images

ইসলাম

নবীজির ইফতারে থাকত যেসব খাবার 

ধর্ম ডেস্ক

১৪ মার্চ ২০২৪, ০৩:০০ পিএম

images

ইফতার করা সুন্নত। রোজা শেষ করার উদ্দেশ্যে সূর্যাস্তের পরে পানাহার করাকে ইফতার বলে। ইফতার বড়ই আনন্দের। হাদিসে আছে- ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিনে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (বুখারি: ৭৪৯২; মুসলিম: ১১৫১; তিরমিজি: ৭৬৬)

নবীজির ইফতারসামগ্রী
প্রিয়নবী (স.) খুব স্বাভাবিক ইফতার করতেন। অনেক বেশি আয়োজন থাকতো না তাঁর ইফতারের দস্তরখানে। নবীজির ইফতারের পাত্রে কাঁচা খেজুর থাকতো বেশিরভাগ সময়। তবে কাচা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুরও খেতেন তিনি। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘নবী (স.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’(তিরমিজি; রোজা অধ্যায়: ৬৩২)

আরও পড়ুন: সেহেরির বরকত, নিয়মকানুন সম্পর্কে হাদিসে যা আছে

নবীজির ইফতারে তৎকালীন আরবের প্রচলিত খাবার
খেজুর ছাড়াও তৎকালীন আরবে প্রচলিত অন্যান্য খাবারও খেতেন তিনি। আবদুল্লাহ বিন আবি আউফ (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘রোজায় আমরা রাসুল (স.)-এর সফরসঙ্গী ছিলাম। সূর্যাস্তের সময় তিনি একজনকে ডেকে বললেন, ছাতু ও পানি মিশিয়ে ইফতার পরিবেশন করো।’ (মুসলিম: ১০৯৯)

ইফতার সামগ্রীর ব্যাপারে হাদিসের নির্দেশনা
সালমান ইবনে আমির (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ রোজা রাখলে খেজুর দিয়ে যেন ইফতার করে, খেজুর না হলে পানি দিয়ে; নিশ্চয় পানি পবিত্র’। (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ ও দারেমি; আলফিয়্যাতুল হাদিস: ৫৬২, পৃষ্ঠা: ১৩১-১৩২)

আরও পড়ুন: আজান পর্যন্ত সেহেরি খেলে রোজা হবে?

হাদিস অনুযায়ী, খেজুর না থাকলে পানি দিয়ে ইফতার শুরু করা সুন্নত। এরপর অন্যান্য খাবার খাওয়া যাবে। তবে, ইফতার বা সেহেরিতে অতিরিক্ত খাওয়া বা উদরপূর্তি করে খাওয়া জরুরি নয়। এতে ইবাদতে আলস্য আসতে পারে। পেট খারাপ হওয়ার আশঙ্কা আছে। একইসঙ্গে খেয়ালের ভুলে অপচয় হয়ে যেতে পারে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘পানাহার করো, কিন্তু অপচয় করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ: ৩১)

হাদিস অনুযায়ী যতটুকু খাওয়া যথেষ্ট
মিকদাম ইবন মাদিকারাব (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুল (স.)-কে বলতে শুনেছি, পেটের চেয়ে মন্দ কোনো পাত্র মানুষ ভরাট করে না। পিঠের দাঁড়া সোজা রাখার মতো কয়েক লোকমা খাবারই আদম সন্তানের জন্য যথেষ্ট। আর বেশি খাবার ছাড়া যদি তা সম্ভব না হয়, তাহলে পেটের এক-তৃতীয়াংশ খাবারের জন্য, এক-তৃতীয়াংশ পানির জন্য আর বাকি তৃতীয়াংশ শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য রাখবে।’ (তিরমিজি: ২৩৮৩)

উপরোক্ত হাদিসে পরিমিত খাবারের প্রতি উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ অপরিমিত খাবার মানুষকে দুর্বল করে ফেলে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের ৮০ শতাংশ রোগব্যাধি খাবারের কারণেই হয়ে থাকে।

ইফতার অনতিবিলম্বে করতে হবে
অনতিবিলম্বে ইফতার করা মহানবী (স.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। হজরত সাহল ইবনে সাদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যতদিন মানুষ অনতিবিলম্বে ইফতার করবে, ততদিন তারা কল্যাণের মধ্যে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি: ১৮২১; সহিহ মুসলিম: ১৮৩৮) অন্য হাদিসে নবী করিম (স.) বলেছেন, ‘দ্বীন ততদিন পর্যন্ত ঠিক থাকবে, যতদিন পর্যন্ত মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে। কেননা, ইহুদি-খ্রিস্টানরা বিলম্বে ইফতার করে’ (আবু দাউদ: ২৩৫৫)

আরও পড়ুন: সেহরি-ইফতার-তারাবির নিয়ত, দোয়া ও মোনাজাত

ইফতারের মুহূর্তটি দোয়া কবুলের সময়
নবী করিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তিন ব্যক্তির দোয়া ফিরিয়ে দেওয়া হয় না। ন্যায়পরায়ণ শাসক, রোজাদার যখন সে ইফতার করে ও নির্যাতিত ব্যক্তির দোয়া’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫২)। তিনি আরও বলেছেন, ‘ইফতারের সময় রোজাদের ন্যূনতম একটি দোয়া অবশ্যই কবুল হয়।’ (ইবনে মাজাহ: ১৭৫৩)

ইফতারের সময় যে দোয়া পড়বেন
ইফতারের আগে গুনাহ ক্ষমার এ দোয়াটি বেশি বেশি পড়া দরকার— يَا وَا سِعَ الْمَغْفِرَةِ اِغْفِرْلِىْ উচ্চারণ: ‘ইয়া ওয়াসিয়াল মাগফিরাতি, ইগফিরলী’ অর্থ: হে মহান ক্ষমা দানকারী! আমাকে ক্ষমা করুন। (শু‘আবুল ঈমান: ৩/৪০৭)

অতঃপর ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা বারাকাতিল্লাহ’ বলে ইফতার শুরু করবে এবং পরে নিম্নের দোয়া দুটি পড়বে—

১. اَللّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَعَلي رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু ওয়ালা রিজকিকা আফতারতু।’ অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমারই জন্য রোজা রেখেছি, এবং তোমারই দেয়া রিজিক দ্বারা ইফতার করলাম। (আবু দাউদ: ১/৩২২)
২. ذَهَبَ الظَّمَأُ وَابْـتَلَّتِ العُرُوْقُ وَثَبَتَ الاَ جْرُ اِنْ شَاءَ الله تَعَا لى উচ্চারণ: যাহাবাযযমা ওয়াবতাল্লাতিল উরুকু ওয়া সাবাতাল আজরু ইনশাআল্লাহু তায়ালা। অর্থ: পিপাসা দূরিভূত হয়েছে, ধমনীসমূহ সতেজ হয়েছে, এবং ইনশাআল্লাহ রোজার সওয়াব নিশ্চিত হয়েছে। (আবু দাউদ: ১/৩২১)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সুন্নাহ অনুযায়ী ইফতার করার তাওফিক দান করুন। ইফতারের মুবারক সময়ে করণীয় আমল যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।