images

ইসলাম

ঈদের নামাজের নিয়ত, তাকবির ও সুন্নত-মোস্তাহাব 

ধর্ম ডেস্ক

২৭ এপ্রিল ২০২২, ০৪:১৯ পিএম

‘ঈদ’ আরবি শব্দ, অর্থ- আনন্দ, আরেক অর্থ- উৎসব, এমন উৎসব, যা বারবার ফিরে আসে। ‘ফিতর’ শব্দটিও আরবি, যার অর্থ রোজা ভাঙা। সুতরাং ঈদুল ফিতর মানে রোজা শেষ হওয়ার আনন্দ বা উৎসব। ঈদুল ফিতর প্রতিবছর চান্দ্র বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী শাওয়াল মাসের ১ তারিখে নির্দিষ্ট রীতিতে এক অনন্য আনন্দ-বৈভব বিলাতে ফিরে আসে। এটি এমন এক নির্মল আনন্দের আয়োজন, যেখানে মানুষ আত্মশুদ্ধির আনন্দে পরস্পরের মেলবন্ধনে ঐক্যবদ্ধ হয়।  

রাসুলুল্লাহ (স.) সানন্দে ঘোষণা করেন, ‘প্রতিটি জাতিরই আনন্দ-উৎসব রয়েছে, আমাদের আনন্দ-উৎসব হচ্ছে এই ঈদ।’ (বুখারি ও মুসলিম)

ইসলামে ঈদের প্রবর্তন হয়েছে দ্বিতীয় হিজরির মাঝামাঝি সময়ে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত আছে যে, আল্লাহর রাসুল (সা.) যখন মদিনায় আসেন, তখন দেখেন যে সেখানকার লোকরা বছরে দুদিন (নওরোজ ও মেহেরজান) আনন্দ করে, খেলাধুলা করে। তিনি বললেন, আল্লাহ তাআলা তোমাদের এ দুদিনের পরিবর্তে আরও বেশি উত্তম ও কল্যাণকর দুটি দিন দিয়েছেন। ১. ঈদুল আজহা। ২. ঈদুল ফিতর। (আবু দাউদ: ১/১৬১)

ঈদের নামাজ

ঈদের নামাজ দুই রাকাত। আর তা ওয়াজিব। এতে আজান-ইকামত নেই। যাদের ওপর জুমার নামাজ ওয়াজিব, তাদের ওপর ঈদের নামাজও ওয়াজিব। ঈদের নামাজ ময়দানে পড়া উত্তম। তবে মক্কাবাসীর জন্য মসজিদে হারামে উত্তম। শহরের মসজিদগুলোতেও ঈদের নামাজ জায়েজ আছে। (বুখারি: ১/১৩১, ফতোয়া শামি: ১/৫৫৫, ১/৫৫৭, আল মুহাজ্জাব: ১/৩৮৮)

ঈদের নামাজের সময়
সূর্য উদিত হয়ে এক বর্শা (অর্ধহাত) পরিমাণ উঁচু হওয়ার পর থেকে শুরু হয়ে দ্বিপ্রহর পর্যন্ত বাকি থাকে। তবে ঈদুল ফিতরের নামাজ একটু দেরিতে পড়া সুন্নত, যেন নামাজের আগেই বেশি থেকে বেশি সদকাতুল ফিতর আদায় হয়ে যায়। (ফাতহুল কাদির: ২/৭৩, আল মুগনি: ২/১১৭)

নামাজের নিয়ত

ইসলামে নিয়ত খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সকল কিছুই নিয়তের উপর নির্ভরশীল। নিয়ত আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো, মনের ইচ্ছা, সঙ্কল্প বা প্রতিজ্ঞা। এটি অন্তরের কাজ, জিহ্বার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কোনো কাজের শুরুতে মনের মধ্যে যে ইচ্ছাপোষণ করা হয়, সেটাকেই নিয়ত বলা হয়। তাই মনে মনে নির্দিষ্ট করতে হবে যে, আমি এই ঈদের নামাজ কিবলামুখী হয়ে ইমামের পেছনে অতিরিক্ত ছয় তাকবিরের সঙ্গে আদায় করছি।

ঈদের নামাজের তাকবির ও নিয়ম
ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয়টি তাকবির ওয়াজিব। প্রথম রাকাতে তাকবিরে তাহরিমা ও ‘ছানা’র পর তিন তাকবির। দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর রুকুতে যাওয়ার আগে তিন তাকবির। এই তাকবিরগুলো বলার সময় ইমাম-মুক্তাদি সবাইকে হাত ওঠাতে হবে। তৃতীয় তাকবির ছাড়া প্রতিটি তাকবিরের পর হাত ছেড়ে দিতে হবে। কেউ যদি এই তাকবিরগুলো না পায়, তাহলে সে রুকুতে থাকা অবস্থায় আদায় করে নেবে। কারো পূর্ণ এক রাকাত ছুটে গেলে সে দ্বিতীয় রাকাতে কেরাতের পর তাকবিরগুলো আদায় করে নেবে। কেরাতের আগে আদায় করারও সুযোগ রয়েছে। নামাজ শেষে খুতবা প্রদান ইমামের জন্য সুন্নত, তা শ্রবণ করা নামাজির জন্য ওয়াজিব। (ফতোয়ায়ে শামি: ১/৫৫৯, ৫৬০) 

ঈদের দিনের সুন্নত ও মুস্তাহাব
১. মিসওয়াক করা সুন্নত। ২. গোসল করা সুন্নত। ৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা সুন্নত। ৪. কিছু খেয়ে ঈদগাহে যাওয়া সুন্নত। বিজোড় সংখ্যায় যেকোনো মিষ্টিদ্রব্য খাওয়া উত্তম; খেজুর অতি উত্তম। ৫. ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া উত্তম। এক রাস্তা দিয়ে যাওয়া, অন্য রাস্তা দিয়ে আসা মুস্তাহাব। ৬. ঈদগাহে যাওয়ার পথে নিচুস্বরে তাকবির (আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার, ওয়া লিল্লাহিল হামদ) পড়া সুন্নত। ৭. সাধ্যমতো উত্তম পোশাক পরিধান করা মুস্তাহাব। ৮. নামাজের জন্য ঈদগাহে যাওয়ার আগে সদকায়ে ফিতর আদায় করা সুন্নত (দাতা ও গ্রহীতার সুবিধার্থে রমজানেও প্রদান করা যায়)। ৯. ঈদের দিন চেহারায় খুশির ভাব প্রকাশ করা এবং কারো সঙ্গে দেখা হলে হাসিমুখে কথা বলা মুস্তাহাব। ১০. আনন্দ-অভিবাদন বিনিময় করা মুস্তাহাব। (ফতোয়ায়ে শামি : ১/৫৫৬, ৫৫৭, ৫৫৮, হেদায়া: ২/৭১, বুখারি: ১/১৩০, ইবনে মাজাহ: ৯২)

পরিচিত কারো সঙ্গে কিছুদিন বা অনেক দিন পর দেখা হলে উভয়ে ডান গলা মিলিয়ে মহব্বতের সঙ্গে একবার কোলাকুলি করা এবং ‘আল্লাহুম্মা জিদ মহাব্বাতি লিল্লাহি ওয়া রাসুলিহ’ পড়া সুন্নত। তবে ঈদের দিন জরুরি মনে করে কোলাকুলি করা বিদআত। অন্যথায় জায়েজ। (তিরমিজি: ২/১০২, মাহমুদিয়া: ২৮/২১১, ইসলাহি খুতুবাত: ১/১৮৬-১৮৭)

ঈদ আল্লাহর নেয়ামত। নেয়ামতের চাহিদা হলো, এর শুকরিয়া আদায় করা এবং অবাধ্য আচরণ না করা। এসব দিকে লক্ষ রাখা সকল মুসলমানের কর্তব্য। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ঈদের দিনের যাবতীয় সুন্নত-মুস্তাহাবগুলো মেনে চলার এবং আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করার তাওফিক দান করুন।