমা ঘোষণা করছি।’ হাদিসে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ ১০০ বার পাঠ করে, এতে মহান আল্লাহ তাকে (কেয়ামতের দিন) সৃষ্টিকুলের সব মানুষ থেকে বেশি মর্যাদা দান করবেন।’ (আবু দাউদ: ৫০৯১) অন্য হাদিসে রয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ‘সুবহানাল্লাহিল আজিম ওয়া বিহামদিহি’ পাঠ করে, তার জন্য জান্নাতে একটি খেজুরগাছ রোপণ করা হয়।’ (তিরমিজি: ৩৪৬৪)