ধর্ম ডেস্ক
১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:৫০ পিএম
ইসলামে দোয়া একটি স্বতন্ত্র ইবাদত। সাহাবি নোমান বিন বাশির (রা.) এর সূত্রে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘দোয়াই ইবাদত।’ (আবু দাউদ: ১৪৮১) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘মহান আল্লাহর কাছে দোয়ার চেয়ে অধিক সম্মানিত কোনো কিছু নেই’ (ইবনে মাজাহ: ৩৮২৯)
দোয়া কখনো বিফলে যায় না। বান্দার কোনো দোয়াই আল্লাহর কাছে ফেলনা নয়। তিনি কোনো না কোনোভাবে দোয়ার প্রতিদান দেন। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দেব।’ (সুরা গাফির: ৬০)
আবু সাঈদ আল-খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেন, কোনো মুসলিম পাপাচার বা আত্মীয় সম্পর্ক ছিন্ন করার দোয়া ছাড়া যেকোনো দোয়া করলে আল্লাহ তাকে তিনটি জিনিসের যেকোনো একটি দান করেন—১. হয় দ্রুত তার দোয়া কবুল করেন অথবা ২. তা পরকালের জন্য সঞ্চিত রাখেন অথবা ৩. কোনো ক্ষতি (বিপদাপদ, সমস্যা ইত্যাদি) অপসারণ করেন।’ (আল আদাবুল মুফরাদ: ৭১০, মুসনাদে আহমদ: ১১১৩৩)
আরও পড়ুন: সুন্দর ও গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট দোয়া
তাই দোয়ার পর তাৎক্ষণিক ফল না পেলে হতাশ হওয়া অনুচিত। দোয়া করতে থাকাই বুদ্ধিমানের কাজ। মূলত মুমিনের দায়িত্ব হলো- আল্লাহর সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট থাকা ও ধৈর্যধারণ করা। কারণ একজন অনুগত বান্দা হিসেবে মাথায় রাখতে হবে যে, আল্লাহ কার দোয়া কবুল করবেন আর কার দোয়া কবুল করবেন না, কখন কবুল করবেন আর কখন করবেন না এটা সম্পূর্ণ তাঁরই ইচ্ছাধীন। তিনি সঙ্গেসঙ্গে কিছু দিলে সেটা যেমন হেকমতপূর্ণ, আবার দেরিতে দিলে বা বঞ্চিত রাখলে তাও প্রজ্ঞাপূর্ণ।
সুতরাং আল্লাহর সিদ্ধান্তের প্রতি সন্তুষ্ট থাকতে হবে। কারণ তিনি বান্দার জন্য উত্তম সিদ্ধান্তই নিয়ে থাকেন। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর অবশ্যই তোমরা এমন বহু কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর অবশ্যই এমন বহু কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ সব কিছু জানেন; কিন্তু তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা: ২১৬)
আরও পড়ুন: বান্দার প্রতি আল্লাহর ভালোবাসা কেমন?
সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলেন, বান্দাকে না দেওয়াটাও একটা দান। এটা এজন্য যে তিনি তাকে কৃপণতা ও অন্য খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখেন। মূলত, তিনি বান্দার কল্যাণের দিকে লক্ষ্য রাখেন। অতঃপর তাকে না দেওয়াটাও কল্যাণকর বিষয়।’ (মাদারিজুস সালিকিন, পৃষ্ঠা-২/২১৫)
অতএব, দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে দোয়া করতে হবে। আল্লাহর সম্পর্কে সুধারণা পোষণ করতে হবে। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ এমন কথা বলবে না যে হে আল্লাহ! আপনি যদি চান আমাকে ক্ষমা করে দিন, আপনি যদি চান আমার ওপর দয়া করুন, আপনি যদি চান আমাকে জীবিকা দান করুন; বরং দৃঢ়তার সঙ্গে (আত্মবিশ্বাস নিয়ে) দোয়া করবে। মনে রাখবে, আল্লাহ যা চান, তা-ই করেন, তাঁকে কেউ বাধ্য করতে পারে না।’ (বুখারি: ৭৪৭৭) আর বান্দা মহান আল্লাহ সম্পর্কে যেমন ধারণা পোষণ করে, মহান আল্লাহও তার সঙ্গে ওই ধরনের আচরণ করেন। (দ্র. সহিহ বুখারি: ৭৪০৫; মুসলিম: ২৬৭৫)
উল্লেখ্য, যেকোনো সময় আল্লাহর কাছে দোয়া করা যায়। তবে রাতের শেষাংশ দোয়ার সবচেয়ে উপযোগী সময়। রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যখন রাতের এক-তৃতীয়াংশ বাকি থাকে, তখন আল্লাহ তাআলা নিকটবর্তী আসমানে নেমে আসেন এবং ঘোষণা করতে থাকেন, কে আছ এমন যে আমাকে ডাকবে? আমি তার ডাকে সাড়া দেব। কে আছ রিজিকপ্রার্থী, আমি তাকে দান করব। কে আছ ক্ষমাপ্রার্থী, আমি তাকে ক্ষমা করে দেব।’ (সহিহ বুখারি: ১১৪৫; মুসলিম: ৭৫৮)