images

ইসলাম

রুকু-সেজদায় ধীরস্থিরতার নির্দেশনা হাদিসে

ধর্ম ডেস্ক

১৭ নভেম্বর ২০২৩, ০৩:০১ পিএম

নামাজ ইসলামের গুরুত্বপূর্ণ রুকন ও ফরজ ইবাদত। ঈমান আনার পর একজন মুমিনের বড় দায়িত্ব হলো ৫ ওয়াক্ত নামাজ পড়া। যা নির্দিষ্ট সময়ে যথাযথভাবে আদায় না করলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। এমন যেন না হয়, সারাজীবন নামাজ পড়লাম, কিন্তু কোনো উপকার হলো না। তাই যথাযথভাবে নামাজ পড়তে হবে। নামাজ হলো মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ। হাদিসে এসেছে, ‘মুমিন যখন নামাজে থাকে সে তার প্রতিপালকের সঙ্গে নিভৃতে কথা বলে।’ (সহিহ বুখারি: ৪১৩)

তাই নামাজে তাড়াহুড়া করা সমীচীন নয়। আমাদের জন্য আবশ্যক হলো- কোরআন ও সুন্নাহর নির্দেশিত পন্থায় নামাজ আদায় করা। রুকু শেষে সোজা হয়ে দাঁড়ানো ও দুই সেজদার মাঝখানে স্থির হয়ে বসার কঠিন নির্দেশনা রয়েছে হাদিসে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত এক হাদিসে এসেছে, ‘এক সাহাবি মসজিদে এসে নামাজ আদায় করলেন। রাসুলুল্লাহ (স.) মসজিদের এক কোনায় অবস্থান করছিলেন। সাহাবি এসে তাঁকে সালাম দিলেন। নবীজি (স.) তাকে বললেন, যাও তুমি আবার নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। সাহাবি ফিরে গেলেন এবং নামাজ আদায় করলেন। অতঃপর নবীজি (স.)-কে সালাম করলেন। তিনি বললেন, তোমার প্রতিও সালাম। তুমি ফিরে যাও এবং নামাজ আদায় করো। কেননা তুমি (যথাযথভাবে) নামাজ আদায় করোনি। তৃতীয়বার সাহাবি বললেন, আমাকে অবগত করুন।

তখন নবীজি (স.) বললেন, যখন তুমি নামাজে দাঁড়াবে তার আগে ভালোভাবে অজু করবে। অতঃপর কেবলার দিকে ফিরবে এবং তাকবির দেবে। কোরআনের যতটুকু তোমার কাছে সহজ মনে হয় তা পাঠ করবে। অতঃপর ধীরস্থিরভাবে রুকু করবে এবং রুকু থেকে মাথা উঠিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। এরপর ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে ধীরস্থিরভাবে সোজা হয়ে বসবে। আবার ধীরস্থিরভাবে সেজদা করবে এবং সেজদা থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। অতঃপর পুরো নামাজ এভাবে আদায় করবে।’ (বুখারি: ৬৬৬৭)

আরও পড়ুন: নামাজ আল্লাহর কাছাকাছি পৌঁছার তাৎক্ষণিক মাধ্যম

উপরোক্ত হাদিসটি সুন্দর নামাজ কীভাবে হয়, তারই এক চমৎকার উপস্থাপনা। অনেক মুসল্লি রুকু-সেজদায় ধীরস্থিরতার ব্যাপারে অবহেলা করে থাকেন। ফলে নবীজির নির্দেশনা অনুযায়ী তার নামাজ হয় না। যারা রুকু-সেজদা যথাযথভাবে আদায় করে না, তাদের চোর আখ্যা দিয়েছেন নবীজি (স.)। হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘মানুষের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বড় চোর ওই ব্যক্তি যে তার নামাজ চুরি করে। সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, হে আল্লাহর রাসুল! সে কিভাবে নামাজ চুরি করে? তিনি বলেন, সে নামাজে রুকু ও সিজদা পূর্ণ করে না।’ (মুসনাদে আহমদ: ২২৬৯৫)

নামাজের ধীরস্থিরতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা নবীজি (স.) একদিকে নামাজের বিধানগুলো ধীরস্থিরভাবে আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকে ধীরস্থিরতা অবলম্বন না করলে নামাজ শুদ্ধ হবে না বলে জানিয়েছেন। নবীজির ইরশাদ- ‘কোনো ব্যক্তি যে পর্যন্ত না রুকু-সেজদায় তার পৃষ্ঠদেশ সোজা করবে, সে পর্যন্ত তার সালাত যথার্থ হবে না।’ (আবু দাউদ: ৮৫৫; মেশকাত: ৮৭৮)

আরও পড়ুন: আউয়াল ওয়াক্তে নামাজ পড়ার ফজিলত

অন্য হাদিসে এসেছে, এক ব্যক্তি ঠোকর মেরে রুকু-সেজদা করছিল, রাসুলুল্লাহ (স.) তা দেখে সাহাবিদের বললেন, ‘তোমরা কি এ লোকটিকে লক্ষ্য করেছ? এভাবে সালাত আদায় করে কেউ যদি মারা যায়, সে মুহাম্মদের মিল্লাত ছাড়া অন্য মিল্লাতে মারা যাবে। কাক যেমন রক্তে ঠোকর মারে সে তেমনি করে তার সালাতে ঠোকর মারছে। যে ব্যক্তি রুকু করে আর সেজদায় গিয়ে ঠোকর মারে তার দৃষ্টান্ত সেই ক্ষুধার্ত লোকের ন্যায়, যে একটি দু’টির বেশি খেজুর খেতে পায় না। দু’টি খেজুরে তার কতটুকু ক্ষুধা মিটাতে পারে?’ (সহিহ ইবনে খুজায়মা: ৬৬৫; আলবানি, ছিফাতু সালাতিন নাবী, পৃ-১৩১)

আরও পড়ুন: নামাজ কাজা থাকলে পরকালে কী হবে?

সহিহ বুখারিতে এসেছে, জায়দ ইবনু ওয়াহাব (রহ.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হুজাইফা (রা.) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে রুকু-সেজদা ঠিকমত আদায় করছে না। তিনি তাকে বললেন, তোমার সালাত হয়নি। যদি তুমি (এই অবস্থায়) মারা যাও, তাহলে আল্লাহ তাআলা মুহাম্মদ (স.)-কে যে আদর্শ দিয়েছেন সে আদর্শ হতে বিচ্যুত অবস্থায় মারা যাবে। (সহিহ বুখারি: ৭৯১; ফাতহুল বারি: ২/২৭৪ পৃ)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে মনোযোগ, একনিষ্ঠতা ও ধীরস্থিরতার সঙ্গে নামাজ পড়ার তাওফিক দান করুন। রুকু-সেজদা যথাযথভাবে আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।