ধর্ম ডেস্ক
২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৮:০৪ পিএম
ইসলামে মদ নাপাক ও মদ্যপান হারাম। এছাড়াও মদ খাওয়াকে শয়তানের কাজ বলা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। ইরশাদ হয়েছে- یٰۤاَیُّهَا الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا اِنَّمَا الۡخَمۡرُ وَ الۡمَیۡسِرُ وَ الۡاَنۡصَابُ وَ الۡاَزۡلَامُ رِجۡسٌ مِّنۡ عَمَلِ الشَّیۡطٰنِ فَاجۡتَنِبُوۡهُ لَعَلَّکُمۡ تُفۡلِحُوۡنَ ‘হে মুমিনগণ, মদ, জুয়া, প্রতিমা-বেদী ও ভাগ্যনির্ধারক তীরসমূহ নাপাক শয়তানের কর্ম। সুতরাং তোমরা তা পরিহার কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা মায়েদা: ৯০)
মাদকের ক্ষতি সম্পর্কে আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন- اِنَّمَا یُرِیۡدُ الشَّیۡطٰنُ اَنۡ یُّوۡقِعَ بَیۡنَکُمُ الۡعَدَاوَۃَ وَ الۡبَغۡضَآءَ فِی الۡخَمۡرِ وَ الۡمَیۡسِرِ وَ یَصُدَّکُمۡ عَنۡ ذِکۡرِ اللّٰهِ وَ عَنِ الصَّلٰوۃِ ۚ فَهَلۡ اَنۡتُمۡ مُّنۡتَهُوۡنَ ‘শয়তান মদ ও জুয়ার মাধ্যমে তোমাদের মধ্যে শত্রুতা ও বিদ্বেষ সঞ্চার করতে চায়। আর (চায়) আল্লাহর স্মরণ ও সালাত থেকে তোমাদের বাধা দিতে। অতএব, তোমরা কি বিরত হবে না? (সুরা মায়েদা: ৯১)
হাদিসে এসেছে, মদ খেলে ৪০ দিনের ইবাদত কবুল হয় না। আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মদপানকারী ব্যক্তির ৪০ দিনের নামাজ কবুল করা হয় না। সে তওবা করলে আল্লাহ তার তওবা কবুল করেন। যদি আবার সে মদপান করে, তাহলে আল্লাহ তার ৪০ দিনের নামাজ কবুল করেন না। যদি সে তওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তওবা গ্রহণ করেন। সে যদি আবার মদপানে লিপ্ত হয়, তাহলে তার ৪০ দিনের নামাজ আল্লাহ তাআলা গ্রহণ করেন না। যদি সে তওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন। সে চতুর্থবার মদপানে জড়িয়ে পড়লে আল্লাহ তাআলা তার ৪০ দিনের নামাজ গ্রহণ করেন না। যদি সে তওবা করে, আল্লাহ তাআলা তার তওবা কবুল করবেন না এবং তাকে ‘নাহরুল খাবাল’ হতে পান করাবেন। প্রশ্ন করা হলো, হে আবু আবদুর রাহমান (ইবনু উমার), খাবাল নামক ঝরনাটি কী? তিনি বললেন, জাহান্নামিদের পুঁজের ঝরনা। (তিরমিজি: ১৮৬২)
আরও পড়ুন: ৮টি গুরুতর হারাম কাজে মানুষের অবাধ বিচরণ
আরেক হাদিসে উরওয়া ইবনে রুওয়ায়ম (রহ) বলেন, একদিন দায়লামি (রহ) আবদুল্লাহ ইবন আমর ইবনে আস (রা.)-এর খোঁজে বের হলেন। তিনি বলেন, আমি আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.)-এর কাছে উপস্থিত হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম. হে আবদুল্লাহ ইবন আমর! আপনি কি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে মদ সম্পর্কে কিছু বলতে শুনেছেন? তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, আমার উম্মতের কেউ শরাব পান করলে আল্লাহ তাআলা তার চল্লিশ দিনের নামাজ কবুল করবেন না। (সুনানে নাসায়ি: ৫৬৬৪)
তবে, মদ খেলে ৪০ দিন শরীর নাপাক থাকে এবং নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হয় না—এ ধারণা সঠিক নয়। ইমাম নববী (রহ) বলেন, ‘নামাজ কবুল না হওয়ার অর্থ হলো- এতে তার সওয়াব হবে না। যদিও নামাজ পড়লে ফরজ আদায় হয়ে যাবে এবং তা পুনরায় আদায় করার প্রয়োজন নেই।’ তবে এ কারণে চল্লিশ দিন শরীর অপবিত্র থাকে এমন কথা হাদিসের মাধ্যমে সাব্যস্ত নয়। (শরহু মুসলিম: ১৪/২২৭, জামেউল ফতোয়া, ইসলামি ফিকহ ও ফাতাওয়া বিশ্বকোষ)
তবে মনে রাখতে হবে, মদ খাওয়া কঠিন গুনাহগুলোর একটি। হাদিসে এসেছে, মদ খাওয়ার সময় ঈমান থাকে না। আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, ‘ব্যভিচারী যখন ব্যভিচার করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। চোর যখন চুরি করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। মদ পানকারী যখন মদ পান করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। লুটেরা যখন মানব জনসম্মুখে লুট করে তখন সে ঈমানদার থাকে না। তবে এরপরও তাদেরকে তওবা করার সুযোগ দেয়া হয়’। (বুখারি: ২৪৭৫, ৫৫৭৮, ৬৭৭২, ৬৮১০; মুসলিম: ৫৭; আবু দাউদ: ৪৬৮৯; ইব্নু মাজাহ: ৪০০৭)
আরও পড়ুন: তিন মানুষের চোখ জাহান্নামের আগুন দেখবে না
আরেক হাদিসে রাসুলে কারিম (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা মদপান থেকে বেঁচে থাকো। কারণ এটি যাবতীয় অপকর্মের চাবি।’ (মুবাদরকে হাকেম খণ্ড ৪, পৃ. ১৪৫; মুনজিরি হাদিস: ৩৪৮৭, পৃ. ৪৫৫)
হজরত আব্দুল্লাহ বিন আমর বিন আস (রা.) বর্ণিত আরেক হাদিসে নবী (স.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি প্রথমবারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামাজ ছেড়ে দিলো সে যেন দুনিয়া ও দুনিয়ার উপরিভাগের সবকিছুর মালিক ছিলো এবং তা তার থেকে একেবারেই ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। আর যে ব্যক্তি চতুর্থবারের মতো নেশাগ্রস্ত হয়ে নামাজ ছেড়ে দিলো আল্লাহ তাআলার দায়িত্ব হবে তাকে ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ পান করানো। জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘ত্বীনাতুল খাবাল’ বলতে কি? রাসুল (স.) বললেন, তা হচ্ছে জাহান্নামীদের পুঁজরক্ত’। (বায়হাকি: ১৬৯৯, ১৭১১৫ তাবারানি/আওসাত: ৬৩৭১; আহমদ: ৬৬৫৯)
শয়তানের ধোঁকায় পড়ে কখনও কেউ মদ খেয়ে ফেললে সেজন্য নামাজ বাদ দেওয়া যাবে না। নামাজ পড়তে হবে এবং মদ খাওয়ার গর্হিত গুনাহের জন্য আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করতে হবে।