ধর্ম ডেস্ক
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০৪:১৭ পিএম
প্রেম-ভালবাসা আল্লাহর বড় নেয়ামত। মায়া-মমতা, শ্রদ্ধা-ভক্তি, ভালোবাসা, সমাজবদ্ধ হয়ে থাকা—এসব ইসলামে কাঙ্ক্ষিত বিষয়। এসব আছে বলেই পৃথিবী এত সুন্দর। ভালোবাসা আল্লাহ তাআলারই সৃষ্টি। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের থেকে তোমাদের স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তিতে থাকো এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও অনুগ্রহ সৃষ্টি করেছেন। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীল মানুষের জন্য নিদর্শনাবলী রয়েছে।’ (সুরা রুম: ২১)
অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের উপর আল্লাহর সেই নেয়ামতের কথা স্মরণ করো, যখন তোমরা পরস্পরে শত্রু ছিলে। অতঃপর আল্লাহ তোমাদের অন্তরসমূহে মহব্বত পয়দা করে দিলেন। অতঃপর তোমরা তার অনুগ্রহে পরস্পরে ভাই ভাই হয়ে গেলে।’ (আলে ইমরান: ১০৩)
আরও পড়ুন: অবৈধ সম্পর্ক থাকাবস্থায় ইবাদত কবুল হবে?
মানুষ হিসেবে একে অন্যের প্রতি মায়া ও টান অনুভব করা স্বাভাবিক। এমনকি সেই টান যদি বিপরীত লিঙ্গকে কেন্দ্র করে হয়, তা-ও বৈধ, তবে তা কেবল স্বামী-স্ত্রীর ক্ষেত্রে। স্বামী-স্ত্রীর ভালোবাসা শুধুমাত্র বৈধ নয়, পবিত্রও বটে। ইসলাম এই ভালোবাসার গুরুত্ব অনেক। রাসুলুল্লাহ (স.) তাঁর স্ত্রীদের ভালোবাসতেন। তাদের প্রতি দয়া প্রদর্শন করতেন। তাদের মন জয় করার চেষ্টা করতেন। তাদের নিয়ে আনন্দ-ফুর্তি করতেন। হাদিসে আছে, ‘নবীজি (স.) আয়েশা (রা.)-এর সাথে দৌঁড় প্রতিযোগিতা করেছেন।’ আয়েশা (রা.) বলেন, আমি ও নবী (স.) একই পাত্র থেকে গোসল করতাম। সেই পাত্রকে ফারাক বলা হতো। (সহিহ বুখারি: ২৫০)
স্বামী-স্ত্রী ছাড়া অন্য বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা ভালো লাগাকে প্রশ্রয় দেওয়া জায়েজ নেই। ইসলামে বেগানা নর-নারীর কোনো নির্জন স্থানে মিলিত হওয়া হারাম। ব্যভিচার করার আগ্রহ তৈরি হতে পারে এমন কাজের ধারে-কাছে যেতেও কোরআন নিষেধ করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং মন্দ পথ।’ (সুরা ইসরা: ৩২)
আরও পড়ুন: মেয়ের ইচ্ছার বিরুদ্ধে বিয়ে দেওয়া জায়েজ?
আরও কিছু ইসলামসম্মত ভালোবাসা রয়েছে। যেমন সন্তানের প্রতি ভালোবাসা, মা-বাবার প্রতি ভালোবাসা, আল্লাহর জন্য কাউকে ভালোবাসা, আল্লাহর সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা, আত্মীয়-স্বজনের প্রতি ও সব মুমিনের প্রতি ভালোবাসা। এসব ইসলামে জায়েজ ও সওয়াবের কাজ।
তবে সর্বোৎকৃষ্ট ভালোবাসা হলো আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি ভালোবাসা। আল্লাহর প্রতি স্বভাবতই বেশি ভালোবাসা রাখেন মুমিনরা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান এনেছে তারা আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় সুদৃঢ়।’ (সুরা বাকারা: ১৬৫)
আবার নবীপ্রেম ঈমানের দাবি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমার নবী (স.)-এর অনুসরণ করো; তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ মার্জনা করবেন।’ (আলে ইমরান: ৩১)
আরও পড়ুন: বিয়ের উদ্দেশ্যে প্রেম করা জায়েজ?
হাদিসে এসেছে ‘ঈমানদার ছাড়া কেউই জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, আর তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না, যতক্ষণ না একে অন্যকে ভালবাসবে। আমি কি তোমাদের তা বলে দিব না, কী করলে তোমাদের মাঝে পারস্পরিক ভালোবাসার সৃষ্টি হবে? তা হলো, তোমরা পরস্পর বেশি সালাম বিনিময় করবে।’ (সহিহ মুসলিম: ৯৮)
আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এক মুমিনের প্রতি অন্য মুমিনের ভালোবাসা অনেক ফজিলতপূর্ণ আমল। হাদিসে এসেছে, ‘এক ব্যক্তি তার কোনো (মুসলমান) ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য অন্য গ্রামে রওনা হয়, পথে আল্লাহ তার জন্য একজন ফেরেশতা বসিয়ে দেন। অতঃপর ফেরেশতা তাকে বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে এমন ভালোবাসেন, যেমন তুমি আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে অমুক ব্যক্তিকে ভালোবাসো।’ (মুসলিম: ২৫৬৭)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।