images

ইসলাম

গুনাহ যেভাবে সওয়াবে পরিণত হয়

ধর্ম ডেস্ক

০১ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১০:২৫ এএম

আল্লাহ তাআলা পরম ক্ষমাশীল। আন্তরিক তওবা করলে তিনি সকল গুনাহ ক্ষমা করে দেন। বান্দার পাপের বোঝা অতিরিক্ত হয়ে গেলে এমনকি আকাশ-জমিন ছেয়ে গেলেও হতাশ হওয়ার কিছু নেই।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি— মহান আল্লাহ বলেন, হে আদম সন্তান! তুমি যত দিন পর্যন্ত আমার কাছে দোয়া করতে থাকবে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাকবে, আমি তত দিন তোমার গুনাহ মাফ করতে থাকব, তুমি যা-ই করে থাকো আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ যদি আকাশের উচ্চতা পর্যন্তও পৌঁছে যায়, অতঃপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও, তবুও আমি তোমাকে ক্ষমা করব, আমি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ করব না। হে আদম সন্তান! তুমি যদি পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়ে আমার কাছে আসো এবং আমার সঙ্গে কোনো কিছুকে শরিক না করে থাকো, তাহলে আমিও সমপরিমাণ ক্ষমা নিয়ে তোমার কাছে আসব। ’ (তিরমিজি: ৩৫৪০)

আল্লাহ বলেন, ‘আর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাও, নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাকারী ও অতিশয় দয়ালু। ’ (সুরা নিসা: ১০৬) অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, ‘আমার বান্দাদের জানিয়ে দিন, আমি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ’ (সুরা হিজর: ৪৯)

এমনকি কখনও কখনও আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহগুলোকে সওয়াবে পরিণত করে দেন। আল্লাহ তাআলা বলেন—

এর একটা অর্থ এই যে, মহান আল্লাহ তার অবস্থার পরিবর্তন ঘটান। ইসলাম গ্রহণের আগে সে পাপাচার করত, এখন সে সৎকর্ম করে, আগে শিরক করত, এখন শুধুমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করে। আগে কাফেরদের সঙ্গে মিলিত হয়ে মুসলিমদের বিরুদ্ধে লড়ত। আর এখন সে মুসলিমদের দলভূক্ত হয়ে কাফেরদের বিরুদ্ধে লড়াই করে ইত্যাদি। এর অন্য একটি অর্থ— তার পাপগুলো নেকি দিয়ে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।। এর প্রমাণ হাদিসেও পাওয়া যায়।

রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘‘আমি ওই ব্যক্তিকে জানি, যে সর্বশেষে জান্নাতে প্রবেশ করবে ও সর্বশেষ জাহান্নাম হতে বের হবে। সে হবে ওই ব্যক্তি কিয়ামত দিবসে যার ছোট ছোট পাপগুলো তুলে ধরা হবে আর বড় পাপগুলো একদিকে রেখে দেওয়া হবে। তাকে বলা হবে, ‘তুমি অমুক অমুক দিনে এই এই পাপ করেছিলে?’ সে স্বীকৃতিসূচক জবাব দেবে এবং অস্বীকার করার কোনো ক্ষমতা তার থাকবে না। তাছাড়া সে এই ব্যাপারেও ভয় পাবে যে, এক্ষুণি তার বড় বড় পাপগুলো তুলে ধরা হবে। তখন বলা হবে, ‘যাও! তোমার প্রত্যেক পাপের বদলে এক একটি নেকি।’ আল্লাহর এই দয়া দেখে সে বলবে, ‘এখনও তো আমি আমার অনেক আমল দেখছি না।’’ এই কথা বলে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) হেসে ফেললেন, এমনকি তার দাঁত দেখা গেল। (সহিহ মুসলিম, ঈমান অধ্যায়)

তওবা করলে আল্লাহ তাআলা খুব খুশি হন। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তওবায় আল্লাহতায়ালা এতই খুশি হন যে, যেমন তোমাদের কেউ গরম মরুভূমিতে উটকে গাছের ডালে বেঁধে ঘুমিয়ে পড়ল। সে উটের সঙ্গে খাদ্য-পানীয়সহ সব আসবাব ছিল। ঘুম থেকে জেগে দেখল তার উটটি আগের স্থানে নেই। এদিক ওদিক খুঁজে কোথাও পাওয়া গেল না। যখন সে একেবারে নিরাশ হয়ে গেল। তখনই দেখল তার উটটি যথাস্থানে রয়েছে। এমন মুহূর্তে সে ব্যক্তি যতটুকু খুশি হবে, কোনো বান্দা তওবা করলে আল্লাহতায়ালা তারচেয়ে বেশি খুশি হন।’ (মুসলিম)।

তাওবা জান্নাতের সোপান। তাওবার মাধ্যমে মানুষ যাবতীয় গুনাহ থেকে আল্লাহর কাছে ফিরে আসে। হাদিসে তাওবার অসংখ্য ফজিলত বর্ণনা করা হয়েছে। যাতে মানুষ আল্লাহর বিধান থেকে গাফেল না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।’ (সুরা নুর: আয়াত ৩১)

অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা আল্লাহর কাছে আন্তরিকভাবে তাওবা কর।’ এভাবে অনেক আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দাকে তাঁর কাছে তাওবার নির্দেশ দিয়েছেন। তাওবার প্রতি গুরুত্বারোপ করে প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘হে মানবমণ্ডলী! তোমরা আল্লাহর কাছে তাওবা কর। কেননা আমি প্রতিদিন একশত বার তাওবা করি।’ (মুসলিম)

সুতরাং গুনাহ সংঘটিত হোক বা না হোক কুরআন ও সুন্নাহর বিধান পালনে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা লাভে কোরআন-সুন্নাহর নির্দেশমতো প্রতিদিন তাওবা করা বান্দার জরুরি। 

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে আন্তরিক তওবার মাধ্যমে কুরআন-সুন্নায় ঘোষিত উপকারিতা লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।

এমএ/