০২ অক্টোবর ২০২৩, ১১:৩৪ এএম
কেয়ামতের কঠিন দিনে আল্লাহ তাআলার কাছে একটু সুপারিশ করার জন্য নবীদের দ্বারে দ্বারে মানুষ দৌড়াদৌড়ি করবে। সেদিন মহানবী (স.) ছাড়া কারও সাহস হবে না আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করার। নবীজিই প্রথম আল্লাহর কাছে সুপারিশ করার অনুমতি আনবেন। হাদিসে এসেছে, ‘আমিই হবো সর্বপ্রথম সুপারিশকারী এবং সবার আগে আমার সুপারিশ কবুল করা হবে।’ (ইবনে মাজাহ: ৪৩০৮)
আল্লাহ তাআলা বলবেন, হে আমার প্রিয়নবী, আমার নিরপরাধ বান্দাদের বেহেশতের ডানদিকের দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। অন্য দরজা দিয়েও ইচ্ছা করলে প্রবেশ করাতে পারেন। (বুখারি: ৪৭১২)
প্রিয়নবী (স.)-এর সুপারিশ পেতে হলে শরিয়ত নির্ধারিত বিধি-বিধান পালনের বিকল্প নেই। এরপরও বিশেষ কিছু আমলের কারণে নবীজির সুপারিশ লাভ হবে বলে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। নিচে সেগুলো তুলে ধরা হলো—
১. একনিষ্ঠচিত্তে আল্লাহর একত্ববাদের স্বীকারোক্তি প্রদান
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, একবার আল্লাহর রাসুল (স.)-কে প্রশ্ন করা হলো, হে আল্লাহর রাসুল! কেয়ামতের দিন আপনার সুপারিশ লাভের ব্যাপারে কে সবচেয়ে বেশি সৌভাগ্যবান হবে? আল্লাহর রাসুল (স.) বলেন, ‘আবু হুরায়রা! আমি মনে করেছিলাম, এ বিষয়ে তোমার আগে আমাকে আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না। কেননা, আমি দেখেছি হাদিসের প্রতি তোমার বিশেষ আকর্ষণ রয়েছে। কেয়ামতের দিন আমার সুপারিশ লাভে সবচেয়ে সৌভাগ্যবান হবে সেই ব্যক্তি যে একনিষ্ঠ চিত্তে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে আল্লাহ তাআলার একত্ববাদের স্বীকারোক্তি দেবে।’ (সহিহ বুখারি: ৯৯)
২. আজান শেষে বিশেষ দোয়া পাঠ
মহানবী (স.)-এর সুপারিশ লাভের গুরুত্বপূর্ণ আরেকটি আমল হচ্ছে, আজান শেষে হাদিসে বর্ণিত দোয়া পাঠ করা। সাহাবি জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আজান শুনে এই দোয়া করে- ﺍﻟﻠَّﻬُﻢَّ ﺭَﺏَّ ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺪَّﻋْﻮَﺓِ ﺍﻟﺘَّﺎﻣَّﺔِ، ﻭَﺍﻟﺼَّﻼَﺓِ ﺍﻟْﻘَﺎﺋِﻤَﺔِ، ﺁﺕِ ﻣُﺤَﻤَّﺪﺍً ﺍﻟْﻮَﺳِﻴﻠَﺔَ ﻭَﺍﻟْﻔَﻀِﻴﻠَﺔَ، ﻭَﺍﺑْﻌَﺜْﻪُ ﻣَﻘَﺎﻣَﺎً ﻣَﺤﻤُﻮﺩﺍً ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻭَﻋَﺪْﺗَﻪ ‘আল্লাহুম্মা রব্বা হাজিহিদ দাওয়াতিত তাম্মাহ, ওয়াস সালাতিল ক্বা-ইমাহ, আ-তি মুহাম্মাদানিল ওয়াসিলাতা ওয়াল ফাজিলাহ, ওয়াবআছহু মাক্বামাম মাহমুদানিল্লাজি ওয়াআদতাহ’ কেয়ামতের দিন সে আমার সুপারিশ লাভের অধিকারী হবে।’ (সহিহ বুখারি: ৬১৪)
আরও পড়ুন: পরকালে ১০ শ্রেণির মানুষের ভয়-চিন্তা নেই
৩. বেশি বেশি নফল নামাজ পড়া
হাদিসে নফল নামাজিরা রাসুলুল্লাহ (স.)-এর সুপারিশ করবেন বলে ইরশাদ হয়েছে। মুসনাদে আহমদের এক বর্ণনায় এসেছে, একবার রাসুলুল্লাহ (স.) খাদেমকে বললেন, আমার কাছে কি তোমার কোনো প্রত্যাশা আছে? (বর্ণনাকারী) বলেন, একদিন ওই খাদেম এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমার একটিমাত্র প্রত্যাশা, প্রিয়নবী (স.) বললেন, ‘কী সেই প্রত্যাশা? তিনি বললেন, কেয়ামতের দিন আপনি আমার জন্য সুপারিশ করবেন! তখন নবীজি (স.) বললেন, কে তোমাকে এ বিষয়টি শিখিয়ে দিয়েছে? জবাবে তিনি বললেন, আমার প্রভু! এরপর নবীজি (স.) বললেন, যখন তুমি এমনই আশা করছ, তবে তুমি আমাকে বেশি নফল নামাজের মাধ্যমে সহযোগিতা করবে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১৬১২০)
আরও পড়ুন: প্রিয়নবীর পছন্দের ১৫ খাবার
৪. মদিনার অধিবাসী হওয়া
হাদিসে এসেছে, মদিনাবাসিরা হাশরের দিন নবীজির সুপারিশ লাভে ধন্য হবেন। আবু সাঈদ মাওলা আল মাহরি (রহ) থেকে বর্ণিত, তিনি গরমকালের রাতগুলোতে আবু সাঈদ খুদরি (রা.)-এর কাছে এলেন এবং মদিনা থেকে কোথাও চলে যাওয়ার পরামর্শ করলেন। তিনি তার কাছে এখানকার দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও নিজের বৃহৎ পরিবারের অভিযোগ করলেন। তিনি তাঁকে আরো জানালেন যে, তিনি এখানকার ক্লেশ ও বৈরী আবহাওয়া সহ্য করতে পারছেন না। আবু সাঈদ খুদরি (রা.) তাকে বললেন, ‘তোমার জন্য দুঃখ হয়, আমি তোমাকে মদিনা ত্যাগের পরামর্শ দিতে পারি না। কারণ আমি রাসুলুল্লাহ (স.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এখানকার কষ্ট সহ্য করে মৃত্যুবরণ করবে, কেয়ামতের দিন অবশ্যই আমি তার জন্য সুপারিশ করব অথবা সাক্ষী হবো, যদি সে মুসলিম হয়ে থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ৩২৩০)
উল্লেখিত আমলগুলো আসলে মূল আমলের বর্ধিত আমল। অর্থাৎ শরিয়তের বিধান লঙ্ঘন করে বা কোরআনের বিরোধিতা করে এসব আমল কোনো কাজে আসবে না। অবশ্যই আমাদের মূল ঠিক রেখে সহায়ক হিসেবে এসব আমলের মাধ্যমে নবীজি (স.)-এর সুপারিশ লাভের আশা করতে হবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে শরিয়তের বিধি-বিধান পালনসহ উল্লেখিত আমলগুলোর প্রতি যত্নশীল হওয়ার এবং এসব আমলের মাধ্যমে প্রিয়নবী (স.)-এর সুপারিশ লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন।