images

ইসলাম

ফরজ নামাজের পর মাসনুন দোয়াগুলো জেনে নিন

ধর্ম ডেস্ক

২৩ নভেম্বর ২০২৩, ০৬:৩০ পিএম

প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর কিছু মাসনুন দোয়া ও আমল রয়েছে। যেগুলো রাসুলুল্লাহ (স.) নিজে করতেন; সাহাবিদেরও আমল করার উপদেশ দিতেন। ওসব দোয়া ও আমল একদিকে অসীম সওয়াব লাভের কারণ, একইসঙ্গে এতে লাভ হয় বরকতময় জীবন। হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রত্যেক ফরজ নামাজের শেষে কিছু দোয়া আছে, যে ব্যক্তি ওইগুলো পড়ে বা কাজে লাগায়— সে কখনো ক্ষতিগ্রস্থ হয় না। (সহিহ মুসলিম: ১২৩৭)

এখানে প্রত্যেক নামাজের পরের দোয়া, তাসবিহ, জিকির ও আমলগুলো তুলে ধরা হলো।

১. আস্তাগফিরুল্লাহ বলা: রাসুল (স.) প্রত্যেক ফরজ নামাজ শেষে ৩ বার আসতাগফিরুল্লাহ বলতেন। (মুসলিম: ১২২২)

২. নির্দিষ্ট দোয়া পাঠ: আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ার পর এই দোয়া পড়া- اللهم أنت السلام، ومنك السلام، تباركت يا ذا الجلال والإكرام উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আনতাস সালাম ওয়া মিনকাস সালাম, তাবারকতা ইয়া যাল-জালা-লী ওয়াল ইকরাম’। নবীজি এই দোয়াটি পড়তেন । (মুসলিম: ১২২১)

৩. আয়াতুল কুরসি পড়া: রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রতেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়বে, তার জন্য জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ব্যতীত আর কোনো বাঁধা থাকবে না।’ (নাসায়ি: ৯৪৪৮; তাবারানি: ৭৮৩২)

আরও পড়ুন: আয়াতুল কুরসি আমলের নিয়ম, ফজিলত

৪. তিন জিকিরের আমল: সুবহানাল্লাহ ৩৩ বার, আলহাদুলিল্লাহ ৩৩ বার, আল্লাহু আকবার ৩৩ বার এবং একবার ‘লা-ইলা-হা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারিকা লাহু; লাহুল মুলকু; ওয়ালাহুল হামদু; ওয়াহুওয়া আলা- কুল্লি শাইয়িন ক্বাদির’ পাঠ করা। এই জিকিরগুলো পড়লে গুনাহ সমুদ্রের ফেনারাশির মতো অসংখ্য হলেও তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (মুসলিম: ১২৪০)

৫. ফজর-মাগরিবে ৭ বার জাহান্নাম থেকে মুক্তির দোয়া: ফজর ও মাগরিবের ফরজ নামাজের পর ৭ বার اللَّهُمَّ أَجِرْنِي مِنَ النَّارِ উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা আজিরনী মিনান নার’ অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমাকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দান করুন’ দোয়াটি পড়া। হাদিসে এসেছে, সাত বার এই দোয়া পাঠকারী দিন বা রাতে মারা গেলে আল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করবেন। (আবু দাউদ: ৫০৮০)

৬. ফজর-মাগরিবে সুরা ইখলাস, ফালাক, নাস ৩ বার: প্রতিদিন ফরজ ও মাগরিবের ফরজ নামাজের পর সুরা ইখলাস, ফালাক্ব ও সুরা নাস, প্রত্যেকটি ৩ বার করে পড়া সুন্নত। রাসুল (স.) বলেন, সন্ধ্যায় ও সকালে উপনীত হয়ে তিনবার সুরা ইখলাস, সুরা নাস ও ফালাক পড়বে। এতে তুমি যাবতীয় অনিষ্ট হতে রক্ষা পাবে। (আবু দাউদ: ৫০৮২)

আরও পড়ুন: হাদিসের বর্ণনায় বিশেষ ফজিলতপূর্ণ কয়েকটি সুরা

৭. জান্নাতলাভের বিশেষ দোয়া: رَضيتُ بالله رَبّاً ، وبالإسلامِ ديناً ، وبمحمَدٍ نَبِيًّا وَّرَسولاً উচ্চারণ: রাদিতু বিল্লাহি রাব্বাউঁ ওয়া বিল ইসলামী দ্বিনাউঁ ওয়া বিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যাঁও ওয়া রাসুলা’। অর্থ: “আমি আল্লাহকে রব, ইসলামকে দীন এবং মুহাম্মদ (স.)-কে রাসুল হিসেবে সন্তুষ্টচিত্তে মেনে নিয়েছি।” রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন- “যে ব্যক্তি নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করবে, তার জন্যে জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। (মুসলিম: ১৮৮৪; আবু দাউদ: ১৫২৯; মুজামু কাবির: ৮৩৮)

অন্য হাদিসের বর্ণনায়—রাদ্বিতু বিল্লাহি রাব্বা, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনাঁও, ওয়াবি মুহাম্মাদিন নাবিয়্যা— এই দোয়াটি ৩ বার, ফজর ও মাগরিবের পর পড়লে রাসুল (স.) হাত ধরে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, আল্লাহ উক্ত ব্যক্তিকে সন্তুষ্ট করবেন। (ইবনে আবি শাইবা: ০৬/৩৬)

৮. সকল অনিষ্ট থেকে রক্ষা পাওয়ার দোয়া তিন বার: بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الأَرْضِ وَلاَ فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ উচ্চারণ: বিসমিল্লা-হিল্লাযি লা ইয়াদুর্‌রু মা‘আস্‌মিহি শাইয়ূন ফিল আরদি, ওয়ালা ফিস্‌ সামায়ি ওয়া হুয়াস্‌ সামিউল আলিম। অর্থ: ‘আল্লাহ তাআলার নামে যাঁর নামের বরকতে আকাশ ও মাটির কোনোকিছুই কোনো অনিষ্ট করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞানী।’ প্রতিদিন সকাল-সন্ধ্যায় যে ব্যক্তি এ দোয়াটি তিনবার পাঠ করবে কোনোকিছুই তার কোনো অনিষ্ট করতে পারবে না।’ (তিরমিজি: ৩৩৮৮; ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯) 

৯. ফজর ও মাগরিবের পর সুরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত পড়া: আউযুবিল্লাহিস সামিয়িল আলিমি, মিনাশ শাইতানির রজিম ৩ বার পড়ে সূরা হাশরের শেষ ৩ আয়াত ১ বার পড়ার কথা রয়েছে হাদিসে। এর ফজিলত বর্ণনায় ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি এই আমল করবে আল্লাহ তাআলা তাঁর জন্য সত্তর হাজার রহমতের ফেরেশতা নিযুক্ত করে দিবেন। তাঁরা সন্ধ্যা পর্যন্ত পাঠকারীর জন্য রহমতের দোয়া করবে। সেদিন সে মারা গেলে শহিদের মৃত্যু হাসিল হবে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় এভাবে পাঠ করবে, সে-ও সকাল পর্যন্ত এই মর্তবা লাভ করবে।’ (তিরমিজি: ২৯২২)

আরও পড়ুন: ১১ শ্রেণির মানুষের জন্য ফেরেশতারা দোয়া করেন

১০. সকাল-সন্ধ্যায় ঋণ ও দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তির দোয়া: اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الهَمّ وَالْحَزَنِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْعَجْزِ وَالْكَسَلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنَ الْجُبْنِ وَالْبُخْلِ وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ غَلَبَةِ الدَّيْنِ وَقَهْرِ الرِّجَالِ উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আ’উযুবিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউযুবিকা মিনাল আজযি ওয়াল কাসালি ওয়া আউযুবিকা মিনাল জুবনি ওয়াল বুখলি, ওয়া আউযুবিকা মিন গালাবাতিদ-দায়নি ওয়া কাহরির রিজাল। অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট যাবতীয় চিন্তা-ভাবনা হতে আশ্রয় প্রার্থনা করছি, আমি আপনার নিকট দুর্বলতা ও অলসতা হতে আশ্রয় কামনা করছি, আপনার নিকট কাপুরুষতা ও কৃপণতা হতে নাজাত কামানা করছি এবং আমি আপনার নিকট ঋণভার ও মানুষের দুষ্ট প্রভাব হতে পরিত্রাণ চাচ্ছি।’ রাসুল (স.) এ দোয়াটি শিক্ষা দিয়ে আবু উমামা (রা.)-কে বলেন- তুমি সকাল- সন্ধায় দোয়াটি পড়বে। আল্লাহ তোমার দুশ্চিন্তা দূরীভূত করবেন এবং তোমার কর্জ পরিশোধের ব্যবস্থা করবেন। আবু উমামা (রা.) বলেন, অতঃপর আমি ওইরূপ আমল করি, যার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ তাআলা আমার চিন্তা-ভাবনা বিদূরিত করেন এবং ঋণ পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেন।’ (আবু দাউদ: ১৫৫৫)

১১.  সাইয়্যিদুল ইস্তেগফার পাঠ করা: ইস্তেগফারটি হলো— اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لاَ إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ، خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ، وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ، أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ، أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ، وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي، إِنَّهُ لاَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْت অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আপনি আমার প্রতিপালক। আপনি ছাড়া আর কোন উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন। আর আমি আপনার গোলাম। আমি আপনার ওয়াদা-প্রতিশ্রুতির ওপর যথাসাধ্য আছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। আমি আমার ওপর আপনার অনুগ্রহ স্বীকার করছি। আবার আমার গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। অতএব, আমাকে ক্ষমা করে দিন। কেননা আপনি ছাড়া আর কেউ গুনাহসমূহ ক্ষমা করতে পারবে না।’ রাসুল (স.) বলেন, যদি কেউ দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে সকাল-সন্ধ্যা ইস্তেগফারটি পড়ে এবং ওই দিনে বা রাতে ইন্তেকাল করে, তবে সে জান্নাতি হবে।’ (বুখারি: ৬৩০৬)

১২. সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি পড়া: রাসুল (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার দোয়াটি বলে, তার পাপগুলো মুছে ফেলা হয়, যদিও তা সাগরের ফেনারাশির সমান হয়। (বুখারি: ৬৪০৫; মুসলিম: ২৬৯১)

১৩. দরুদ পাঠ: নবীজির ওপর দরুদ সাধারণত প্রত্যেক নামাজের পর পাঠ করা উত্তম। কোনো বর্ণনায় ফজর-মাগরিবের ফরজ নামাজের পর ১০ বার দরুদ পাঠের কথা রয়েছে। ফজিলত বর্ণনায় বলা হয়েছে, এতে কেয়ামতের দিন রাসুল (স.)-এর শাফাআত লাভ হবে। মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে উক্ত আমলগুলো নিয়মিত পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।