ধর্ম ডেস্ক
২২ এপ্রিল ২০২২, ০৯:৫০ পিএম
ইসলামে শপথ করা জায়েজ। তবে কথায় কথায় শপথ করা মাকরুহ। আবার শপথ ভঙ্গ করাও ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। এখন কেউ যদি কবিরা গুনাহে জড়াবে না বলে আল্লাহর নামে কসম করেন, পরে সেই কসম ভঙ্গ করেন, তাহলে তাকে কাফফারা আদায় করতে হবে। আবার তিনি কবিরাগুনাহ থেকে তওবা করে নেবেন।
কাফফারা আদায় করা তার ওপর ওয়াজিব। কসমের কাফফারা তিনভাবে দেওয়ার বিধান। ১) দশজন মিসকিনকে কাপড় দেওয়া। ২) ১০ জন মিসকিনকে দুবেলা খাওয়ানো। এর কোনোটাই না পারলে ৩) টানা তিন দিন রোজা রাখা। (সূত্র: ফতোয়ায়ে হিন্দিয়া: ২/৫৩)
কবিরা গুনাহ করা এবং কসম ভঙ্গ করা এখানে দুটিই বড় গুনাহ। উপরোক্ত আলোচনাটি কসমের ক্ষতিপূরণ নিয়ে। কিন্তু বান্দা কবিরা গুনাহে জড়ালে তার ব্যাপারে ইসলামি বিধান হলো, তাকে তওবা করতে হবে, আবার গুনাহের কথা কাউকে প্রকাশ করা যাবে না।
আল্লাহ তাআলা বান্দাদের ওপর তওবা করা অপরিহার্য করে দিয়ে বলেছেন, ‘হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা করো। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পারো’ (সুরা নূর: ৩১)। গুনাহের কথা প্রকাশ না করার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে সুরা নিসার ১৪৮ নং আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আল্লাহ কোনো মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না।’ আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, ‘আমার উম্মতের সবাইকে ক্ষমা করে দেওয়া হবে; তবে ওই সব লোককে ক্ষমা করা হবে না, যারা পাপ করার পর তা অন্যের কাছে প্রকাশ করে দেয়। অন্যের কাছে প্রকাশ করার একটি দিক হলো কোনো ব্যক্তি রাতের আঁধারে কোনো গুনাহ করল এবং মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির গুনাহটিকে গোপন রাখলেন। কিন্তু ভোর হলে সে নিজেই অন্য মানুষের কাছে বলল, হে অমুক! জানো, রাতে আমি এ কাজ করেছি। সারা রাত মহান আল্লাহ ওই ব্যক্তির পাপটি গোপন রাখলেন, আর ভোর হওয়া মাত্রই আল্লাহর ঢেকে রাখা পাপের বিষয়টি সে ব্যক্তি নিজেই প্রকাশ করে দিল।’ (বুখারি: ৬০৬৯)
মনে রাখা জরুরি, শপথ ভঙ্গ করা প্রতারণার শামিল। রাসুল (স.) বলেন, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমার দলভুক্ত নয়’ (মুসলিম: ১০২)। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘...বস্তত তারা নিজেদেরই নিজেরা প্রতারিত করছে, অথচ তারা তা বুঝে না।’ (সুরা বাকারা: ৯) তাই কথায় কথায় কসম করা ও সেই কসম বারবার ভেঙে ফেলা চরম অন্যায়। তবে, বারবার গুনাহ বা অন্যায় হয়ে গেলেও আল্লাহর কাছেই তওবা করতে হবে। কারণ, তিনি ছাড়া ক্ষমা করার কেউ নেই। দয়াবান আল্লাহ বলেন—
‘আর যারা কোনো অশ্লীল কাজ করলে অথবা নিজেদের প্রতি জুলুম করলে আল্লাহকে স্মরণ করে, অতঃপর গুনাহের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর আল্লাহ ছাড়া কে আছে গুনাহ ক্ষমা করবে? আর তারা যা করেছে, জেনে শুনে তারা তার পুনরাবৃত্তি করে না।’ (সুরা ইমরান: ১৩৫) আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কথায় কথায় কসম করা থেকে জবানকে হেফাজত করুন।কবিরা গুনাহ থেকে হেফাজত করুন। বড় কোনো গুনাহ হয়ে গেলে সাথেসাথে তওবা করার তাওফিক দান করুন। আমিন।