images

ইসলাম

শত্রুর সঙ্গেও ইনসাফের নির্দেশ দেয় ইসলাম

ধর্ম ডেস্ক

১৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫৩ পিএম

ইনসাফ আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের বিশেষ গুণ। প্রিয়নবী (স.) ন্যায় ও ইনসাফের প্রতীক ছিলেন। তিনি তাঁর পুরো জীবনে সমাজে ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করেছেন। কারণ, ইনসাফ প্রতিষ্ঠার নির্দেশ স্বয়ং আল্লাহ তাআলার। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ইনসাফের নির্দেশ প্রদান করেছেন।’ (সুরা নাহল: ৯০)

অন্য আয়াতে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহর (বিধানাবলী পালনের) জন্য সদাপ্রস্তুত হয়ে যাও (এবং) ইনসাফের সঙ্গে সাক্ষ্যদানকারী এবং কোনো সম্প্রদায়ের প্রতি শত্রুতা যেন তোমাদের ইনসাফ পরিত্যাগে প্ররোচিত না করে। ইনসাফ অবলম্বন করো। এ পন্থাই তাকওয়ার বেশি নিকটবর্তী এবং আল্লাহকে ভয় করে চলো। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের যাবতীয় কাজ সম্পর্কে সম্পূর্ণরূপে অবগত।’ (সুরা মায়েদা: ৮)

ইনসাফ অর্থ সমান দুই ভাগ করা, বেশি বা কম না করা। অর্থাৎ সাক্ষ্যদান, বিচার-নিষ্পত্তি ও অন্য আচার-আচরণ হতে হবে কম-বেশি ও বাড়াবাড়ি-ছাড়াছাড়ি থেকে মুক্ত। ইনসাফ মানুষের মৌলিক অধিকারের অন্যতম। ধর্ম-বর্ণ, জাত-বংশ নির্বিশেষে সব মানুষের অধিকার এটি। পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বক্ষেত্রে শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইনসাফ প্রতিষ্ঠার বিকল্প নেই। 

আরও পড়ুন: ‘ন্যায়বিচার’ আল্লাহর মহান গুণ

গভীরভাবে চিন্তা করলে বোঝা যায়, ইনসাফ হচ্ছে মানুষের উত্তম চরিত্রের সর্বাধিক বৃহৎ উপাদান। ইনসাফ ছাড়া উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া অসম্ভব। আপন-পর সবার সঙ্গে একইরকম ইনসাফ কাম্য। মুমিনদের লক্ষ করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘ইমানদাররা! তোমরা ইনসাফ প্রতিষ্ঠাকারী হয়ে যাও আল্লাহর সাক্ষীরূপে, যদিও তা তোমাদের নিজেদের বিরুদ্ধে কিংবা বাবা-মা ও আত্মীয়স্বজনের বিরুদ্ধে হয়।’ (সুরা নিসা: ১৩৫) অন্য আয়াতে এসেছে, ‘যখন তোমরা কথা বলবে তখন ন্যায্য বলবে যদিও নিকটাত্মীয়ের বিষয়ে হয়।’ (সুরা আনআম: ১৫২)

নবুয়তপ্রাপ্তির আগে নবীজি সমাজে ইনসাফ কায়েমের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন হিলফুল ফুজুল নামে একটি সংগঠন। নবীজির ইনসাফের প্রতি কুরাইশদের পূর্ণ আস্থা ছিল। এ কারণে কাবার দেয়ালে হাজরে আসওয়াদ স্থাপন নিয়ে যখন মতবিরোধ চলছিল, তখন নবীজি (স.)-কে তারা বিচারক হিসেবে গ্রহণ করে এবং তাঁর ইনসাফপূর্ণ বিচারে সবাই সন্তুষ্ট হয়।

প্রিয়নবী (স.) ইনসাফের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকতেন। কারণ সমাজ থেকে ইনসাফ উঠে গেলে জুলুম-নির্যাতন, অবিচার ও বর্বরতার অনুপ্রবেশ ঘটে। তিনি ইনসাফের গুরুত্ব সাহাবিদের মনে রোপণ করে দিয়েছিলেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘বনি ইসরাইল তাদের গণ্যমান্য পরিবারের কেউ চুরি করলে তাকে ছেড়ে দিত এবং দুর্বল কেউ চুরি করলে তারা তার হাত কেটে দিত। আল্লাহর শপথ, ফাতিমা (রা.) (যদি চুরি করে) আমি তার হাত কেটে ফেলব।’ (সহিহ বুখারি: ৩৭৩৩)

আরও পড়ুন: যে কারণে অমুসলিমরা নবীজির কাছে ঋণী

আল্লাহর ঘোর দুশমনের সঙ্গেও ন্যায়-ইনসাফ রক্ষা করা অপরিহার্য। সে আল্লাহর দুশমন—এই ভাবনায় তার প্রতি বেইনসাফির আচরণ করা হলে তা হবে ইসলামি শরিয়তের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এবার চিন্তা করুন, আল্লাহর বন্ধু ও প্রিয়দের সঙ্গে ইনসাফ রক্ষা করা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। (তাওজিহুল কোরআন)

মুসলিম ও অমুসলিমদের মধ্যে কোনো ঘটনা ঘটলে তিনি সত্য ও ন্যায় অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নিতেন এবং নিরপেক্ষভাবে কাজ করতেন। আবদুল্লাহ (ইবনে মাসউদ) (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যদি কোনো মুসলিমের অর্থ-সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে, তাহলে সে আল্লাহর সমীপে এমন অবস্থায় হাজির হবে যে আল্লাহ তার ওপর রাগান্বিত থাকবেন। এ কথা সম্পর্কে আশআস (রা.) বলেন, আল্লাহর কসম। এটা আমার সম্পর্কেই ছিল, আমার ও এক ইহুদি ব্যক্তির সঙ্গে যৌথ মালিকানায় একখণ্ড জমি ছিল। সে আমার মালিকানার অংশ অস্বীকার করে বসল। আমি তাকে নবী (স.)-এর কাছে নিয়ে গেলাম। রাসুলুল্লাহ (স.) আমাকে বলেন, তোমার কোনো সাক্ষী আছে কি? আমি বললাম, না। তখন তিনি ইহুদিকে বলেন, তুমি কসম করো। আমি তখন বললাম, হে আল্লাহর রাসুল, সে তো কসম করবে এবং আমার সম্পত্তি নিয়ে নেবে। তখন আল্লাহ তাআলা (এ আয়াত) নাজিল করেন, যারা আল্লাহর সঙ্গে কৃত প্রতিশ্রুতি এবং নিজেদের শপথকে তুচ্ছমূল্যে বিক্রি করে... আয়াতের শেষ পর্যন্ত (সুরা ইমরান: ৭৭) (সহিহ বুখারি: ২২৫৬)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইনসাফের ব্যাপারে সর্বদা সচেতন থাকার এবং সারাজীবন ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় কাজ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।