images

ইসলাম

নতুন ঘরে ওঠার আমল

ধর্ম ডেস্ক

২১ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:৫৪ পিএম

মানুষের বসবাসের জন্য ঘরবাড়ি প্রয়োজন। চাই তা পাকা হোক বা মাটি, বহুতল বা ঝুপড়ি। নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী মানুষ ঘরবাড়ি নির্মাণ করবে—এক্ষেত্রে কোনো বিধি-নিষেধ ইসলামে নেই। কিন্তু মুসলমানের ঘরবাড়ির ভেতরের পরিবেশ ও প্রবেশ-বের হওয়ার ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম-নীতি রয়েছে। বসবাসের উদ্দেশ্য কেউ যদি নতুন ঘর নির্মাণ করেন, তার জন্য সুন্নাহ সমর্থিত কিছু আমল রয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো।

১. ঘর নির্মাণে হালাল অর্থ খরচ করা
হারাম অর্থ পরকালীন ভয়াবহ শাস্তির কারণ। পাশাপাশি দুনিয়ারও সকল অশান্তির মূল। তাই হারাম টাকায় যেন ঘরবাড়ি নির্মাণ না করা হয়। কেউ যদি না বুঝে হারাম টাকায় ঘর নির্মাণ করেন, তাদের প্রতি কোরআন হাদিসের আলোকে ফুকাহায়ে কেরামের নির্দেশনা হলো- যে পরিমাণ হারাম মাল ব্যয় করা হয়েছে তার মালিক জানা থাকলে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে। আর মালিক জানা না থাকলে তার পক্ষ হতে ওই পরিমাণ অর্থ সদকা করে দিতে হবে। (ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৪২; আদ্দুররুল মুখতার: ২/২৯২)

২. শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি যথাসময়ে প্রদান
নবনির্মিত ঘর যেন কারো হক মেরে খাওয়ার বা অভিশাপের মাধ্যম না হয়, সেজন্য ঘর নির্মাণে শ্রমিকদের ন্যায্য মজুরি উত্তমভাবে আদায় করা। হাদিসে এসেছে, ‘শ্রমিকের গায়ের ঘাম শুকানোর আগেই তাকে তার পারিশ্রমিক প্রদান করো।’ (ইবনু মাজাহ: ২৪৪৩)

আরও পড়ুন: ইসলামে শ্রমিকের মর্যাদা ও অধিকার

৩. শুকরিয়ার নামাজ পড়া
ঘর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর নতুন ঘরে দুই রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করা উত্তম। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সামনে কোনো আনন্দের উপলক্ষ এলে দুই রাকাত শুকরানা নামাজ আদায় করতেন। যেহেতু নবনির্মিত ঘরটি আপনাদের জন্যে আনন্দের কারণ, তাই আল্লাহ তাআলার শুকরিয়া আদায় হিসেবে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করা উত্তম। শুকরিয়ার নামাজের নিয়ম হলো— এর নির্দিষ্ট রাকাতসংখ্যা নেই, কিন্তু দুই রাকাতের কম না হওয়া চাই। আর তা নিষিদ্ধ ও মাকরুহ সময়ে আদায় করা যাবে না। অন্যান্য নফল নামাজের মতো করেই সালাতুশ শোকর আদায় করতে হবে। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া: ৭/১২৫)

৪. সুরা বাকারা তেলাওয়াত
সুনির্দিষ্ট কোনো আয়োজন বা আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই অধিক পরিমাণে কোরআনুল কারিম তেলাওয়াত করা নতুন ঘরের জন্যে বরকতের কারণ। বিশেষ করে সুরা বাকারা ঘরে তেলাওয়াত করলে দুষ্ট শয়তান ও জ্বিনের উপদ্রব থেকে মুক্ত থাকা যায়। হাদিসে এসেছে- ‘তোমরা তোমাদের ঘরগুলোকে কবরস্থান বানিয়ো না। নিশ্চয়ই শয়তান এমন ঘর থেকে পালিয়ে যায়, যে ঘরে সুরা বাকারা পাঠ করা হয়। (মুসলিম: ৭৮০, মুসনাদে আহমদ: ৮৪৪৩, ইবনে হিব্বান: ৭৮৩)

৫. ঘরে প্রাণীর ছবি-প্রতিকৃতি না রাখা
ঘরে মানুষের বা অন্যান্য জীব-জন্তুর ছবি, প্রতিকৃতি বা ভাস্কর্য রাখা যাবে না। শরয়ী দৃষ্টিকোণ থেকে এগুলো ঝুলিয়ে রাখা নাজায়েজ। পাশাপাশি এগুলো রাখলে ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করেন না। ঘরে বরকত আসে না। হাদিস শরিফে বর্ণিত হয়েছে, ‘ফেরেশতাগণ এমন ঘরে প্রবেশ করেন না যে ঘরে কোনো প্রাণীর ছবি বা প্রতিকৃতি আছে।’ (সহিহ মুসলিম: ২১১২) অন্য বর্ণনায় এসেছে- ‘রাসুলুল্লাহ (স.) ঘরে ছবি রাখতে ও ছবি অঙ্কন করতে নিষেধ করেছেন।’ (তিরমিজি: ১৭৪৯)

আরও পড়ুন: মৃত ব্যক্তির ছবি ফেসবুকে প্রচার জায়েজ?

৬. আজান দেওয়া
নতুন ঘরে ওঠার ক্ষেত্রে জ্বিন-ভূত বা শয়তান তাড়ানোর জন্যে আজান দেয়ারও অনুমতি আছে। হাদিসে দেখা যায়, আজানের ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে শয়তান বায়ু ত্যাগ করতে করতে পালিয়ে যায়। এমনকি এলাকা ছেড়ে বহু দূরে চলে যায়। (বুখারি: ৬১০) তবে নতুন ঘরে ওঠার সময় আজান দেওয়াকে সুন্নত বা মোস্তাহাব মনে করা যাবে না। 

উল্লেখ্য, নতুন ঘরে উঠার ক্ষেত্রে কিছু বিদআতের প্রচলন রয়েছে সমাজে। ওসব থেকে বিরত থাকতে হবে। শয়তান বিদআতকে বেশি পছন্দ করে। এমনকি জেনা-ব্যভিচার, খুন-খারাবি করলে সে যতটা খুশি হয় তার চেয়ে বেশি খুশি হয় সুন্নত ছেড়ে বিদআতে লিপ্ত হলে। প্রসিদ্ধ তাবেয়ি সুফিয়ান সাওরি বলেন- ‘ইবলিসের নিকট নাফরমানির চেয়েও বিদআত বেশি প্রিয়। কারণ নাফরমানি থেকে তাওবা করার সম্ভাবনা থাকে, কিন্তু বিদআত থেকে তাওবা করার কোনো সম্ভাবনা থাকে না।’ (শাতিবি, আলইতিসাম: ১/১১; ইমাম সুয়ুতি, আলআমরু বিল ইত্তিবা পৃ-১৯)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে প্রত্যেক বিষয়ে সুন্নাহর অনুসরণ করার এবং বিদআত থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।