images

ইসলাম

যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম

ধর্ম ডেস্ক

১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ০১:১৪ পিএম

বান্দার আমলই তার জান্নাত ও জাহান্নামের কারণ। নিজ আমলগুণে মানুষ যেমন জান্নাতি হতে পারেন, তেমনি কর্মদোষে হতে পারেন জাহান্নামি। আবার একদল মানুষ এমন রয়েছেন, যাদের ব্যাপারে কোরআন ও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে— তাদের ওপর জাহান্নাম হারাম। হাদিসের আলোকে যাদের জন্য জাহান্নাম হারাম, তারা হলেন—

১. অন্তর থেকে কালেমার সাক্ষ্যদানকারী

হজরত আনাস বিন মালিক (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেছেন-

مَا مِنْ أَحَدٍ يَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، صِدْقًا مِنْ قَلْبِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে বান্দা আন্তরিকতার সঙ্গে এ সাক্ষ্য দেবে যে, ‘আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মদ (স.) আল্লাহর রাসুল’ তার জন্য আল্লাহ তাআলা জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।

মুআজ (রা.) বললেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল! আমি কি মানুষের কাছে এ খবর পৌঁছে দেব না, যাতে তারা সুসংবাদ পেতে পারে?’ তিনি বললেন, ‘তাহলে তারা এর উপরই ভরসা করবে।’ মুআজ (রা.) (জীবনভর এ হাদিস বর্ণনা করেননি), মৃত্যুর সময় হাদিসটি বর্ণনা করে গেছেন, যাতে (ইলম গোপন রাখার) গুনাহ না হয়। (সহিহ বুখারি: ১২৮)

২. যার পা আল্লাহর পথে ধূলি-ধূসরিত

হজরত আবায়া ইবন রিফাআ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন-

مَنِ اغْبَرَّتْ قَدَمَاهُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

অন্য হাদিসে আছে— مَا اغْبَرَّتْ قَدَمَا عَبْدٍ فِيْ سَبِيْلِ اللهِ فَتَمَسَّهُ النَّارُ

‘আল্লাহর পথে যে বান্দার দু’পা ধুলায় মলিন হয়, তাকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করবে এমন হতে পারে না।’ (সহিহ বুখারি: ৪/২৮১১)

৩. জোহরের সুন্নত আদায়কারী

উম্মু হাবীবা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى أَرْبَعَ رَكَعَاتٍ قَبْلَ الظُّهْرِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত নামাজ পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (তাবরানী আউসাত: ৭৫৪৭)

উম্মু হাবীবা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) ইরশাদ করেন-

مَنْ صَلَّى قَبْلَ الظُّهْرِ أَرْبَعًا، وَبَعْدَهَا أَرْبَعًا، حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি জোহরের (ফরজের) আগে চার রাকাত এবং পরে চার রাকাত সালাত পড়লো, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (আবু দাউদ, তিরিমিজি, ইবনে মাজাহ ইকামাতিস সালাহ: ১১৬০)

মুসলিম শরিফের এক হাদিসে এসেছে, “যে ব্যক্তি সুর্যোদয় ও সূর্যাস্তের পূর্বে (অর্থাৎ ফজরের ও আসরের নামায আদায় করবে, সে কখনো জাহান্নামে প্রবেশ করবে না।”

৪. যার চোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি নির্গত হয়

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন-

مَا مِنْ عَبْدٍ مُؤْمِنٍ يَخْرُجُ مِنْ عَيْنَيْهِ دُمُوعٌ، وَإِنْ كَانَ مِثْلَ رَأْسِ الذُّبَابِ، مِنْ خَشْيَةِ اللَّهِ، ثُمَّ تُصِيبُ شَيْئًا مِنْ حُرِّ وَجْهِهِ، إِلَّا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে মুমিন বান্দার দুচোখ থেকে আল্লাহর ভয়ে পানি বের হয়, যদি তা মাছির মাথার পরিমাণও হয়, এবং তা চেহারা বেয়ে পড়ে, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দেন। (ইবনে মাজাহ, কিতাবুজ জুহুদ: ৪১৯৭)

৫. অসুস্থতার সময় বিশেষ কালেমা পাঠকারী

হজরত আবু সাঈদ (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন-

مَنْ تَكَلَّمَ بِهَؤُلَاءِ الْكَلِمَاتِ فِي مَرَضِهِ حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

যে ব্যক্তি তার অসুস্থতার সময় (নিচের) কালিমাগুলো পাঠ করবে, তার জন্য জাহান্নাম হারাম।

لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ، لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَلَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّهِ

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহুল মালিকুল হাক্কু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ। লা ইলাহা ইল্লল্লাহু ওয়া আল্লাহু আকবার। লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়া লা হাউলা ওয়া লা কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহ। (মুসনাদে আবি ইয়ালা: ৬১৫৩)

৬. যে ব্যক্তি সহজ-সরল নম্র-ভদ্র হয়

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন-

مَنْ كَانَ هَيِّنًا لَيِّنًا قَرِيبًا حَرَّمَهُ اللَّهُ عَلَى النَّارِ

‘যে ব্যক্তি সহজ-সরল, নম্র-ভদ্র ও বিনয়ী হয়, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম করে দিবেন।’ (মুস্তাদরাক হাকিম: ৪৩৫)

অন্য বর্ণনায় এসেছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আমি কি তোমাদের জানিয়ে দেব না, কোন ব্যক্তির জন্য জাহান্নাম হারাম এবং জাহান্নামের জন্য কোন ব্যক্তি হারাম? যে ব্যক্তি মানুষের কাছাকাছি (জনপ্রিয়), সহজ-সরল, নম্রভাষী ও সদাচারী। (তিরমিজি: ২৪৮৮)

হাদিসে বিভিন্ন আমলের পুরস্কারস্বরূপ জাহান্নাম থেকে মুক্তি, জাহান্নাম থেকে দূরে রাখার ঘোষণা কিংবা কোনো আমলকে জাহান্নামের ঢালস্বরূপ বলা হলেও উপরোক্ত বর্ণনায় সরাসরি জাহান্নাম হারাম ঘোষণা করেছেন বিশ্বনবী (স.)। তাই এ ব্যাপারে মুমিন মুসলমানের বেশি যত্নশীল হওয়া উচিত। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে উপরোক্ত আমলগুলো যথাযথ পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।