images

ইসলাম

সেহেরির সময় মাইকে ডাকাডাকি, আলেমদের বক্তব্য

ধর্ম ডেস্ক

০৫ মার্চ ২০২৪, ০৩:৪২ পিএম

পবিত্র রমজানে সেহেরির সময় মাইক দিয়ে ডাকাডাকি আমাদের সমাজে অনেক পুরোনো একটি প্রথা। মানুষের প্রয়োজনেই এটি চালু হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান যুগে প্রত্যেকের ঘরেই অ্যালার্মযুক্ত মোবাইল ফোন রয়েছে। সবাই যার যার পছন্দনীয় সময়ে উঠে সেহেরি করে নিতে পারেন। মসজিদের মাইক থেকে বেশি ডাকাডাকি কিংবা গজল-তেলাওয়াতের কারণে বরং মানুষের ডিস্টার্ব হয়। এ বিষয়ে ইসলাম কী বলে—জানতে চান অনেকে। 

এর উত্তরে ফুকাহায়ে কেরাম বলেন, রমজান মাসে মসজিদের মাইক দিয়ে এলাকার লোকজনকে সেহেরি খাওয়ার জন্য প্রয়োজন পরিমাণ ডাকাডাকি করা এবং সেহেরির সময় বলে দেওয়া জায়েজ আছে। তবে ডাকাডাকিতে প্রয়োজনের অতিরিক্ত হামদ, নাত, গজল ও জিকির ইত্যাদির মাধ্যমে ব্যক্তিগত ইবাদতকারীদের বিঘ্ন সৃষ্টি করা, রুগ্ন ও অসু্স্থ ব্যক্তিদের ঘুম ও আরামে বিঘ্ন সৃষ্টি করা মোটেও ঠিক নয়। (ফতোয়ায়ে শামি: খন্ড: ৪, পৃষ্ঠা-৪৪৫; আল ফিকহুল ইসলামি, খন্ড: ৮, পৃষ্ঠা-১৮৩; খাইরুল ফতোয়া, খন্ড: ২, পৃষ্ঠা-৭৭০; আহকামুল মসজিদ, পৃষ্ঠা-৮৫; কাওয়ায়িদুল ফিকাহ, পৃষ্ঠা-১২৫)

আরও পড়ুন: রমজানে যেসব কাজের সওয়াব বেশি

বর্তমান যুগে সেহেরির সময় এভাবে ডাকাডাকির আদৌ যৌক্তিকতা আছে কি না—এমন প্রশ্নে জনপ্রিয় ইসলামিক স্কলার ও বিশিষ্ট দাঈ শায়খ আমহাদুল্লাহ বলেন, একটা সময় মানুষের প্রয়োজনেই হয়ত ডাকাডাকির এই প্রথা চালু হয়েছিল। কিন্তু এখন প্রতিটা বাড়িতেই ঘুম ভাঙানোর মতো কয়েকটা অ্যালার্ম ঘড়িবিশিষ্ট মোবাইল ফোন আছে। এ সময়ে এসে ঘুম ভাঙানোর জন্য মাইকের মাত্রাতিরিক্ত ডাকাডাকি নিষ্প্রয়োজন; বরং বিরক্তিকর। যেখানে ঘুমের ব্যাঘাত ঘটিয়ে উচ্চস্বরে কোরআন তেলাওয়াত করতে নিষেধ করেছেন স্বয়ং রাসুল (স.), সেখানে অনেক সময় ধরে মাইক বাজানো কতটা যুক্তিসঙ্গত এবং ইসলাম-সঙ্গত? তবে হ্যা, সাহরির শুরুতে এবং শেষে এক-দু বার ডেকে দেয়া যায়। কিন্তু লাগাতার ডাকাডাকি, গজল, হামদ-নাত গাওয়া মোটেও কাম্য নয়। আমাদের এই সকল কর্মকাণ্ডের জন্য অনেকে ইসলামের প্রতি বিতৃষ্ণ হয়ে যায়।

আরও পড়ুন: রমজানে যেসব গুনাহ ভুলেও করবেন না

শায়খ যাকারিয়া ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের পরিচালক মুফতি মিজানুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘মোবাইলে অ্যালার্ম আছে বলে মাইকে ডাকার প্রয়োজন নেই’ আমার মনে হয় এটা একটা বাড়াবাড়ি। ডাকা যাবে অবশ্যই। তবে কীভাবে ডাকতে হবে—সেটা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। যেমন- ‘সেহেরির একঘণ্টা আগে একবার ডাকা হলো। আধা ঘণ্টা বাকি থাকতে একবার সতর্ক করা হলো। আর সময় শেষ হলে বলে দেয়া হলো।’ এভাবে ঠিক আছে। কিন্তু মাইকে সাইরেন বাজিয়ে, গজল গেয়ে, ওয়াজ ছেড়ে দিয়ে, মাইকে দীর্ঘসময় তেলাওয়াত করে মানুষকে বিরক্ত করা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। বাসাবাড়িতে অনেকেই তাহাজ্জুদে দাঁড়ান, অনেক অসুস্থ অতিরিক্ত মাইকের ডাকাডাকিতে কষ্ট পান। তাছাড়া মসজিদে যারা এতেকাফে বসেন তারাও বারবার মাইক চালু করার কারণে তাহাজ্জুদ পড়তে পারেন না। তাই এমন কাজের অনুমতি কোনোভাবেই ইসলাম দিতে পারে না।

আরও পড়ুন: আজান পর্যন্ত সেহেরি খেলে রোজা হবে?

এ প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) বলেছিলেন, সেহেরির সময় মাইকে ডাকাডাকি জায়েজ, আবার নাজায়েজ। বর্তমানে যেটা হয় সেটা হারাম কাজ। অর্থাৎ রাত ৩টা থেকে একটানা মাইক বাজানো হারাম কাজ। এতে মানুষের ঘুম নষ্ট হয়, অসুস্থদের ডিস্টার্ব হয়, যারা সেহেরি আগে খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে তাদের ডিস্টার্ব হয়, যারা তাহাজ্জুদ পড়ছেন তাদের ডিস্টার্ব হয়। কিন্তু যদি আপনি এভাবে বলেন যে ভাইয়েরা ৩টা বেজে গেছে, আজানের আর একঘণ্টা দেরি অথবা আধাঘণ্টা দেরি—এভাবে কয়েকবার বললে জায়েজ আছে।